হাওর অঞ্চলে দুই হাজার ৫৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট

    0
    338
    “সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ যে হাওরাঞ্চলে  ফসল নষ্ট হয়েছে তাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি, ফসল হারিয়ে কৃষকের আত্মহত্যার চেষ্টা, যমুনার ভাঙনে দেড়শ বাড়ি বিলীন”

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১২এপ্রিল,ডেস্ক নিউজঃ   হাওর অঞ্চলে সম্প্রতি বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় দুই হাজার ৫৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। নাগরিক সংহতি, অক্সফাম ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

    এদিকে গত কয়েকদিনে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ৩ গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে বগুড়ার চরাঞ্চলের ৭০০ হেক্টর জমির কালো বোরো ধান। নেত্রকোনার মদনে ফসলের ক্ষতি সইতে না পেরে বিষপানে এক কৃষক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

    রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাওর অঞ্চলে ফসলডুবির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দায়ী। হাওরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সঠিক সময়ে এবং টেকসই কায়দায় ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরি এবং মেরামত না করা। এ কাজটি না করায় ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আটবার হাওরের কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। অথচ এই এক ফসলি বোরো ধানের ওপর তারা নির্ভরশীল।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এবারের বাঁধ বিপর্যয়ে সুনামগঞ্জ জেলার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর আবাদকৃত জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর।

    এ ছাড়া নেত্রকোনার মাত্র একটি বাঁধ টিকে আছে, বাকি সব বাঁধ ভেঙে গেছে। বক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা, পরবর্তী ফসল না ওঠা পর্যন্ত স্বল্প দামে সহায়তা কর্মসূচি চালু এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি রোধে একটি কার্যকর কাঠামো গড়ে তোলার দাবি জানান। মানববন্ধনে আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার বিপুল সংখ্যক হাওরবাসী উপস্থিত ছিলেন।

    সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্যা মৌসুম শুরু না হতেই জেলায় রাক্ষসী যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি সামান্য বৃদ্ধির ফলে সদর উপজেলার বাহুকা ও কাজীপুর উপজেলার শুভগাছা পয়েন্টে প্রচণ্ড সে াত ও ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়ে নদীর পাড় ধসে পড়ছে। স্থানীয় ৩ গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও শতাধিক বিঘা ফসলি জমি যমুনায় বিলীন হয়েছে। বাহুকা পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরেছে, যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, ভাঙন রোধে জরুরি বরাদ্দের জন্য ঢাকায় ই-মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে।

    বগুড়া অফিস জানায়, জেলার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলের ৭০০ হেক্টর জমির কালো বোরো ধান যমুনার পানিতে তলিয়ে গেছে। শেষ চেষ্টা হিসেবে অনেকেই ক্ষেতের আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে চরাঞ্চলের সিংহভাগ জমিতেই ধানে এখনো পাক ধরেনি। অবশ্য সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তা শাহাদুজ্জামান দাবি করেন, সামান্য কিছু জমি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এতে আপাতত কৃষকদের আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই।

    মদন (নেত্রকোনা) সংবাদদাতা জানান, আগাম বন্যায় নিজের ১০ একর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সইতে না পেরে শম্ভু বিশ্বাস (৪২) নামের এক কৃষক বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের পদমশ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত মদন হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

    সিলেট অফিস জানায়, ফসলডুবিতে সুনামগঞ্জ জেলার ২০ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় রবিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন, পাউবোর ঠিকাদার ও পিআইসিদের গাফিলতির কারণে জেলার কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিও এজন্য দায়ী। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন।

    এ দিকে সমগ্র হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে হাওর উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সোমবার সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর তীব্র খাদ্য সংকট। বাধ্য হয়ে অর্ধেক দামে নিজেদের গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা।

    সিলেটস্থ বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মামনুর রশীদ ইত্তেফাককে বলেন, কৃষকদের বাঁচাতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। একই সঙ্গে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উঁচু জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষেরও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

    ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামতে গাফিলতির অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্য ও ঠিকাদারদের বিচার এবং ধর্মপাশাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবিতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

    নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে জেলার ৪৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো খেত নিমজ্জিত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতি হয়েছে  ৬০০ কোটি টাকা। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, জেলায় ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশ হাওর ক্ষেতমজুর আন্দোলন সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক নলিনী কান্ত সরকার হাওর জেলাগুলোকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে হবে এবং হাওর এলাকার নদীগুলো জরুরি ভিত্তিতে খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এলাকায় কর্মসৃজন কার্যক্রম চালুর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

    কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, গত সপ্তাহে টানা ভারী বর্ষণের ফলে চায়ের টিলায় ভূমিধস, বৃষ্টির পানির সাথে চা প্লান্টেশন এলাকায় মাটির উর্বরতা বিনষ্ট, ঠান্ডায় চা গাছে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চা বাগানের একজন ব্যবস্থাপক জানান, বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক স্থানে ভূমি ধসে টিলার মাটির সাথে চা গাছগুলোও পড়ে গেছে। তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টির পানিতে প্লান্টেশন এলাকার উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) ভেসে  গেছে।

    শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, চলতি সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাতে মৌলভীবাজার জেলার ৯০টি চা বাগানের অনেকগুলোতেই ভূমি ধস হয়েছে। এটা চা শিল্পের ক্ষতির একটি কারণ।হাওর অঞ্চলে সম্প্রতি বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় দুই হাজার ৫৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। নাগরিক সংহতি, অক্সফাম ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

    এদিকে গত কয়েকদিনে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ৩ গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে বগুড়ার চরাঞ্চলের ৭০০ হেক্টর জমির কালো বোরো ধান। নেত্রকোনার মদনে ফসলের ক্ষতি সইতে না পেরে বিষপানে এক কৃষক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

    রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাওর অঞ্চলে ফসলডুবির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দায়ী। হাওরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সঠিক সময়ে এবং টেকসই কায়দায় ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরি এবং মেরামত না করা। এ কাজটি না করায় ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আটবার হাওরের কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। অথচ এই এক ফসলি বোরো ধানের ওপর তারা নির্ভরশীল।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এবারের বাঁধ বিপর্যয়ে সুনামগঞ্জ জেলার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর আবাদকৃত জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর। এ ছাড়া নেত্রকোনার মাত্র একটি বাঁধ টিকে আছে, বাকি সব বাঁধ ভেঙে গেছে। বক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা, পরবর্তী ফসল না ওঠা পর্যন্ত স্বল্প দামে সহায়তা কর্মসূচি চালু এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি রোধে একটি কার্যকর কাঠামো গড়ে তোলার দাবি জানান। মানববন্ধনে আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার বিপুল সংখ্যক হাওরবাসী উপস্থিত ছিলেন।

    সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্যা মৌসুম শুরু না হতেই জেলায় রাক্ষসী যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি সামান্য বৃদ্ধির ফলে সদর উপজেলার বাহুকা ও কাজীপুর উপজেলার শুভগাছা পয়েন্টে প্রচণ্ড সে াত ও ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়ে নদীর পাড় ধসে পড়ছে। স্থানীয় ৩ গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও শতাধিক বিঘা ফসলি জমি যমুনায় বিলীন হয়েছে। বাহুকা পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরেছে, যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, ভাঙন রোধে জরুরি বরাদ্দের জন্য ঢাকায় ই-মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে।

    বগুড়া অফিস জানায়, জেলার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলের ৭০০ হেক্টর জমির কালো বোরো ধান যমুনার পানিতে তলিয়ে গেছে। শেষ চেষ্টা হিসেবে অনেকেই ক্ষেতের আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে চরাঞ্চলের সিংহভাগ জমিতেই ধানে এখনো পাক ধরেনি। অবশ্য সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তা শাহাদুজ্জামান দাবি করেন, সামান্য কিছু জমি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এতে আপাতত কৃষকদের আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই।

    মদন (নেত্রকোনা) সংবাদদাতা জানান, আগাম বন্যায় নিজের ১০ একর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সইতে না পেরে শম্ভু বিশ্বাস (৪২) নামের এক কৃষক বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের পদমশ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত মদন হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

    সিলেট অফিস জানায়, ফসলডুবিতে সুনামগঞ্জ জেলার ২০ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় রবিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন, পাউবোর ঠিকাদার ও পিআইসিদের গাফিলতির কারণে জেলার কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিও এজন্য দায়ী। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন।

    এ দিকে সমগ্র হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে হাওর উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সোমবার সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর তীব্র খাদ্য সংকট। বাধ্য হয়ে অর্ধেক দামে নিজেদের গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা।

    সিলেটস্থ বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মামনুর রশীদ ইত্তেফাককে বলেন, কৃষকদের বাঁচাতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। একই সঙ্গে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উঁচু জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষেরও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

    ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামতে গাফিলতির অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্য ও ঠিকাদারদের বিচার এবং ধর্মপাশাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবিতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

    নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে জেলার ৪৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো খেত নিমজ্জিত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতি হয়েছে  ৬০০ কোটি টাকা। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, জেলায় ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশ হাওর ক্ষেতমজুর আন্দোলন সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক নলিনী কান্ত সরকার হাওর জেলাগুলোকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে হবে এবং হাওর এলাকার নদীগুলো জরুরি ভিত্তিতে খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এলাকায় কর্মসৃজন কার্যক্রম চালুর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।সুত্র ইত্তেফাক