নবীগঞ্জঃ৩৩ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়

    0
    241

    “এলাকার সড়কগুলোর নিরব কান্না! দুর্ভাগা মানুষের আকুতি মিনতি ফরিয়াদ কানে ডুকছেনা কর্তা বাবুদের”

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৩এপ্রিল,নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃপ্রথম শ্রেণীর খেতাব প্রাপ্ত নবীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান সড়কগুলোর নিরব কান্না যেন কেউই শুনছে না। নিরবে-নিভৃতে কাদঁছে নবীগঞ্জ শহর ও পৌর এলাকার সড়কগুলো। সংস্কারের অভাবে সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পিচের আস্তরণ ও ইটের খোয়া উঠে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানা-খন্দে ভরা সড়কগুলোতে চলাচল করতে প্রতিনিয়ত নানা ভোগান্তিতে পরেন নবীগঞ্জ পৌরবাসী। অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় জলাবদ্ধতা। জ¦ালাময়ী বেহাল দশায় ঝাঝরা হয়ে গেছে সড়কের মায়াবী বুক। দূর্ভাগা মানুষের আকুতি-মিনতি, ফরিয়াদ কোন কিছুই যেন কানে ডুকছেনা কানওয়ালা কর্তা বাবুদের। নাকি খাঁটি সরিষার তৈল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন তারা এ হিসাবও যেন বুঝা বড় দায়।

    জানা যায়, ১৯৯৭ সালে নবীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১ম শ্রেণীর খেতাব প্রাপ্ত এ পৌরসভার আয়তন ৯ দশমিক ৭ কিলোমিটর। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ১৬ হাজার ১শত ৯৫ জন। এ পৌরসভার ৪৫ কিলোমিটার সড়ক আছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক মাত্র ২৮ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। কিন্তু অধিকাংশ সড়ক গুলোরই কার্পেটিং উঠে গেছে ও বহু খানাখন্দের সৃষ্ঠি হয়েছে। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড এর কারণে প্রতিনিয়তই যানজট লেগেই থাকে। আবার প্রধান সড়কের উপর অবৈধ স্থাপনাও আছে, বিশেষ করে কাচা মাল ও ফলের দোকান। এসব কারণে দূর্ভোগ যেন পৌরবাসী নিত্য সঙ্গি হয়ে দাড়িয়েছে। রাস্তা থেকে গাড়ির স্ট্যান্ড ও কাঁচা বাজারসহ সকল অবৈধ স্থাপনা সরানোর ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পৌর কতৃপক্ষ।

    নবীগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তা গুলো দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এসব সড়কের দৃশ্য দেখলে মনে হয় কোন কোন পল্লী গ্রামের চিত্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমাদের কর্তা বাবুদের কারোও কি কখনও এসব সড়ক দিয়ে চলাচলের সৌভাগ্য হয়না..? নাকি বড় বড় দামী গাড়ি দিয়ে দাপিয়ে বেড়ান বলে এসব ভাঙ্গা ও মরন ফাঁদ নজড়ে আসেনা তাদের। দূর্ভোগের শিকার স্থানীয় ব্যবসায়ী, পথচারী, শিক্ষার্থী  ও যাত্রী সাধারনের অভিযোগ নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা ভোট আদায় করেন, কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর জনগনের কথা মনে থাকেনা। অনেক সড়কে বৃষ্টির পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্ঠি হয়ে যায়। শুধু তাই নয় সড়কগুলো একাকার কাদা জলে, একেবারেই অনুপযোগী যানচলাচলে। যে কারণে ব্যস্থতম জনবহুল এ সড়কগুলোতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-খাটো দূর্ঘটনা। সর্বোপরী “মরার উপর খাড়ার ঘা”- এর মত যন্ত্রণাময়ী যানজটতো রয়েছেই। এ অবস্থা থেকে অধিকার কিংবা অভিযোগের সুরে নয়, ফরিয়াদির মত প্রতিকার চান ভোক্তভোগী পৌরবাসী। গত দু‘দিন ধরে লক্ষ করা গেছে ওসমানী রোডের কিছু অংশে মেরামতের কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নেয়্া হচ্ছে।

    এদিকে, আইন শৃংখলা কমিটির মিটিংয়ে শহরের যানজট নিরসনের জন্য একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি আজও।

    গতকাল সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক মতিউর রহমান মুন্না পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের অভয়নগরস্থ খাদ্য গুদামের রাস্তা ও উপজেলা নির্বহী অফিসারের বাস ভবনের সামনের একটি সড়কের স্বচিত্রসহ পৌর নাগরিকদের সমস্যজনিত একটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে নবীগঞ্জের দায়িত্বশীল অনেকেই মন্তব্য করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি মন্তব্য (কমেন্ট) করেন নবীগঞ্জ উপজেলা আওমীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী। তিনি লিখেছেন “৩৩ কোটি টাকা বাজেট নবীগঞ্জ পৌর মেয়র সাহেবের উন্নয়ন নেই। ৩৩ কোটি টাকা কোথায় খরচ হলো। শোকের মাস ফেব্রুয়ারীতে খালি পায়ে হেটে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ ফেব্রুয়ারী গান গেয়ে বিনম্ব শ্রদ্ধায় শহীদ ভেদী পুস্প স্ববক অর্পন করা হয়। নবীগঞ্জ পৌর সভা ভাষা শহীদের শোকের মাসে রক্তে ভেজা দুখিনী বর্ণমালার প্রতি অবজ্ঞা জানিয়ে পৌর সভার টাকার অপচয় করে নাগর দোলার আয়োজন করে। ২১ আসলে পরে শহীদের রক্তে পৌর মেয়রের মনে নাগর দোলা লাগে” উক্ত পোস্ট নজড়ে পড়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র এটিএম সালাম এর। পোস্টে আওয়ামীলীগ সম্পাদকের মন্তব্যের জবাব হিসেবে এটিএম সালাম লিখেন, “বাজেট সম্ভাব্য থাকে, নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে রাস্তাঘাট, ড্রেন কালর্ভাটসহ যানজট দুর করতে না পারলেও সম্মানিত নাগরিকদের বিনোদন বা বই মেলার আয়োজন তো মন্দের কিছু নয়। হয়তো বা রাজস্ব খাত থেকে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।” এদিকে সাংবাদিক মুন্নার উক্ত পোস্টেই কমেন্ট করেছেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম। তিনি লিখেছেন “এই রাস্তার দায়িত্ব পৌরসভার, আশা করি পৌর পরিষদ এ বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করবেন।” পৌর এলাকার নাগরিক রাজু আহমেদ নামের একজন মন্তব্যের এক অংশে লিখেছেন, “নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন রাস্তার বেহাল দশা ২/৩ বছর ধরে এসব দেখার কি কেউ নেই..? জনপ্রতিনিধিদের কি লজ্জা সরম কিছু নাই, লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখা উচিত… ধিক্কার জানাই..” এর রিপ্লে বক্সে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রি তরুনা বাহার কলি লিখেছেন, “রাস্তা বেহলা দশা ২/৩ বছর না আরো বেশি দিন ধরে”। “পৌর এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন বাজার ব্যবস্থাপনা শুধুকি পৌরসভার দায়িত্ব রাজুর এমন কমেন্টে রিপ্লে বক্সে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম লিখেছেন, “পৌরসভার ভিতরে যত রাস্তা-ঘাট আছে তা পৌরসভারই দায়িত্ব, উপজেলা পরিষদ কিছু করতে পারে না..এটা সরকারী আইন” নাজমা বেগমের এমন জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করেন জাকিরুল ইসলাম নামের এক সাংবাদিক। জাকিরুল ইসলাম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন করেন “পৌরসভার অধীনে সড়ক ও জনপদ (সওজ)‘র সালামপুর রোড, হাসপাতাল রোড ও বানিয়াচং রোড, ইনাতগঞ্জ রোড রয়েছে, এই রাস্তাগুলো কি পৌরসভা চাইলে মেরামত করতে পারে না..? এই রাস্তায় তো পৌরবাসীও চলাচল করেন”। মিলটন নামের একজন লিখেছেন জনপ্রতিনিধিরা এর দায়বার এড়াতে পারবেন না।

    পৌর নাগরিকরা জানান, শহরের তীব্র যানজট নিরসনের দায়িত্ব কার? উপজেলা প্রশাসন না কি পৌর প্রশাসন। নাগরিকরা বলেন, কোন ভাবেই পৌর কর্তৃপক্ষ এ দায়ভার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ এই। উপজেলা প্রশাসন একাধিক বার আইনশৃংখলা মিটিং থেকে তাগিদ দেয়ার পরও যানজট নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছেন। প্রয়োজনীয় কোন ব্যাবস্থা গ্রহন না করায় পৌরবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। নবীগঞ্জ শহরকে যানজটমুক্ত করণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ এর প্রতি জোর দাবী জানান পৌরবাসী। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেলা করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ না করে যানজটসহ পৌর এলাকার সুবিধা বি ত নাগরিকদের উন্নয়নে কাজ করলে কাজ আসতো।