পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ১১১তম জন্ম বার্ষিকী আজ

    0
    479

    আমারসিলেট24ডটকম,০১জানুয়ারীঃ  আজ পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ১১১তম জন্ম বার্ষিকী ১ জানুয়ারি, বুধবার। ১৯০৩ সালের এই দিনে ফরিদপুর শহরতলীর কৈজুরী ইউনিয়নের ছায়াঢাকা আর পাখিডাকা তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কবির পিতার নাম আনছারউদ্দীন, মাতা আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৩৯ সালে মমতাজ বেগমকে বিবাহ করেন। কবির ৩ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার, খুরশিদ আনোয়ার ও আনোয়ার হাসু। ছেলেদের মধ্যে হাসু ১৯৯৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। দুই মেয়ে হাসনা জসীম মওদুদ ও আসমা এলাহী চৌধুরী। এর মধ্যে হাসনা বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের স্ত্রী ও আসমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরীর স্ত্রী। পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুর শহরের হিতৈষী স্কুলে। প্রাথমিক শেষে তিনি জেলা স্কুল থেকে ১৯২১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯২৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি  এবং একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৩১ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে এমএ পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
    মাটি ও মানুষের কবি জসীমউদ্দীন বাল্য বয়স থেকেই কাব্য চর্চা শুরু করেন। কবির ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তৎকালীন কল্লোল পত্রিকায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী। এরপর তার ৪৫টি রসালো বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি গ্রামবাংলার মানুষের সংগ্রামী জীবন-জীবিকার কথা সাহিত্যের পাতায় তুলে ধরে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে উচু করে রেখে গেছেন। কবিতা, গল্প, নাটক আর গানের মাধ্যমে গ্রাম-বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরে যে কবি পেয়েছিলেন পল্লী কবি উপাধি।
    গ্রাম বাংলার কবি জসীম উদ্দীনের ১১১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুর শহরতলী অম্বিকাপুরে কবির সমাধিস্থল সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবে। অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ(দঃ) ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা।

    পল্লী কবির অমর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে, নকশী কাথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, এক পয়সার বাঁশি, রাখালী, বালুচর প্রভৃতি। কবির জন্মৎসব উপলক্ষে বাড়ির সামনে জসীম উদ্যানে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর পক্ষকালব্যাপী বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। রাজনৈতিক কারণে এবার মেলাটি জানুয়ারি মাসে না হয়ে ফেব্রুয়ারিতে হবে বলে জসীম ফাউন্ডেশনের সূত্রে থেকে  গেছে। দেশের লোকজ, পল্লী, বাউল ঐতিহ্য বিকাশের লক্ষে জসীম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মেলাটির আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগতদের এই মেলায় দুই শতাধিক দোকানে বাঁশ, বেত, কাঠ, মৃৎসহ বিভিন্ন লোকজ শিল্পের পসরা বসবে। জেলার শতাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রতিদিন বিরামহীনভাবে আয়োজন করা হয় লোকজ, পল্লী, বাউল, লালন, জারী, সারি, গীতিনাট্য,  বিচার ও পালাগান। থাকে পুতুল নাচ, সার্কাস, জাদু, মৃত্যুকূপসহ নানা খেলায়-মেলায় আগতদের মুগ্ধ করে রাখবে। এছাড়া স্থানীয় শিল্পীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে জসীম মঞ্চ। দীর্ঘদিন অবহেলিত পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। ২০১১ সালে কবির বাড়িটিকে ঘিরে একটি মিউজিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেই কাজ শুরু হলেও প্রায় দু’বছর হয়ে গেলেও এখনও তা শেষ হয়নি। বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি জসীমউদ্দীন ১৯৭৬ সালের ১৪ই মার্চ ইন্তেকাল করেন।