বিচার বিভাগীয় কর্মচারিদের ৩ দফা দাবি আদায়ে ৩ মাসের আল্টিমেটাম

0
353
বিচার বিভাগীয় কর্মচারিদের ৩ দফা দাবি আদায়ে ৩ মাসের আল্টিমেটাম
বিচার বিভাগীয় কর্মচারিদের ৩ দফা দাবি আদায়ে ৩ মাসের আল্টিমেটাম

দেশের অধস্তন আদালতের কর্মচারীগণকে জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান, ব্লক পদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজন ও পদোন্নতির সুযোগ রেখে এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবীতে আজ ১ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারি এসোসিয়েশনের এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি। লিখিতি বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ রেজোয়ান খন্দকার। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। লিখিত বক্তব্যটি নিচে দেয়া হলো।

সুপ্রিয় উপস্থিতি ও গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর বিচার বিভাগাধীন অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচার সহায়ক কর্মচারী। বিচার বিভাগের কর্মচারী হওয়া সত্বেও বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট আইন মন্ত্রণালয় কিংবা উচ্চ আদালতের কর্মচারীদের ন্যায় সুযোগ সুবিধা প্রদান না করে আমাদেরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান সদাশয় সরকার কর্তৃক মাননীয় বিচারকদের জন্য “বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসবেতন স্কেল” নামে একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা একই দপ্তরে/আদালতে বিচার কার্যে মাননীয় বিচারকগণের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে কর্ম সম্পাদন করা সত্বেও আমাদেরকে বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে আমরা বিচার বিভাগের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা হতে বি ত। এছাড়াও, মাননীয় বিচারকগণ স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর পাশাপাশি দেওয়ানী আদালতের অবকাশকালীন সময়ে (ডিসেম্বর মাস) ফৌজদারী আদালতে দায়িত্ব পালন করার জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমান অর্থ অবকাশকালীন ভাতা হিসাবে প্রাপ্ত হন এবং সম্মানিত বিচারকগণ প্রতি মাসেই বিচারিক ভাতা হিসাবে মূল বেতনের ৩০% প্রাপ্ত হন, চৌকি আদালতের বিচারকগণ চৌকি ভাতা প্রাপ্ত হন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীগণকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেল এর অন্তর্ভুক্ত না করায় আমরা এসকল ভাতা থেকেও বি ত হচ্ছি। বিদ্যমান বৈষম্য থেকে উত্তোরণের উপায় হিসাবে অধস্তন আদালতের কর্মচারীগণের পক্ষ থেকে বর্তমান জনবান্ধব সরকারের নিকট যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমাদের নিম্মোক্ত দাবীসমূহ উপস্থাপন করছিঃ

১। অধস্তন আদালতেরকর্মচারীগণকে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসাবেগণ্যকরতঃ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে।

২। সকল ব্লক পদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজন পূর্বক হাইকোর্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের ন্যায়যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রতি ০৫ বৎসর অন্তর অন্তর পদোন্নতি/ উচ্চতর গ্রেড প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। অধস্তন সকল আদালতের কর্মচারীগণের নিয়োগ বিধি সংশোধন করতঃ এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে ।

ইতোপূর্বে আমরা ২৯ জুলাই, ২০১৯খ্রি. তারিখে মাননীয় সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ১১ নভেম্বর, ২০১৯খ্রি. তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৩ দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।

আদালতের কর্মচারীরা বিচারিক কাজের অতি আবশ্যক সহায়ক কর্মচারী। বিচারাঙ্গনে মামলা বৃদ্ধির ফলে মাননীয় বিচারকগণ যেমন কাজের ভারে ভারাক্রান্ত, তেমনি কর্মচারীরাও দিন দিন অধিক কাজের চাপে ভারাক্রান্ত। সরকারের অন্য যে কোন বিভাগের চেয়ে বিচার বিভাগের কর্মচারীগণ যে অধিক পরিশ্রম করেন, তা যে কোন বিবেকবান মানুষ দেশের আদালতে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করলে বুঝতে পারবেন। আদালতের একজন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বিচার কাজে সহায়তা করাসহ আমানতদারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত থাকে। উপরন্তু সততা, নিষ্ঠা, বিশ্বস্ততা, দ্বায়িত্বশীলতা, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার সহিত কার্য সম্পাদন করেন। এ কারণে আদালতের কর্মচারীগণ সমাজে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন কিন্তু বেশীরভাগ কর্মচারীরা-ই আর্থিকভাবে মানবেতর জীবন যাপন করে থাকেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের জাতীয় বেতন স্কেল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বর্তমানের কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ যেমন-উপ সহকারী প্রকৌশলী, অডিটর, সরকারী মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক’দের বেতন স্কেল সেরেস্তাদারদের নীচে ছিল, যাহা বর্তমানে সেরেস্তাদারদের বেতন স্কেলের দ্বিগুন। বর্তমানে জনকল্যাণের স্বার্থে সরকারের বিভিন্ন কর্ম পরিধি বৃদ্ধির ফলে অনেক নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত বিভাগসমূহের অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীদেরকেও দ্বিতীয় কিংবা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যেমন-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান/সহকারী শিক্ষক, খাদ্য পরিদর্শক, পুলিশের উপ-পরিদর্শক, নার্স, ব্লক সুপারভাইজার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। জেলা-রেজিষ্ট্রার এর কার্যালয়ে কর্মরত একজন মাধ্যমিক পাস উচ্চমান সহকারী/ প্রধান সহকারীগণকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে সরাসরি প্রথম শ্রেণীর সাব-রেজিষ্ট্রার পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উচ্চ মাধ্যমিক পাস যোগ্যতা সম্পন্ন একজন তহশিলদারকে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৬ মার্চ ২০২২খ্রি. তারিখে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতার কার্যালয়ের ৮টি পদের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন করে ৩টি শ্রেনীভুক্ত করা হয়। কিন্তু অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের কোন উন্নতি নেই, পদোন্নতির যেটুকু ব্যবস্থা আছে, তার চেয়ে ব্লক পদের সংখ্যাই বেশী। আবার যাদের পদোন্নতির সুযোগ আছে তাদের দীর্ঘ ২০-২২ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার ফলে তারা প্রনোদনার অভাবে তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেন নতুবা পদোন্নতির পূর্বেই চাকুরীর বয়সসীমা শেষ হয়ে যায় কিংবা মৃত্যুবরণও করে থাকে। যা বর্তমান আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here