আইপিটিভি জয়যাত্রার কার্যালয় থেকে স্যাটেলাইট সরঞ্জাম জব্দ,তিন দিনের রিমান্ড

0
816
আইপিটিভি জয়যাত্রার কার্যালয় থেকে স্যাটেলাইট সরঞ্জাম জব্দ,তিন দিনের রিমান্ড

“কথিত এ টিভিতে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগের নামে সারাদেশের বেশ কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে কী পরিমাণ অর্থ-বাণিজ্য করা হয়েছে- সেটারও অনুসন্ধান চলছে”

হেলেনা জাহাঙ্গীর,ছবি সংগৃহীত

নুরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন আইপিটিভি জয়যাত্রার কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এসব সরঞ্জামের কোনোটিরই বিটিআরসির অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং টেলিযোগাযোগ আইনে মামলাগুলো দায়ের করা হবে।

শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। পরে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আনা হয়৷পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷

শুক্রবার (৩০ জুলাই  ২০২১) দুপুরে র‍্যাব সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

তিনি বলেন, ‘জয়যাত্রা টিভির কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র নেই। স্যাটেলাইটে ব্যবহারের মতো অনেক সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে জয়যাত্রার মিরপুরের অফিস থেকে। বিটিআরসির সহযোগিতায় এসব মালামাল জব্দ করা হচ্ছে এবং টেলিযোগাযোগ আইনে কী মামলা করা যায় সেটাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে (২৯ জুলাই ২০২১) রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এসময়ে বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করে র‌্যাব।

আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‍্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে বারবার দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নারী বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন। সম্প্রতি ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসে। সেই কারণেই আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
গত রোববার আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয় গণমাধ্যমে।

জানা যায়, দলের পদ হারানোর পরও হেলেনা জাহাঙ্গীরের দম্ভ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেমে ছিল না। বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশো, ফেসবুক লাইভ এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত আইপি টেলিভিশন ‘জয়যাত্রার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের বিরুদ্ধে অনেকটা প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি উল্টাপাল্টা কথাবার্তা, কান্নাকাটির অভিনয়সহ নানা নাটকীয় আচরণ করে আসছিলেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করে আসছিলেন তিনি। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে এড়িয়ে চলছেন, এমন অভিযোগও তোলেন তিনি। এক্ষেত্রে ফেসবুক কমেন্টে হাজার হাজার ব্যক্তি তার এমন অদ্ভূত আচরণকে ‘মানসিক অসুস্থতা’ আখ্যা দিয়ে নানা ধরনের কটূক্তি এবং তার বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ আনলেও মোটেই পাত্তা দেননি তিনি। বৃহস্পতিবার র‌্যাবের হাতে আটকের পরও তার হাত নাড়ানো ও হাস্যোজ্জ্বল থাকাকেও ‘পাগলামি’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

অবশ্য এর আগে থেকেই হেলেনা জাহাঙ্গীরের ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো মন্ত্রীকেও গুনি না’ এমন একটি বিতর্কিত বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাসছিল। এছাড়া ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ এর পোস্টার প্রকাশের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের পুরনো দুটি ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল বলেও শোনা যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর হঠাৎ-ই আওয়ামী লীগার বনে যান তিনি। যদিও এরশাদ-খালেদা জিয়ার সঙ্গে তোলা ছবি প্রকাশের পর হেলেনা জাহাঙ্গীর এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া ও অন্যান্যদের সঙ্গে আমার যে ছবিগুলো ভাইরাল হচ্ছে, সেগুলো একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তোলা এবং ছবিগুলা আমি নিজেই ফেসবুকে দিয়েছিলাম।’

এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বাইরেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের তোলা ছবি প্রায়ই ফেসবুকে দেখা গেছে, যেগুলো তিনি নিজেই পোস্ট করে ‘রাজনৈতিক সুবিধা’ নেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর নিজেকে ‘সিস্টার হেলেনা’ পরিচয় দিয়ে অসহায় মানুষকে কথিত মানবিক সাহায্য-সহযোগিতার প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচিত ও বিতর্কিত সেফায়েতুল্লাহ সেফু ওরফে সেফুদার সঙ্গেও তার কথোপকথনের একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ জুলাই ২০২১) র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নানা প্রতারণা ও অপরাধের পাশাপাশি তার মালিকানাধীন জয়যাত্রা টেলিভিশন ও বিভিন্ন মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটিয়ে আসছিলেন। র‌্যাবের অভিযানকালে জয়যাত্রা টেলিভিশনের সরকারি অনুমোদনের কোনো প্রমাণ মেলেনি। আর কথিত এ টিভিতে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগের নামে সারাদেশের বেশ কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে কী পরিমাণ অর্থ-বাণিজ্য করা হয়েছে- সেটারও অনুসন্ধান চলছে। জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।