পাইলট নওশাদ ১২৪ যাত্রিকে বাচালেও শেষ পর্যন্ত নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে

0
770
পাইলট নওশাদ ১২৪ যাত্রিকে বাচালেও শেষ পর্যন্ত নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মাঝ আকাশে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম ১২৪ যাত্রিকে বাচালে ও শেষ পর্যন্ত নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে ।
রোববার (২৯ আগস্ট ২০২১) ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্রুত মৃতদেহ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গত শুক্রবার ২৭ আগস্ট মাসকাট-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট বিজি ০২২ মোট ১২৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করে। এর আগে ওই হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রোশান ফুলবান্ধে জানিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন নওশাদ ‘কোমায়’ আছেন।

এছাড়া গতকাল শনিবার ২৮ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা তাহেরা খন্দকার বলেছিলেন, মাঝ আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়লে সাথে সাথেই পাইলট কাইউম কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কাছে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময়ে তিনি কো-পাইলটের কাছে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। তিনি আরো জানান, কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমানটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলটই বিমানটিকে সেখানে অবতরণ করান। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের বিমানটির ১২৪ জন যাত্রীর প্রত্যেকেই নিরাপদে ছিলেন। জরুরি অবতরণের পর পাইলট কাইউমকে নাগপুরের হোপ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর সেখানে তার এনজিওগ্রাম করা হয়।

বাংলাদেশ পাইলট এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি একজন দক্ষ পাইলট। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া সত্তেও তিনি দক্ষ হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। তার প্রেসার বেড়ে যাওয়ায় মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার রাতেই কাইয়ুমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।রবিবার ২৯ আগস্ট চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাপ্টেন নওশাদ ফ্লাইটটিকে কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। কলকাতার এয়ার ট্রাাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে যায়। মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।
নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের কারণে এবার জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রীর। তবে এটি প্রথম নয়। ৫ বছর আগে এভাবেই আরও ১৪৯ যাত্রী আর ৭ ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ। পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে ক্যাপ্টেন ছিলেন নওশাদ। সেই ফ্লাইটটি মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। টেক-অফ করার পর মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমান এয়ার ক্রাফটের হতে পারে।

সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নওশাদ ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের উপর দিয়ে ‍দুইবার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে ক্যাপ্টেন নওশাদ উঁচু মানের দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহই নিরাপদে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এ ঘটনার পর ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল। ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউম ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যোগদান করেন।