আইন লঙ্ঘনের কারণে, আইন সংগতভাবে গ্রেপ্তার আদিল: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

    0
    574

    ঢাকা, ১২ আগস্ট : আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারণে আইনসংগতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দীন আহমেদের স্বাক্ষরিত প্রেসনোটে বলা হয়, ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন/২০০৬-এ বর্ণিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য না হলেও অজামিনযোগ্য এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারযোগ্য। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন/২০০৬-এর ৫৭ (১) ও (২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (জিডি নং-৫১৪, তারিখ: ১০/০৮/২০১৩) দায়েরের পরই তাঁকে তার গুলশানের বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারণে তাঁকে আইনসংগতভাবে গ্রেপ্তারপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

    প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে, অধিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (http://www.odhikar.org/about.html  ) বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ২৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির নির্বাহী হিসেবে সামগ্রিক কার্যাবলি পরিচালনা করে আসছেন আদিলুর রহমান খান। তাঁর নির্দেশনায় ওই প্রতিবেদনে শুধু রাতের অভিযানে হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেদনে দিনব্যাপী হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও হত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়। দিনের বেলায় নিহত কয়েকটি মৃতদহ ও আহত কয়েকজনের ছবি কম্পিউটারে ফটোশপের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে রাতের অভিযানে তারা নিহত হয়েছে বলে প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, আদিলুর রহমান খান ওই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছেন। ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

    প্রেসনোটে বলা হয়েছে ‘হেফাজতকর্মীরা বিভিন্ন রাস্তার বিদ্যুতের খাম্বা উপড়ে ফেলায় সন্ধ্যার পর শাপলা চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে শাপলা চত্বরের আশপাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন লক্ষ্য করে হেফাজতকর্মীরা হামলা চালাতে থাকে। তাদের এ হিংসাত্মক হামলা থেকে বিরত থাকতে এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে সরে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সরে না গিয়ে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা ধ্বংসাত্মক হামলা থেকে রক্ষায় মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত দুইটার দিকে মাইকে তাদের ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালাতে থাকে, মঞ্চের মাইক থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ তাদের স্থান ত্যাগের জন্য শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সতর্ক করে। কিন্তু এতে তারা কর্ণপাত করেনি। ফলে পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী নন-লেথাল উইপন (Non Lethal Weapon) হিসেবে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এতে ১০ মিনিটের মধ্যেই তারা সবাই স্থান ত্যাগ করে। তবে তাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংগঠিত হয়ে অলিগলির ভেতর থেকে কিছুক্ষণ হামলা চালায়। একপর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারাও পালিয়ে যায়।’

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান পরিচালনার সময় বিপুলসংখ্যক ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ দেশি-বিদেশি সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া পুরো অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করেছে। রাতের অভিযানে কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার কারণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে, দিনের বেলায় হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সহযোগী উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের আক্রমণ ও পুলিশের প্রতিরোধের কারণে মোট ১১ জন ব্যক্তি নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অধিকার ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে একটি কাল্পনিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এ ধরনের মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য ইন্টারনেটে বিশেষ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়ায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন/২০০৬-এর ৫৭(১)(২) ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ অভিযোগের পক্ষে ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনটি দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা।

     

    অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের রিমান্ড আদেশ স্থগিত

    ঢাকা, ১২ আগস্ট : মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের রিমান্ড আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। তবে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তাঁকে অবিলম্বে কারাগারে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কাশিফা হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।

    আদিলুর রহমান খানকে গত শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক অমিত কুমার দে তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

    ওই রিমান্ড আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক। আজ তাঁর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান শুনানি নিয়ে আদালত রুলও জারি করেন। ওই রিমান্ড আদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

    সূত্র জানায়, গত ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা অধিকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এরপর ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় অধিকারের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ও ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে পাঠায়।

    আদিলুর রহমান চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন।

    মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এতে মানবাধিকারের কর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করা ও নিরাপত্তাবোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

    বেসরকারি সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আদিলুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ।

    তথ্যপ্রযুক্তি আইন : তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্য হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে অপরাধ। কোনো ব্যক্তি এর অধীন অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে অথবা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’