আইএলও-বিশ্বব্যাংকের তাগিদে শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদে উঠতে যাচ্ছে

    0
    219
    আইএলও-বিশ্বব্যাংকের তাগিদে শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদে উঠতে যাচ্ছে
    আইএলও-বিশ্বব্যাংকের তাগিদে শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদে উঠতে যাচ্ছে

    ঢাকা, ১৮ মে : বাংলাদেশের বর্তমান শ্রম আইন ফের নতুন করে পরীক্ষা নিরিক্ষা ও শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের উন্নয়নের জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক। এইসব শর্ত পূরণ না হলে সংস্থা দুটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল কারখানাগুলো যৌথ মনিটরিং প্রোগামে যোগ দেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। আইএলও-বিশ্বব্যাংকের তাগিদে
    সাভারে রানা প্লাজা ধস ও শ্রমিকের ব্যাপক প্রাণহানি থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি। এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে এই প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। পরে সাংবাদিক সম্মেলনেও একই কথা বলেন জন কেরি।
    গত কয়েক মাসে একাধিক গার্মেন্ট কারখানায় দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক পোশাক শ্রমিক প্রাণ হারানোর ঘটনার জেরে শুক্রবার সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা তাদের এই অবস্থান ব্যক্ত করলো। সংস্থা দুটি গ্লোবাল বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বব্যাপী কাজের পরিবেশ নিশ্চিতে এক সঙ্গে কাজ করে আসছে।
    এ জন্য শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এফ. কেরির সঙ্গেও দেখা করেছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কাজের মান উন্নয়নে আন্তরিক ও গুরুত্ব দিয়েছে বলেও তারা জন কেরিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বলে জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট।
    পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে গত মাসে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ব্যাপক হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে কেরি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এই কর্পোরেট ইস্যুতে শ্রম ও শ্রমিকদের শ্রমমান নিশ্চিতে উভয় দেশ পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
    বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা তদারকি ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসন বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইউএসটিআর বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি সুবিধা যেমন- কমমূল্যে আমদানি বা খুচরা বিক্রয়  সঙ্কুচিত করার কথা বলেও চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। 
    বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কাজের পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা পরিদর্শনের জন্য গঠিত ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর জোটের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য ক্যাপিটো হিলের আইন প্রণেতারা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও বিনিয়োগ গ্রুপ মার্কিন রিটেইলারগুলোকে চাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পোশাক আমদানিকারক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে পোশাক কারখানা তদারকিতে যৌথ কর্মসূচি পরিচালনার বিষয়ে যে চুক্তি করে তাতে ওয়ালমার্টের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
    এছাড়া গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যেখানে পোশাকের প্রস্তুতের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সেখানে কাপড়ের খুচরা মূল্য পরীক্ষা করে দেখার কথাও বলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন দেশের অ্যাডভোকেসি গ্রুপও বড় পশ্চিমা পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারখানার নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে আরো কাজ করতে চাপ দিচ্ছে। 
    অবশ্য এ বিষয়ে ১২০টি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ইন্টারফেইথ সেন্টার অন কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি বৃহস্পতিবার এ চিঠিতে জানায়, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা তাদের ব্যবসায়িক সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন।
    এর আগে গত বছর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএলও এর বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামে যোগ দেয়ার আগ্রহ দেখানো হয়। যার মধ্যে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রায়ই আগে উল্লেখ না করে কারখানাগুলো পরিদর্শন এবং কারখানাগুলোর মালিক ও পরিচালকদের মধ্যে কারিগরী সহায়তাগুলো রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তখন আইএলও কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দেশের শ্রম আইন খুব দুর্বল এবং সার্বিক অবস্থা শ্রমিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রায়ই বিশ্বাসঘাতকতা করে। তাই তারা এই প্রোগামে বাংলাদেশকে অন্তর্ভূক্ত করার আগে এই খাতে বড় পরিবর্তন ঘটানোর দাবি জানায়।
    এ বিষয়ে আইএলও এর বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামের প্রধান ড্যান রিস বলেন, প্রোগামের এই সব শর্ত ঠিক মতো না উপলব্ধি করে এতে অন্তর্ভূক্ত হলে তাতে ব্যর্থ হওয়ার অনাকাঙ্খিত ঝুঁকি থেকে যায়।
    এর জন্য আগামী জুনের আগেই বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়টি সংসদে উঠতে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে।