শ্রীমঙ্গলে পাহারাদারের হাতে পাহারাদার খুনের ঘটনায় খুনিকে যেভাবে গ্রেফতার করা হলো

0
144

নিজস্ব প্রতিনিধি আমার সিলেট রিপোর্টঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুছড়া বাগান এলাকায় নিজের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ারত ঘটনায় দেখতে পেয়ে লেবু বাগানে কর্মরত এক পাহারাদারের হাতে অপর পাহারাদার খুনের ঘটনায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুনিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খুন হওয়া ব্যক্তির নাম চম্পা লাল মুন্ডা (৩৭) পিতা মৃত রামজি মুন্ডা।তার গ্রামের বাড়ী কমলগঞ্জের পদ্মছড়া চা বাগানে।কাজের সুবাদে বাগান এলাকায় বসবাস করতেন।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম মৃত চাম্পা লাল মুন্ডা (৩৭), পিতা-মৃত রামজি মুন্ডা, সাং-পদ্মছড়া চা বাগান, থানা-কমলগঞ্জ, জেলা-মৌলভীবাজার প্রায় ২/৩ বছর যাবৎ ডলুছড়ায় জনক দেব বর্মার লেবু বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছেন।
একই লেবু বাগানে বিশ্বনাথ তাঁতী (৪৫) বিগত ২ মাস যাবৎ কাজের সুবাদে লেবু বাগানের ভিতর একটি ঘরে তাহার বাক-প্রতিবন্ধী স্ত্রীসহ বসবাস করে আসতেছে।
ঘটনার দিন ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডা নিয়মিত ভাবে ভোর বেলা বাগানের লেবু ঠেলা গাড়িতে করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গল বাজারে নিয়ে আসার কথা থাকলে ও ১৪/০৫/২০২৩ইং তারিখ ভোর বেলা ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডা বাজারে না আসার কারনে মামলার ২নং সাক্ষী জয়কুমার দেব বর্মা চাম্পা লাল মুন্ডার মোবাইলে ফোন দেয়। ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডা ফোন রিসিভ না করার কারণে লেবু বাগান মালিক জনক দেববর্মাসহ তার লোকজন বাগানের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করিয়া ১৪/০৫/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ৬ টার দিকে লেবুর বাগানের ভিতরে রাস্তায় গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় চাম্পা লাল মুন্ডাকে পড়ে থাকতে দেখেন।

তাৎক্ষনিক লেবু বাগান মালিক জনক দেববর্মাসহ তার লোকজন চাম্পা লাল মুন্ডাকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধারপূর্বক চিকিৎসার জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪/০৫/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ৮ টা ১০ মিনিটের দিকে চাম্পা লাল মুন্ডা মৃত্যুবরণ করে।
জানা যায়, ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, শ্রীমঙ্গল সার্কেল, এবং অফিসার ইনচার্জ এর নির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই রাকিবুল হাছান, এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম, এসআই তীথংকর দাস এবং এসআই মোঃ জিয়াউর রহমানসহ একটি চৌকস দল রহস্য উদঘাটনে তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করে।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মৃতদেহ ময়না তদন্তের নিমিত্তে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে চৌকস দলটি ডলুছড়া লেবুর বাগানে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য চলে যান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিশ্বনাথ তাঁতীকে লেবু বাগানে পাওয়া যায় নাই। বিশ্বনাথ তাঁতীর বসতবাড়ীর উঠানের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের দাগ এবং তার বসত বাড়ীর সামনের রাস্তায় ও রক্তের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এই ঘটনায় বিশ্বনাথ তাঁতীকে সন্দেহ হইলে তথ্য প্রযুক্তি এবং স্থানীয় পুলিশ বন্ধুদের সহায়তায় কমলগঞ্জ থানাধীন পাত্রখলা চা বাগানের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সাঁড়াসি অভিযান চালিয়ে বিশ্বনাথ তাঁতীকে একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। গ্রেফতারকৃত বিশ্বনাথ তাঁতীকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে সে জানান যে, গত ১৩/০৫/২০২৩ইং তারিখ রাত অনুমান সাড়ে ১১ টায় ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডাকে বসতঘরে তার স্ত্রীর পাশে শুয়া অবস্থায় দেখতে পাইয়া সে নিজেই লাঠি দিয়ে চাম্পা লাল মুন্ডার কপালে ও পিঠে একাধিকবার আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেছে।

পরবর্তীতে চাম্পা লাল মুন্ডা গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় লেবু বাগানের ভিতরের মাটির রাস্তায় পড়ে থাকে। ঘটনার পর বিশ্বনাথ তাঁতী তাহার বাক-প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে ঘরে রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় গ্রেফতারকৃত বিশ্বনাথ তাঁতীর নিকট থেকে ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডার ব্যবহৃত আইটেল মোবাইল সেটটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার তদন্ত ওসি আমিনুল ইসলাম থেকে জানা যায় তিনি বলেন, “পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘ সময় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।গ্রেফতারের পর বিশ্বনাথ তাঁতী চাম্পা লাল মুন্ডা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হবে।”

একই ঘটনার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন “গ্রেফতারকৃত বিশ্বনাথ তাঁতীর বাকপ্রতিবন্বী স্ত্রী আব্রি ব্যানার্জি (৩০) পিতা প্রহলাদ ব্যানার্জিকে তার স্বামী মারপিট করেছে। তাকে ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।সে তো কথা বলতে পারেনা আমরা তার কথা বুঝবো ও না, সেজন্য বাকপ্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে এক্সপার্ট লোক দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, “ধৃত আসামীকে পুলিশ স্কটের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here