ত্রাণ উত্তোলনকারী মিডল পার্সন কতোটা সৎ?

    0
    346

    “জ্ঞানী লোকেরা বলেন: ‘ভাবিয়া করিও কাজ; করিয়া ভাবিও না।’ কিন্তু আমরা না ভাবিয়া অনেক কর্ম করি বলিয়াই সমাজ অবাধে দুর্নীতিবাজ প্রসব করিয়া দেশের এমন দৈন্যদশা করিয়াছে”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭সেপ্টেম্বর,সাইফুল ইসলাম  রোবায়েতঃ ছাত্র-জীবনে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জনাব আবুল মনসুর আহমদের লেখা ‘রিলিফ ওয়ার্ক’ প্রবন্ধ আমাদের পাঠ্য ছিলো। না পড়ে থাকলে, দারুণ মিস করছেন! এখনই অন-লাইন থেকে পড়ে নিন। লিংকটা দিলাম:http://www.galpopath.com/2015/11/blog-post_41.htmlএবার প্রবন্ধটির আলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলছি-ধরুন, আপনি একজন ধনী ও বিবেকবান লোক। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে অনেক দূরের বা ঢাকার বাসিন্দা। রোহিঙ্গাদের মানবেতর দশা দেখে আপনার মানবতাবোধ জেগে ওঠায় ওদের ত্রাণ দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু তা কীভাবে দেবেন? আপনার এলাকার যুব সংঘের বা ক্লাবের ছেলে-পেলেরা কিংবা রাজনৈতিক বা সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবক বা মানবতাবাদী সংগঠনের কর্মীরা অথবা নেতা-পোতা-হোতা গোছের লোকদের চামচারা ত্রাণের জন্যে মাইকিং করছে, টাকা তুলছে আর বলছে: ‘কাপড়-চোপড়, খাবার-দাবার ইত্যাদি কিনে দিলেও চলবে। আমাদের টীম ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দেবে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।’

    এখন প্রশ্ন হলো: এসব মিডল পার্সন কতোটা সৎ? ওরা কি আসলেই নিবেদিতপ্রাণ, ধার্মিক বা পরহেজগার কিংবা আল্লাহুতা’লাকে সত্যিই ভয় পায় তো? ওদের বিশ্বাস করা যায় তো? আপনি ত্রাণ হিসেবে ওদের কাছে ১০০ টাকা কিংবা দু’ বস্তা চাল বা ২০ কেজি চিড়া কিনে দিলে, রোহিঙ্গারা পুরোটাই পাবে তো? এই সুযোগে ওরা টু-পাইস কামাবে না তো? কী মনে হয়? আপনার এলাকাবাসী হওয়ায় আপনিই ওদের ভালো করে চেনেন। তাই, একটু ভেবে নিয়ে এসব প্রশ্নের সদুত্তর আপনি সহজেই বের করতে পারবেন।

    ১৯৮৮ সালের বন্যার ত্রাণ-বিতরণের সময় থেকেই জেনে আসছি যে, প্রায়ই ত্রাণের প্রতি মন বস্তা থেকে কয়েক কেজি করে খাদ্য-পণ্য উধাও হয়ে যায়! অনেক ভালো কাপড়-চোপড়ও হকদারের কাছে না পৌঁছে ত্রাণ-বাহিনীর পরিবারের সদস্যদের গিফট হয়ে যায়! আর টাকার ভাগ তো আছেই! নইলে, ওরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে নাকি? আপনার এলাকায় যার তত্ত্বাবধানে এসব হচ্ছে, সে ভবিষ্যতে চেয়ারম্যান বা কমিশনার কিংবা সাংসদ পদপ্রার্থী নয় তো? জ্ঞানী লোকেরা বলেন: ‘ভাবিয়া করিও কাজ; করিয়া ভাবিও না।’ কিন্তু আমরা না ভাবিয়া অনেক কর্ম করি বলিয়াই সমাজ অবাধে দুর্নীতিবাজ প্রসব করিয়া দেশের এমন দৈন্যদশা করিয়াছে।

    সবার কথা বলছি না বা সবাইকে এক পাল্লায়ও মাপছি না। কিন্তু লক্ষ্য করবেন, এসব ত্রাণ-কর্মীর অনেকেই বেকার বা ছাত্র বা এলাকার বখাটে ছেলে-পেলে কিংবা কোনো নেতা-পোতার চামচা অথবা কোনো সংগঠনের কর্মী। ওদের নিজেদেরই তো ত্রাণ দরকার। তাই, আপনার দেয়া ত্রাণের একটি অংশ ওদের পকেটে যাওয়া সম্ভাবনা খুবই বেশি। ঢাকা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পর্যন্ত ট্রাকভাড়া দশ থেকে বারো হাজার টাকা (আরও বেশিও হতে পারে)। আপনি আরও দূরবাসী হলে, স্বাভাবিকভাবে ভাড়াও আরও বেশি হবে। সঙ্গে যাতায়াতে ঐ রিলিফ বাহিনীর থাকা-খাওয়া-বিশ্রাম ইত্যাদি বাবদ খরচের ব্যাপার-স্যাপার আছে না? এসব কি ওরা গাঁটের পয়সা থেকে দেবে? নাকি রিলিফ থেকেই মাইনাস হবে? আপনি প্রায় নিশ্চিত থাকুন যে, সেসব ত্রাণ থেকেই বাদ যাবে। বাকিটা ওরা ওখানে বিতরণ করে ওদের নেতা-পোতা, সংঘ, ক্লাব বা সংগঠনের পক্ষে পাবলিসিটি করলে ব্যাপারটা কেমন হলো? ত্রাণ দিলেন আপনি আর কৃতিত্ব নিলো কিনা অন্যে? এভাবে যারা কৈয়ের তেলে কৈ ভাজে, তারা কি আসলেই দয়ালু বা মানব-দরদী? অন্যের টাকায় পোদ্দারি অনেকেই করতে পারে। কিন্তু এটা কি সততার নমুনা? সৎ লোকে কি কখনও তা করবে? করলে কি সে আর সৎ থাকবে?

    এবার হিসেব করুন তো যে, আপনি ওদের ১০০ টাকা দিলে, রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত কতো পেতে পারে? এসব মেনে নিয়েই আপনি ওদের দিয়ে ত্রাণ দিলে বলার কিছুই নেই। রোহিঙ্গারা একেবারে না পাওয়ার চেয়ে যা-ই হোক পেলো তো। যদি বলেন: ‘আমি তো নেক নিয়তেই দিয়েছি। এখন ওরা কী করলো, তা আমার হেডেক নয়!’ বলবো: নো ব্রাদার! ইসলাম অনেক সচেতন ধর্ম। তাই, আপনি গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে পারেন না; কাউকে দু’ নম্বরি করার সুযোগ দিতে পারেন না। আপনাকে অবশ্যই দূরদর্শী বা পরিণামদর্শী হতে হবে।

    আপনি কোন নিয়তে ত্রাণ দেবেন, সেটিই বড় কথা? নাম কামাতে চাইলে, এ পোস্ট আপনার জন্যে নয়। আর আল্লাহুতা’লা ও নবীজীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) সন্তুষ্টি হাসিলের জন্যে হলে, আপনার দেয়া ত্রাণের পুরোটাই যেনো রোহিঙ্গারা পায়, ঐ ব্যবস্থা করুন। আপনি তো ধনী লোক; বিচক্ষণ মুসলিম। তাই, আপনার মতো যারা গাঁটের পয়সা খরচ করে কিংবা ঘরেরটা খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো নেক ভাবনা ভাবেন, তাদের নিয়ে মেহনত করে হলেও নিজেদের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের শিবিরে গিয়ে নিজ হাতে ত্রাণ-বিতরণ করুন, সওয়াব কামান এবং ১০০% নিশ্চিন্ত হন। আর কষ্ট করে নিজেদের ত্রাণ-বিতরণের ছবি তোলার কোনো দরকার নেই। কেননা, আপনার দু’ কাঁধের দু’ ফেরেশতা এসব ভিডিও করে রাখছেন। তদুপরি, মহান আল্লাহপাক তো সবই মনিটরিং করছেন। তাই, রোজ হাশরে আপনার কাজের প্রতিদান বা প্রতিফল যথাযথভাবেই পাবেন।

    সুতরাং জেনে-বুঝেও আলসেমি করে তরুণ প্রজন্মকে অসৎ হওয়ার কিংবা অসৎদের দুর্নীতি করার সুযোগ দেবেন না। আর মনে রাখবেন, এ সচেতনতাও তাকওয়ার নিয়ামক, হেদায়েত ও ইবাদত। ধন্যবাদ। সাইফুল ইসলাম  রোবায়েত-লেখক ও গবেষক।সুত্র-The Helmet of Sher Shah