পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট

    0
    240

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২অক্টোবরঃ  কানাডা ভিত্তিক তেল–গ্যাস কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেছেন দেশের হাইকোর্ট। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালের বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশে নাইকোর সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নিম্ন আদালতে নাইকোর বিরুদ্ধে বিচারাধীন দুর্নীতি ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত দুটি মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে কোন অর্থ পরিশোধ করা যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে এসব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।

    পরিবেশিত তথ্যে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য ২০০৩ ও ২০০৬ সালে নাইকোর সঙ্গে দুটি চুক্তি করে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে একটি ছিল বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে (জয়েন্ট ভেনচার) কাজের চুক্তি। অন্যটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচা সংক্রান্ত চুক্তি। নাইকোর সঙ্গে সম্পাদিত এ চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট কানাডাভিত্তিক তেল–গ্যাস কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং নাইকোর সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন।

    এটি এক অর্থে আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো, বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে করা চুক্তি দেশের ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে হলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে এবং এর বিরুদ্ধে আদালতে ন্যায়বিচারও প্রত্যাশা করা যায়। কানাডার আদালতেও এসব ঘুষ ও দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নাইকো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তি বাতিলের দাবিতে রিট করা হয়। আশ্চর্যজনক হলো, কানাডার আদালতে–ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে কাজ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলেও সরকার কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে নাইকোর সম্পদ জব্দ ও অবৈধ চুক্তি বাতিল করা। তা হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াত না। এখন দেখার বিষয় সুপ্রিম কোর্টে এ রায় বহাল থাকে কিনা।

    নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার অবৈধ চুক্তি নতুন কোন ঘটনা নয়। সরকার ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমন আরো অবৈধ চুক্তি রয়েছে বলে জানা যায়। যার কারণে রাষ্ট্রকে বড় মাশুল দিতে হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা–এক্ষেত্রে নাইকো মামলার রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এমন অপরাপর ‘অবৈধ চুক্তিও একইভাবে বাতিল করা হবে, এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একাধিক অস্বচ্ছ চুক্তি রয়েছে বলে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে খবর এসেছে। সেগুলোর বিষয়েও অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

    ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করার ব্যাপার এটা নতুন নয়। অতীতেও এ ধরনের ব্যাপার ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা ভেবে অবাক হই, দুর্নীতি দমন কমিশন এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা দেখে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চোখেই তো এটা আগে ধরা পড়ার কথা। নাইকোর মতো প্রতিষ্ঠানকে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসক্ষেত্র দেওয়া হলো আর দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করতে পারলো না–এমনটি কাম্য নয়। আমরা আশা করেছিলাম দুর্নীতি দমন কমিশনই বিষয়টি উদঘাটন করবে, কিন্তু তা হলো না। কানাডার আদালতে প্রমাণ হলো নাইকো ঘুষের বিনিময়ে গ্যাসক্ষেত্রের কাজ পেয়েছে। কানাডার আদালত নাইকোকে জরিমানা করার পাশাপাশি শাস্তি দিলেন। তারপরও বাংলাদেশ সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিলো না। ফলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট রায় বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

    এত কিছুর পরও আমরা আশা করি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় রায়ের আলোকে নাইকোর সঙ্গে করা অবৈধ চুক্তি বাতিল করবে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে। কানাডা ও বাংলাদেশের উভয় আদালতে নাইকোর দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। হাইকোর্টের এ রায়ের মাধ্যমে আমাদের সামনে নতুন সুযোগ উন্মোচিত হলো। আমাদের প্রত্যাশা–এক এক করে অন্যান্য অস্বচ্ছ চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে সমাজে ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা হবে। নাইকো সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মামলা, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান, তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে এখন সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।