খালেদা জিয়ার নির্দেশে জেলে যাওয়ার প্রস্তুতি !

    0
    243

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরসরকার বিরোধী সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এখন জেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ১৮ দলীয় জোটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। আগামী ২৭ অক্টোবর রবিবার বা এর কাছাকাছি যে কোন দিন থেকে এ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে ১৮ দল। শুধু তাই নয়, আজ শুক্রবারের পর নতুন সরকারের ধরন ও আচরণ দেখে তারা আরো কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনে যাবার সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। ১৮ দলের ভাষ্য অনুযায়ী- এ আন্দোলনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই সারাদেশে ধরপাকড় শুরু করেছে সরকার। আর এ ধরপাকড়ে ভীত না হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যেই দল ও জোটের শীর্ষ পর্যায়ের এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সাথে একাধিক গোপন বৈঠকে জেলে যাওয়ার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
    বৃহস্পতিবার রাজধানীতে শিক্ষকদের এক সমাবেশে বিরোধী দলীয় নেতা এ সরকারকে অবৈধ সরকার বলে আখ্যা দিয়েছেন। একই সাথে তিনি আজ থেকে এ সরকারের আর কোন সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ না মানার জন্য প্রকারান্তরে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের অনুসারী আমলাদের। এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৭ অক্টোবরের মধ্যে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে আসন্ন কঠোরতর আন্দোলনের মধ্যেদিয়ে সরকারকে টেনে নামানোর চিন্তাভাবনা করছে বিরোধী জোট। আগামী ২৭ অক্টোবর রবিবার রাজধানীতে ১৮ দলের কোন সমাবেশ বা সংবাদ সম্মেলন করে বেগম খালেদা জিয়া এ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
    দলীয় একটি সূত্র জানায়, ওই রকম কঠোর আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে বিএনপির একটি দায়িত্বশীল গ্রুপ। আর এ গ্রুপটির সরাসরি নেতৃত্বে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই। বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবারের পর নতুন সরকারের ধরন ও আচরণ দেখে তাদের দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। অবশ্য বিএনপি আগেই হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছে যে, সরকার তাদের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না করলে ২৬ বা ২৭ অক্টেবর থেকে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচী দিয়ে দেশ অচল করে দেয়া হবে।
    এদিকে দলীয় সূতে জানাযায়, আগামী ২৭ অক্টোবর রবিবারের পর থেকে জনপ্রশাসনে কোন কাজ না করারও শপথ নিয়েছেন বিএনপির অনুসারী আমলারা। এরই মধ্যে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কয়েক দফা গোপন বৈঠক করে আগামী ২৭ অক্টোবর পর থেকে সরকারকে কোন ধরনের সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, সরকারের ধরন ও আচরণ দেখে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
    পক্ষান্তরে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে যেভাবেই হোক আজ শুক্রবার নয়া পল্টনে ১৮ দলীয় জোটের জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর বিএনপির তিনি বলেন, আমরা নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করতে চাই। সরকারের প্রতি আবারো আহবান জানাচ্ছি- নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে শান্তিপূর্ন জনসভা করতে সহযোগিতা করুন। একই কথা বৃহস্পতিবারও সংবাদ সম্মেলন করেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে রাজধানীর সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি দিলেও বিএনপি ঘোষণা করেছে তারা যে কোন মূল্যে নয়াপল্টনেই জনসভা করবে।
    বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবি আদায়ে ঘরে বাইরে সব ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। অল্প সময়ের দ্রুত ও কার্যকর করার মতো আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচীই তৈরি করে রেখেছে বিএনপি। আর জোটের প্রধান দল বিএনপির নেয়া কর্মসূচী সফল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিচ্ছে শরিক দলগুলোও। আজ শুক্রকার থেকে শুরু হবে তাদের সে কর্মসূচি। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের ধরন ও গতি বেগবান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
    ১৮ দলীয় জোটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন কঠোর বা সর্বাত্মক অসহযোগের মতো হলেও ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো লগি-বৈঠার আন্দোলনের মতো পরিস্থিতির দিকে যাবে না। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ন জেলা ও বিভাগে একযোগে অবরোধ-অবস্থান করে ঢাকা বিচ্ছিন্ন করা, অসহযোগ-ঘেরাও এবং টানা হরতাল দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সককিছু চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জোটনেত্রীকেই।
    অন্যদিকে বিএনপি ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সর্ব দলীয় কমিটি গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। একই সাথে তারা মামলা-হামলা, গ্রেফতার ও বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গটিও মাথায় রাখছে। তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা এলে তা আস্তে আস্তে আরো কঠোর করা হবে। প্রয়োজনে সপ্তাহিক ২দিনের ছুটি বাদে টানা ৫ দিন হরতালের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; আর বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এ আন্দোলনের সরাসরি নেতৃত্ব দেবেন বলেও জানা গেছে।
    প্রসঙ্গত আজ শুক্রবার থেকে আগামী ২৪ জানুয়ারীর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পক্ষান্তরে বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাবার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ঘোষনা করেছে। তা না হলে প্রয়োজনে লাগাতার কর্মসূচী দিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দেন। অবশ্য ইতিমধ্যেই দুই প্রধাননেত্রী পরষ্পরের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে দেশের রাজনৈতিক আকাশে দেখা দিয়েছে কলো মেঘ।