বড় দুই দল একসঙ্গে কাজ করলে উন্নয়ন সম্ভবঃড.বদিউল

    0
    261

    আমারসিলেট24ডটকম,২১ফেব্রুয়ারীঃ চতুর্থ দফা নির্বাচনের প্রথম দফায় বুধবার ৯৭টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারি ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৪২টিতে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩৪টি উপজেলায়। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ১২টিতে। জাতীয় পার্টি ১টি উপজেলাতে জয়ী হয়েছে। এছাড়া, অন্যরা ৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হয়েছেন। উল্লাপাড়া উপজেলার দু’টি কেন্দ্রের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। বিশ্লেষকরা এ নির্বাচনের ফলাফলকে বিশ্লেষণ করেছেন নানাভাবে। তারা বলেছেন, নির্বাচনে ১৯ দলীয় জোটের বড় ধরনের জয় হয়েছে। অপরদিকে সরকারের জনপ্রিয়তা যে কমেছে সেই বার্তাও পাওয়া গেছে। একই ভাবে প্রশ্ন তুলেছেন, স্থানীয় সরকার কতটা শক্তিশালী হবে তা নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতামতে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইঙ্গিত। তারা বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফল শিগগিরই সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে বিএনপির যুক্তি ও দাবি অনেক জোরালো হয়ে উঠবে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গতকাল টেলিফোনে মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

    আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি ছিল ১৯ দলীয় জোট বনাম ১৮ দলীয় জোটের অলিখিত নির্বাচন। ফলাফলে ১৯ দলীয় জোটের বড় ধরনের জয় হয়েছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কম হয়েছে বলে যে ধারণা করা হয়েছিল এ নির্বাচনের ফলাফলে তার সত্যতা  মিলেছে। ৫ম দফায় যে নির্বাচন হবে তাতে যদি অলিখিত ১৯ দলীয় জোট এ ধরনের সাফল্য বা বিজয় অর্জন করে তাহলে শিগগিরই সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে তাদের যুক্তি ও দাবি অনেক জোরালো হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ওপরে জাতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কোন অর্থেই কাম্য নয়। বর্তমান পরিস্থিতি সেই যুক্তি আরও জোরালো করবে। এখন জাতীয় সরকার যদি স্থানীয় সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় অথবা হস্তক্ষেপ করে তাহলে তাদের জনপ্রিয়তা আরও কমবে।
    সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উপজেলা নির্বাচন হওয়াটা জরুরি ছিল। সেটা হয়েছে। এখন স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে আইনগত ও কাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো দূর করতে হবে। এর আগের টার্মে স্থানীয় সরকার অকার্যকর ছিল। তার কুফল ভোগ করতে হয়েছে বর্তমান সরকারকে। এখন স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করাটা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ীরা যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে তারা শক্তিশালী হতে পারেন। অন্যথায় নয়। তিনি বলেন, এই নির্বাচন প্রমাণ করে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জনসমর্থন রয়েছে। তারা পথহারা নয়। আবার এটাও প্রমাণ করে সরকারের জনসমর্থন বাড়েনি। বড় দুই দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করে তাহলেই কেবল দেশের উন্নয়ন সম্ভব। দশম সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টি আসলে নামকাওয়াস্তে বিরোধী দল।
    ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্যান্য নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে দখল, মারামারি বা বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এটাকে ইতিবাচক বলে মনে করছি। তবে এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পরিপূর্ণ সঠিক ছিল না। বিশেষ করে দলনিরপেক্ষ নির্বাচন না দলের সমর্থনভিত্তিক নির্বাচন বিষয়ে ইসি জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফলে অবাক হননি। এটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। তবে জয়ের ব্যবধানটা আরও বেশি হতে পারতো। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির জন্য বড় বার্তা দিয়েছে। দলটি এখন নিজেদের প্রশ্ন করতেই পারে- জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কিনা। আমি মনে করি রাজনৈতিকভাবে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো অপরিহার্য। এ নির্বাচন সেই বার্তাই দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে এটাই আমার ধারণা। শুধুমাত্র এক দফা এক দাবি এ অবস্থান থেকে দলটির সরে আসা উচিত। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, একই ভাবে উপজেলা নির্বাচন সরকারি দলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা এখন সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে সরকারের। সুস্থ রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করলে সরকারের জন্য তা ইতিবাচক হবে। মানবজমিন,