সৌদিতে নির্যাতনের শিকার হবিগঞ্জের তরুণী শিল্পী

0
369
সৌদিতে নির্যাতনের শিকার হবিগঞ্জের তরুণী শিল্পী
সৌদিতে নির্যাতনের শিকার হবিগঞ্জের তরুণী শিল্পী

নূরুজ্জামান ফারুকী, বিশেষ প্রতিনিধি: সৌদি আরবে মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে হবিগঞ্জের এক তরুণী। তাই দেশে ফিরতে ভিডিও কলে তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে কান্নাজড়িত কন্ঠে দেশে ফেরার সেই আকুতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। নির্যাতনে শিকার তরুণী শিল্পী আক্তার (২৫) জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের তৈইগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী কান্না জড়িত কন্ঠে তার মায়ের কাছে বলছে, ‘তুমরার কাছে আমি ভিক্ষা চাই। আমারে দেশে ফিরাইয়া নেও। তিন বছর ধইরা আমারে আটকাইয়া রাখছে। আমারে ধরে-মারে। মালিকে মারে, মালিকের পুলা-পুইরে মারে। আমারে খানি দেয় না, একবার দিলে- আরেকবার দেয় না। ঘরের ভেতরে তালা মাইরা তরাকে। দেশে ফিরাইয়া না নিলে আমারে মাইরালাইব, লাশ কইরা বাংলাদেশে পাঠাইব।’

শিল্পীর মা নূরচাঁন বিবি জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদিআরব যায় তার কন্যা শিল্পী আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাসায় গৃহকর্মীর চাকরি নেয় সে। কিন্তু সেই বাসাটি সৌদি আরবের কোন এলাকায় সেটি নিশ্চিত নন তিনি। সেখানে যাওয়ার পরই তার ওপর চলে নির্যাতন। কাজে ছোটখাট ভুল হলেই মারধরের শিকার হয় শিল্পী। প্রতিনিয়ত তাকে শারীর নির্যাত করেন বাসার মালিক, ছেলে ও মেয়েরা।

প্রথমে মা-বাবা ও অস্বচ্ছল পরিবারের কথা চিন্তা করে সব নির্যাতন নিরবে সহে যান শিল্পী। কথা ছিল দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু দুই বছর অতিক্রম হলেও তাকে দেশে পাঠানো হয়নি। উল্টো ভিসার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। দেশে আসার কথা বললে শিল্পীর উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনে বর্তমানে শিল্পী অসুস্থ্য হয়ে পরেছে। মা বাবার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেয়া হয় না।

নূরচাঁন বিবি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে ফিরে চাই। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে দিচ্ছে না। ট্রাভেলসের লোকেরাও আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ আমার মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনার।’

শিল্পীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সংসারে অভাবের কারণে মেয়েকে সৌদিআরব পাঠিয়েছিলাম। এখন আমার মেয়ে খুব কষ্টে আছে। আমি আমার মেয়েকে ফিরে চাই।’ তিনি বলেন, ঢাকার পুরানাপল্টন এলাকার ‘৪ সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’র মাধ্যমে সৌদিআরব গিয়েছিল শিল্পী।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক খালেদ হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- ‘আমরা মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে এক মাস আগে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে দুতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’