সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ২০১৫ উত্তর লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

    0
    274
    সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ২০১৫ উত্তর লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
    সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ২০১৫ উত্তর লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

    ঢাকা, ০২ জুন : উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ২০১৫ উত্তর লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগিতা (ওডিএ) হ্রাস পাওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর বহু কর্মসূচি কাঙ্খিত অগ্রগতি লাভ করতে পারছে না। তিনি ২০১৫ উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলার ওপর সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রদানের ওপর জোর দেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলা কর্মসূচির পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। আজ রবিবার সকালে রাজধানীতে হোটেল রূপসী বাংলায় ২০১৫ উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডা বিষয়েক জাতীয় সংলাপ উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ এ সংলাপের আয়োজন করে।
    পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও রিও+২০ ড্রাফটিং কমিটির জাতীয় আহ্বায়াক ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম ২০১৫ সালের পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘের আবাসিক কোঅর্ডিনেটর ড. তুশারা ফার্নান্দো স্বাগত বক্তৃতা ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হচ্ছে। তারপর বিশ্ব উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে। ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো কী হবে- এনিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলো আলোচনা করে যাচ্ছে। বিশ্ব আলোচনায় প্রথম সারির একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ বিষয়ে অবদান রাখছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের মূল লক্ষ্যই ছিল স্বাধীন বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক মুক্তি অর্জন করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য তিনি জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে তিনি বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক মুক্তির পথ উন্মুক্ত করেন। দেশ পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু করেন সেই কঠিন যাত্রা। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাঁকে বেশি দূর এগুতে দেয়নি।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধ সামরিক সরকারগুলো ক্ষমতা কুক্ষিগত করাকেই একমাত্র কাজ হিসেবে বেছে নেয়। দেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে যায়। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়। দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত হয়। দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পায়। শিক্ষার হার বাড়ে। অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। গত নির্বাচনের আগে ‘রূপকল্প-২০২১’ জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং ২০০৯ সালে সরকারে এসে সে রূপকল্প অনুযায়ী প্রতিটি খাতের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০-২০২১ মেয়াদে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ২০১১-২০১৫ মেয়াদে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও ব্যাপক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গড়ে সাড়ে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে, খাদ্যে দেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে, গ্রামের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় ৬৩০ ডলার থেকে প্রায় ৯৫০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করা হয়েছে। দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে। লিঙ্গবৈষম্য দূর হয়েছে। নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সমানভাবে অংশ নিচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। শিশুমৃত্যু হার ও মাতৃমৃত্যু হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ সাফল্য অর্জন করায় জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এমডিজি পুরস্কার দিয়েছে। দেশ সাউথ-সাউথ এওয়ার্ড পেয়েছে। যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের পণ্য ও সেবার অবাধ বিশ্ববাজার নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে হবে। পর্যাপ্ত তহবিল যোগান, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ২০১১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন’ মডেল উপস্থাপন করেন। গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব পাশ করে। তিনি আরো বলেন, এ উন্নয়ন মডেলে তিনি ছয়টি পরস্পর ক্রিয়াশীল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন। সেগুলো হচ্ছে- ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য হ্রাসকরণ, বঞ্চনার অবসান ঘটানো, সুবিধাবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্তিকরণ, মানব সম্পদের দ্রুত উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস নির্মূলকরণ। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী উন্নয়ন এজেন্ডায় এই বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।
    প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি কার্যকর জাতীয় রিপোর্ট প্রণীত হবে, যা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ সালে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা, ধনী-গরীব বৈষম্য ঘোচানো এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকার অত্যন্ত তৎপর। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুত সহায়তা না পেলেও নিজস্ব অর্থে ২০২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা এবং এমডিজি অর্জনে সাফল্য বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করেছে। জাতিসংঘ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউএনডিপি এমডিজি অর্জনে সফল ১৮টি অগ্রসরমান দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অর্জন ধরে রাখতে হবে এবং সেটিই হবে আমাদের ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্য। তিনি বলেন, সর্বশেষ ডেমোগ্রাফিকস অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন কর্মক্ষম মানুষের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। যা একটি জাতির জীবনে বড় আশীর্বাদ। এই কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের পণ্য ও সেবার অবাধ বিশ্ববাজার নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে হবে। পর্যাপ্ত তহবিল যোগান, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।