ফের শুরু হচ্ছে নৃ”র চিত্রায়ন

    0
    238

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরদীর্ঘ বিরতির পর পুনরায় শুরু হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ন’ৃর চিত্রায়ন। বরিশালের বানারীপাড়ায় আজ শুক্রবার এই কাজ শুরু হবে। প্রযোজনা সংস্থা থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালীর পক্ষ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ই- বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। শুদ্ধতার অঙ্গিকার আর বিভেদ ছাপিয়ে মানুষে মানুষে মাখামাখি হওয়ার গল্প নিয়ে রাসেল আহমেদ রচিত ও পরিচালিত এ সিনেমার ৪৫ শতাংশ চিত্রায়ন শেষ হয়েছে আগেই।

    চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের রহমতপুরে এর চিত্রায়ন শুরু হয়। সে সময় স্থানীয় কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট এলাকায় দুই দফায় মোট ২০ দিন কাজ চলেছে। এবার বানারীপাড়া ছাড়াও মাধবপাশার দূর্গাসাগর, বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকার মহাশশ্মান, জীবনানন্দ দাশ সড়কের চার্চ অব বাংলাদেশের (অক্সফোর্ড মিশন) গীর্জা, কড়াপুরের মিয়া বাড়ির মসজিদ ও সরূপকাঠীর রাজবাড়ি ঘাটসহ বিভিন্ন লোকেশনে কমপক্ষে আরো ২০ দিন কাজ করা হবে। উইজার্ড ভ্যালী জানিয়েছে, প্রায় দেড়শো মিনিটের মত হবে চলচ্চিত্র নৃ’র শরীর। এটি কোনো তারকা নির্ভর চলচ্চিত্র নয়। কাহিনীর প্রয়োজনে চরিত্ররা এসেছে এখানে। চরিত্রদের জোর করে বসানোর চেষ্টা করা হয়নি। মঞ্চ ও টিভির কয়েকজন অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকলেও চলচ্চিত্র মাধ্যমে এরা সকলেই নতুন মুখ। তবে নতুন মুখ মানেই বোধে ও কর্মে কাঁচা, এমনটা ভাবার কারণ নেই। চরিত্ররা চরিত্রের প্রয়োজনেই নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে এ চলচ্চিত্রে।চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্র ‘বিশু’র ভূমিকায় অভিনয় করছে আট বছরের শিশু শিল্পী ইয়াসীন। বরিশাল মহাশ্মশানের পুরানো দুই চ-াল দিলীপ কুমার পাল ও রাঁধা বল্লভ শীল ছাড়াও এতে আরো আছেন তাসনুভা তামান্না, সিরাজুম মুনীর টিটু, সৈয়দ দুলাল, এস এম তুষার, দুখু সুমন, হ্যাভেন খান, জান্নাতুল বাকি আদর প্রমুখ। ওই চন্ডাল জুটির জীবন দর্শন ও ভাবনা নিয়ে অর্ধযুগ আগে শুরু হওয়া গবেষণার প্রেক্ষিতে প্রসূত এ চলচ্চিত্রে বরিশালের মাধবপাশার ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগরের প্রচলিত মিথ আর বাংলার সহজিয়া, দরদিয়া এবং মরমিয়া গণমানুষের কাছে এ চলচ্চিত্রের বার্তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গত জুনে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে নির্মাতা দাবি করেছেন, বাবা-মা-দাদা-দাদী-মামা-চাচা-খালা-খালু-বন্ধু-বান্ধব-আরশী-পরশী-আন্ডা-বাচ্চাসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে গিয়ে বাদামভাজা চিবুতে চিবুতে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার জানা গেছে, নৃ তৈরীর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিলো বেশ কয়েকবার। মূলত চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও উইজার্ড ভ্যালীর কর্ণধার রাসেল আহমেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় শুরু হয়েছিলো এর কাজ। ছয় মাসের প্রস্তুতির পর ২০ দিনের সুট্যিংয়ের জন্য অর্থও ছিলো নিতান্ত অপ্রতুল। অর্থসংকটের দরূন গত এপ্রিলে স্যুটিং বন্ধ হয়ে যায়।

    এমন সময়ে উইজার্ড ভ্যালী’কে সাথে আর্থিক সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ি ডা. আরিফুর রহমান। মূলত ফেসবুক পেইজের কল্যাণেই তার সাথে নৃ টিমের যোগাযোগ হয়। আর ‘বরিশাইল্যাইজম’ তাকে এই টিমের পাশে এনে দেয়। সম্পূর্ণ বরিশালকেন্দ্রীক হওয়ার কারণেই চলচ্চিত্রটির পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছা পোষণ করেন বরিশালের সন্তান ডা. আরিফ। এ ব্যাপারে আলাপকালে রাসেল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন ‘ব্যাপারটা সত্যি আনন্দের। যখন আমরা টাকার অভাবে সিনেমাটা শেষ করতে পারছিলাম না, হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। তখনই এই অভাবনীয় সাহায্য, সত্যি মিরাকল।’ এই চলচ্চিত্রের ধরণ, গল্প ও বিন্যাসই এই মিরাকল ঘটিয়েছে বলে তার বিশ্বাস। গল্পের ধরন সম্পর্কে রাসেল আহমেদ এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- ‘সব বলে দিলে হলে গিয়ে দেখবেন কি? আর বরিশালের মানুষ কথায় না, কাজে বিশ্বাসী।’ তবুও কথায় কথায় তার সাথে আলোচনায় উঠে আসে কিছু টুকরো। চলচ্চিত্র ও বর্তমান সময়ে তার অবস্থান, উত্তরণ প্রসঙ্গে আরো বেশ কিছু কথা। রাসেল জানান, চলচ্চিত্র মূলত জীবনেরই চিত্রায়ণ। কেবল ব্যক্তিক ও পারিবারিক জীবন নয়, সামজিক, রাষ্ট্রিক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক জীবনও হয়ে থাকে চলচ্চিত্রের অন্বিষ্ট বিষয়। এমনকি ফ্যান্টাসি, লোককাহিনী বা ভৌতিক কল্পকাহিনী নিয়েও নির্মিত হতে পারে সার্থক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে সমাজের চলমান ঘটনাকে বিষয় হিসেবে নির্বাচন করা হয় যে চলচ্চিত্রে, তাকেই সাধারণত সামাজিক চলচ্চিত্র বলা হয়। চলচ্চিত্রের সুস্থ ধারা সৃষ্টিতে এই ধরনের চলচ্চিত্রের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এ ধারারই একটি চলচ্চিত্র নৃ। সার্বজনীন মূল্যবোধে প্রতিটি মানুষের অপার মূল্যায়ন যেখানে প্রকৃতির উপস্থাপনায়, উদাহরনে। রাসেল আহমেদ বলেন, ‘শিশুচরিত্রকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মিত হওয়ার কারণে নৃ’কে শিশুতোষ চলচ্চিত্রও ভেবে বসতে পারেন কেউ কেউ। এখানে একটা শিশু চরিত্রকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। একটা শিশুর চোখ দিয়ে সমাজ ও সময়কে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। যে শিশুটার মধ্যেই মূলত খাঁটি মানুষটা বিচরন করে। নৃ তো মানুষেরই কথা বলবে। আর আমাদের আকাঙ্খা- কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশু হবার কারনে এই চলচ্চিত্র ছোট থেকে বড়, সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।’সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, ‘আর্ট, কমার্স, অফট্র্যাক, মেইনস্ট্রীম; যা কিছুই বলেন না আপনি- প্রতিটি চলচ্চিত্রের নিজস্বতা থাকতে হয়।

    নৃ সিনেমায় আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে এদেশের প্রেক্ষাপটে কাহিনীচিত্রে নিজস্ব একটা ভাবনা ভাষা বুননের। মানুষের ভেতরে ডুব দিয়ে তুলে আনা কিছু সহজ গল্প/কথা সাজানো হয়েছে সময়ের ওপরে, চলমান চিত্র ও শব্দের মিশ্রনে। ফিল্ম ফরম্যাট বা ডিজিটাল ফরম্যাটের কোন দ্বন্দে আমাদের তাই অবস্থান নেই। সামর্থের বিশ্লেষণে আমরা যে মাধ্যমটা বেছে নিয়েছি, তার নাম- ডিজিটাল। আর ধারার প্রশ্নে বলতে চাই- একটা গল্পকে এখানে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রাধান্য দেয়া হয়েছে গল্পের স্তরে স্তরে বিন্যস্ত কিছু অমোচনীয় সুকুমার সার্বজনীন মানব বোধের। যে গল্পের শুরু রমজানের প্রথম দিন ভোরবেলা। শেষ হয় ঈদের দিন সন্ধ্যাবেলা। অথচ গল্পের প্রেক্ষাপট এক হিন্দু পরিবার ঘিরে।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটু নিওরিয়ালিজম ধাঁচে এই চলচ্চিত্রের বিন্যাস হলেও মাঝে-সাঝেই শুদ্ধতার সুতীব্র কোনা-কুঞ্চি ভেঙে মসৃন করা হয়েছে, যাতে সাধারনের খেতে সুবিধা হয়। সেই সাথে যোগ হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগ। আর এ সব কিছুই করা হয়েছে দর্শক গ্রহনযোগ্যতা পাবার জন্য।’নৃ চিত্রায়নে তিনটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। মূল চিত্রগ্রাহক- ড্যানিয়েল ড্যানি। সাথে অন্য দুই ক্যামেরা সঞ্চালক ছিলেন- ঈয়ন ও দঈত আন্নাহাল। সিনেমার শিল্প নির্দেশক হিসাবে আছেন থিওফিলাস স্কট মিল্টন। শব্দগ্রহণ করছেন- এমআই সাইফ। পোষাক ও পরিচ্ছদ বিভাগে আছেন শাহরিয়ার শাওন। এছাড়া সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন- সামির আহমেদ। রাসেল আহমেদ বলেন, ‘মজার কথা হল- দু-একজন বাদে এই চলচ্চিত্রের সামনে পেছনে অংশগ্রহনকারী বিশাল দলের প্রত্যেকের জন্যই এটা প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। আর এ কারনেই এই সিনেমার নির্মান কালকে এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রা বললে মনুষ্যত্ব রক্ষার যুদ্ধে বোধ প্রকাশের সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী মাধ্যম চলচ্চিত্রকে হাতিয়ার হিসাবেই বেছে নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালী। তারা মনে করে, এ দেশের সিনেমাও একদিন পৃথিবী শাসন করবে। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে বরিশালের বিএম কলেজ এবং কলেজ রোড (বর্তমানে আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ সড়ক) কেন্দ্রীক সৃজনশীল আড্ডায় উইজার্ড ভ্যালীর জন্ম।

    স্থানীয় প্রযুক্তির সাহায্যে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, নাটিকা বা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি এ বিষয়ক তাত্ত্বিকচর্চায় সীমাবদ্ধ ছিলো এর প্রাথমিক কর্মকানড। প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে সিনেমা নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটি বরিশাল নগরীতেই ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে রাসেল আহমেদের জন্ম। নগরীর কলেজ রোড এলাকাতে বেড়ে উঠেছেন কর্কট রাশির এ জাতক। প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসাবে অনুশাসনের পাশাপাশি পেয়েছেন এক সুস্থ সাংস্কৃতিক বলয়। বই পড়া আর আঁকাআঁকির অভ্যাস হয়েছে তখনই।

    খেলাঘর করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে মঞ্চ নাটকের সাথে। কৈশোর কেটেছে ব্যান্ড মিউজিক আর সাহিত্য পত্রিকা করে। তারুণ্যে এসব চর্চা অব্যাহত রেখেই মেতেছেন ক্যামেরা-কম্পিউটার নিয়ে। ফটোগাফী-ভিডিওগ্রাফীর পাশাপাশি এডিটিং, গ্রাফিক্স ও এনিমেশন চর্চা করেছেন, করিয়েছেন। এরই ফাঁকে দৈনিকে শিল্প নির্দেশক ও সাংবাদিক হিসাবেও কাজ করেছেন। সংগঠক আর আয়োজকের ভূমিকায়ও তাকে দেখা গেছে বহুবার। ক্লাবের কাজ থেকে শুরু করে ফিল্ম ফ্যাস্টিভেল আয়োজন, সব জায়গাতেই সবচে কাজের মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এসব করতে করতেই কখন যে চলচ্চিত্র নির্মাণের ভূতটা রাসেলে মাথায় চেপে বসেছে, তা কেউ জানতেও পারেনি। বরিশালে বসেই তিনি নিভৃতে অডিও-ভিজুয়াল কাজের উপযোগী একটি দল গড়ে তুলতে শুরু করেন। যাত্রা শুরু করে উইজার্ড ভ্যালী। ২০১০ সালের শুরুতে রাসেল বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আসেন।

    তিনি জানতেন, টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক বা টেলিফিল্মে বাণিজ্যের চাপে শিল্প ভাবনা আড়ষ্ট হয় যায়। তবুও চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে নিজেকে যাচাইয়ের জন্যই নির্মাণ করেন নাটক ‘ফ্লাই-ওভার’। দেশ টিভিতে প্রচারিত এ নাটকটি প্রচুর প্রশংসা কুড়ালেও তিনি আর নাটক নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হননি। মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিজেকে এবং নিজের টিমকে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র চর্চার সাথে ক্যামেরা, রিগস, লাইটস ও এডিট প্যানেল সমৃদ্ধ স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইউনিট তৈরি করেন।বিজ্ঞপ্তি