দু’গরু চোরকে পিটিয়ে হত্যাঃফেরীওয়ালা সেজে চুরির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ

0
141

সুজয় বকসী,নড়াইলপ্রতিনিধি: নড়াইলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দু’গরু চোরকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। রোববার গভীর রাতে সদরের কলোড়া ইউনিয়নের বীড়গ্রাম ও সীমান্তবর্তী নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
একজনের মৃতদেহে ভোটার আইডি কার্ডে নাম বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বারুইডাঙ্গা গ্রামের গফুর শেখের পূত্র আসাদুল শেখের নাম উল্লেখ থাকলেও অন্যজনের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।
গত দু’মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩৫টি গরু চুরির ঘটনা ছাড়াও চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, রোববার দিবাগত (২৫ ডিসেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে দুবৃত্তরা কলোড়া ইউনিয়নের বীড়গ্রামের রেমন্ত বিশ্বাসের ( রেবু বিশ্বাস) দু’টি গরু গোয়াল থেকে খুলে নিয়ে যায়। চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গৃহকর্তা বিষয়টি বুঝতে পেরে গ্রামবাসীকে জানালে পাশ্ববর্তী মুশুড়ি, নড়াইল পৌরসভার বিজয়পুর ও উজিরপুর এলাকার মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে গরু চোরদের ধাওয়া করে মারধর করলে দুজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। পুলিশ সংবাদ শুনে সোমবার সকালে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রেরন করেছে।

কলোড়া ইউনিয়নের বীড়গ্রামের সুশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী রচনা বিশ্বাস জানান, এক মাস আগে প্রায় ১লাখ টাকার গরু তার গোয়াল থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি সদর থানায় জিডিও করেছি। বীড়গ্রামের কয়েকজন জানান, নিহত একজনকে রোববার দিনের বেলায় মুড়ির তৈরি মোয়া বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে কলোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশীষ কুমার বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ ১ থেকে দেড় মাস ধরে আমার ইউনিয়নের কয়েক গ্রামসহ পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামের ১০-১২ টি গরু চুরি হয়, এই গরু চুরির কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় আতংকিত হয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ প্রতি রাতে পাহারা বসিয়েছিল।গত রাতে বিড় গ্রামের রেবু বিশ্বাসের গোয়াল ঘর থেকে গরু খোলার সময় চোরদের হাতে নাতে প্রায় দেড় -দুই হাজার লোক তাদের গনপিটুনি দেয়। তারপর এই অবস্থা। এর আগে এ ইউনিয়নের মুশুড়ি গ্রামের বিপুল বিশ্বাসের ১টি, বীড়গ্রামের রচনা বিশ্বাসের ১টি এবং দু’দিন আগে হরিচাঁদ বিশ্বাসের ১টি গরু চুরি হয়। বিষয়টি সদর থানাও জানানো হয়েছে।
নড়াইল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজিরপুর এলাকার বাসিন্দা রাজু মোল্যা জানান, শুনেছি ৫-৭ জন গরু চোর গত রাতে এলাকায় প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৫ জন পালিয়ে গেলেও ২ জনকে এলাকাবাসী ধরে ফেলে গণধোলায় দিলে তাদের মৃত্যু ঘটে। এর আগে দেড় মাস আগে একই রাতে উজিরপুর এলাকার রামপদ বিশ্বাসেআপনি সের ৫টি ও প্রশান্ত বিশ^াসের ১টি গরু চুরি হয়।
এদিকে সদরের আউড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম পলাশ জানান, গত দেড় মাসের মধ্যে তার ইউনিয়নের লস্করপুর ইউনিয়নের হাসেম কাজীর ৫টি, কুতুব মোল্যার ৩টি ও হক মোল্যার ১টি এবং মুড়দাইড় গ্রামের ইমরান চৌধুরীর ২টি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়া ভদ্রবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সজিব মোল্যা জানান, তার ইউনিয়নের মেম্বর রায়খালী গ্রামের রুমিছা বেমমের ২টিসহ ৪টি গরু চুরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নড়াইলে সম্প্রতি চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার রাতে নড়াইল পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র প্রয়াত জাহাঙ্গীর বিশ^াসের দোকানের সামনে থেকে ১২টি ব্যারেলে ২৯শো লিটার ডিজেল খোয়া যায়। যার মূল্য ব্যারেলসহ ৩লাখ ৪০ হাজার টাকা। গত শনিবার দুপুরে শহরের উপজেলা পরিষদের পাশের্^ একটি স’মিলের সামনে থেকে খবির মোল্যার ইজিভ্যান চুরি হয়ে যায়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ইজিবাইক ও ইজিভ্যান চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম কামরুজ্জামান ঘটনা স্থল পরিদর্শন শেষে জানান, সম্প্রতি নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলায় গরু চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশ সুপার নড়াইল ও লোহাড়ায় জনপ্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় কালে, গ্রামে গ্রামে পাহারার ব্যাবস্থা করতে বলেন। এরই আলোকে গ্রামের লোকেরা পাহাড়ার ব্যাবস্থা করে। তারই ধারাবাহিকতায় গতরাতে গরু চুরি করতে এেেল গৃহকর্তা টের পেয়ে এলাকাকাবাসীকে জাগ্রত করলে তারা ধাওয়া দিয়ে ৩জন পালিয়ে যায় ও ২ জন ধরা পড়ে , তার মধ্যে অনাকাংখিতভাবে দুজনকে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। শোনা যাচ্ছে, এসব দুবৃত্তরা ফেরীওয়ালা সেজে এসব অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি মামলা হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here