ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প মুদ্রা ভাবনা

0
367
ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প মুদ্রা ভাবনা
ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প মুদ্রা ভাবনা

আমার সিলেট ডেস্কঃ  চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়াতে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। যার ফলে কমে যাচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কমে রবিবার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প মুদ্রা নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এদিকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ আইনে যুক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলার ছাড়া যেসব মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই তার মধ্যে রয়েছে পাউন্ড, রুপী, ইউরো, ইয়েন এবং রুবল। এসব মুদ্রা ব্যবহারে ‘বিনিময় চুক্তি’ এবং ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতির কথাও বলা হয়েছে। তবে এই লেনদেন কতটা সম্ভব হবে এবং কতটা কাজে আসবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারে তেমন বাধা নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এখন ডলার সংরক্ষণই বড় কথা।

সাধারণভাবে একটি দেশে ছয় মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাকে নিরাপদ মনে করা হয়। গত অর্থবছর আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৮২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। প্রতি মাসে গড়ে ৬৮৭ কোটি ডলার ব্যয় ধরলে বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের সামান্য বেশি আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। রবিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমেছে ৩৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর প্রধান কারণ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রবিবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় আরও ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। এখন রিজার্ভ ধরে রাখতে বৈধ পথে রেমিটেন্স বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় কমাতে বেশ কিছু পণ্যে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণ, কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণ বন্ধ, ১০ লাখ ডলারের বেশি আমদানির তথ্য যাচাইসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। বিভিন্ন উদ্যোগের পরও চলতি বছরের প্রথম মাস জুলাইতে ৫৮৬ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের আমদানি হয়। তবে গত অর্থবছর রেমিটেন্স ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারে নামে।

অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিটেন্স ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ৪১৩ কোটি ডলার হয়েছে। এ সময়ে রফতানি আয় ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়ে ৮৫৯ কোটি ডলার হয়েছে। তবে বিদেশী ঋণ পরিশোধ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। আগামীতে বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। তখন রিজার্ভ আরও কমতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা দরে বিক্রি করেছিল। এখন বিক্রি করছে ৯৬ টাকায়। এর মানে ৯ মাসের কম সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ডলারের দর বাড়িয়েছে ১০ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় ১২ শতাংশ। আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্সে বেড়েছে অনেক বেশি। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় রফতানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারে ৯৯ টাকা, রেমিটেন্সে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দর ঠিক করেছে ব্যাংকগুলো।

আর একটি ব্যাংকের এ দুয়ের গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি ও আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করতে পারবে। এতে আমদানিতে ১১২ টাকায় উঠে যাওয়া ডলারের দর ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর ডলারের বেচাকেনার দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পর থেকে অনেক ক্ষেত্রে ডলার লেনদেন হচ্ছে। রবিবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনি¤œ ১০১ টাকা ৩৯ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা হয়।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমেছে, তা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। একটা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিক্রি থামাতে হবে। আগামী ছয় মাস বা এক বছরে পরিস্থিতি একেবারে ঠিক হয়ে যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। ফলে ডলার বিক্রি বন্ধ করলে সঙ্কট বাড়বে- এমন মনে করা ঠিক হবে না। চাহিদা ও জোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলারের বাজারভিত্তিক দর দিলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়বে। আবার রফতানিকারকরাও দ্রুত অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব ॥ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ আইনে যুক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। বিদেশী মুদ্রা ব্যবহারে জটিলতা এবং বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা কাটাতে ডলারের পাশাপাশি যাতে অন্য দেশের মুদ্রা ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায় সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।

বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে পারস্পরিক লেনদেনের সুবিধার্থে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসিবি, ব্যাংক অব রাশিয়া, ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক লেনদেনে খরচ কমানোর পাশাপাশি ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইউএস সুইফটের সঙ্গে সমান্তরালভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের বিকল্প নেটওয়ার্ক ইসিবি এবং রাশিয়ান এসপিএফএস (সিস্টেম ফর ট্রান্সফার অব ফাইন্যান্সিয়াল মেসেজ) ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ নম্বর ধারায়।

লেনদেনের ক্ষেত্রে যেসব মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই তার মধ্যে রয়েছে ডলার, পাউন্ড, রুপী, ইউরো, ইয়েন এবং রুবল। এসব মুদ্রা ব্যবহারে ‘বিনিময় চুক্তি’ এবং ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতির কথাও বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘বাণিজ্য (আমদানি ও রফতানি) ব্যবস্থাপনা, ২০২২’ শীর্ষক আইনে এই বিষয়গুলো যুক্ত করতে বলেছে দেশের শীর্ষ এই বাণিজ্য সংগঠনটি। আইনটির খসড়া তৈরির পর এর ওপর বিভিন্ন সংস্থা ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মতামত চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খসড়া আইনের ওপর গত ৩০ আগস্ট এসব প্রস্তাবনা পাঠায় এফবিসিসিআই।

জানতে চাইলে বাণিজ্য সংগঠনটির সিনিয়র প্রথম সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটা পরিবর্তন আসছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন একটি মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল থাকার সুযোগ নেই। আমাদের সিস্টেমগুলো ডেভেলপ করতে হবে। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চীনা মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।

চীনের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয়। এ ছাড়া অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ভারতীয় রুপী সংগ্রহ করার সুযোগও বেশি। আমরা মনে করি, রাশিয়ান রুবলের চেয়ে ভারতীয় রুপীতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুযোগ দেয়া হলে সেটি ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি কার্যকর হবে।

রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতিতে লেনদেনের সুযোগ ॥ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থা সুইফট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন প্রক্রিয়াটি কী হবে- সে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চীনের মুদ্রায় এ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন দেয়ার পর চায়নিজ লেনদেনে নেটওয়ার্ক সিআইপিএস-এ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর।

তবে রাশিয়ার লেনদেন নেটওয়ার্ক এসপিএফএস-এ বাংলাদেশের যোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ভয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে বিকল্প ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতিতে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের সুযোগ স্থাপন করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওকাব-এর ‘মিট দ্য প্রেস’-এ বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে; সে ক্ষেত্রে ইউরোসহ অন্যান্য মুদ্রার কথা এসেছে। এটা খুবই টেকনিক্যাল বিষয়; সম্ভব কিনা সেটা জানি না। যেহেতু কথা উঠেছে তাই সম্ভাবনা আছে, চেষ্টাও চলছে। কারণ ডলারের দাম ওঠানামা করছে। দাম নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় চিন্তা করছে, আশা করছি ভাল একটা ফল আসবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে রুপীতে লেনদেন করতে চায় এসবিআই ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনে টাকা ও রুপী ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। রফতানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। সম্প্রতি জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকটি বলেছে, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার এক্সপোজার (পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা) না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রতিবেশী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে  বৈশ্বিক চলমান সঙ্কটে গত কয়েক মাসে দেশে নানা ধরনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতনির্ভরতা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাতে ভারত থেকে পণ্য আমদানি রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ১ হাজার ৬৮৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৮৫ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। আমদানির এই তথ্যে বিদ্যুত আমদানির হিসাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারে তেমন বাধা নেই ॥ বাংলাদেশের মোট আমদানির ৪০ শতাংশই হয় চীন এবং ভারত থেকে। এরমধ্যে ২৬ শতাংশ চীন এবং ১৪ শতাংশ ভারত থেকে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মোট রফতানির ২৬ শতাংশ এবং আমদানির সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। মোট রফতানির ৫৬ শতাংশ এবং আমদানির ৮ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। কোন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের অবস্থা কী সেটা বিবেচনায় রেখে কাজ করছে সরকার।

বিশ্লেষকরা জানান, বিশ্বের পাঁচটি দেশের মুদ্রা নিয়ে এখন ইন্টারন্যাশনাল কারেন্সি বাস্কেট করা হয়েছে। ইউএস ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানী ইয়েন এবং চীনা ইউয়ান। এশিয়ান ক্লিয়ারিং সিস্টেমের (আকু) মাধ্যমে এশিয়ার দেশগুলো তাদের আমদানি রফতানি দায় পরিশোধ করে। সেখানে ডলার মধ্যস্থতাকারী মুদ্রা। কিন্তু সেটা থাকলেও এর অধীনেই দুই দেশ তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে। আবার চীন ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম গড়ে তুলেছে।

এশিয়া আফ্রিকার ৩০-৩৫টি দেশ এই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে লেনদেন করে । এটার কারেন্সি হচ্ছে চীনা ইউয়ান। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইলেও তা খুব ধীরগতিতে হচ্ছে বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘এখনও ৫৯ শতাংশ রিজার্ভ হলো ইউএস ডলারে। ইউরো প্রায় ২০ ভাগ। আর সব মুদ্রা মিলিয়ে বাকি ২০ শতাংশ। ইউয়ান ২.২৫ শতাংশ। বিকল্প মুদ্রার ক্ষেত্রে ইউয়ান কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে।

ভারতীয় রুপীও হয়তো হবে। কিন্তু রুবল সম্ভব নয়।’ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের এইটুকু লাভ হতে পারে যে আমরা চীন ও ভারতে রফতানি করে তাদের যে মুদ্রা পাব তা ব্যবহার করতে পারব। তবে সেটা যদি কেউ বিক্রি করতে চান অন্যরা নাও কিনতে চাইতে পারে। এটা ব্যক্তির লাভের ওপর নির্ভর করে। এখানে আমদানির ক্ষেত্রে ডলার বাঁচবে। কিন্তু রফতানির ক্ষেত্রে তো আর সেটা হবেনা। আসলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনই আসল কথা।’দৈনিক জনকণ্ঠ থেকে নেওয়া সংবাদ