কমলগঞ্জে নির্দয়ভাবে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল,এলাকাবাসী স্তম্বিত

0
782
কমলগঞ্জে নির্দয়ভাবে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল,এলাকাবাসী স্তম্বিত

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ইউপি নির্বাচন করতে চাওয়া ও ধলাই নদের বালুঘাট বালু উত্তোলন বিরোধের জের ধরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনলাইন পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দল বেঁধে একজনকে তাড়া করে দিন দুপুরে প্রকাশ্য আঞ্চলিক রাস্তায় নৃশংস সেই দৃশ্য ফেসবুকে “টক অব দা কমলগঞ্জ” হিসেবে সাধারণ মানুষ স্তম্বিত হয়ে পড়েছে।

এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে র‍্যাবের হাতে ও কয়েকজন আটক রয়েছে তবে এ ব্যাপারে সংবাদ লেখা পর্যন্ত র‍্যাবের কোন সুত্র আটকের কথা স্বীকার করেনি। 

এ দিকে ঘটনার পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মিরা পাশে থাকা রাস্তার পাশে একটি বাসার সিসিটিভি ফুটেজে সংগ্রহ করলে দেখা যায়, ব্যবসায়ী নাজমুল সড়কের ধার দিয়ে হেঁটে তাঁর বাসার দিকে যাচ্ছেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস এসে থামে নাজমুলের সামনে। এরই মাধ্য একটি ইঞ্জিন চালিত মালবাহী খালি ট্রাক্টর কৌশলকরে নাজমুলকে রেকি করে নিয়ে গিয়ে উলটো পথে তাকে পালাতে বাঁধা তৈরি করতে দেখা যায়। কেননা ইঞ্জিন চালিত গাড়ির চালক তার গাড়িটিকে স্টার্ট নিচ্ছে না বলে গাড়ীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে এসে জীবন বাঁচাতে পলাতক নাজমুলের গতি রোধ করে যা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অনুমান করা যাচ্ছে তাছাড়া লোক গুলো কেন দৌরাচ্ছে সে দিকে ফিরেও না তাকিয়ে আচমকা স্টার্ট দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। এর আগে মাইক্রোবাস থেকে অস্ত্র হাতে এক হামলাকারী নেমে তাঁকে ধাওয়া করেন। তিনি উল্টো দিকে ফিরে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু টা গতিরোধের কারণে বেশী দূর না যেতেই পিঠের আঘাতে রাস্তায় পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রোবাস থেকে নামা হামলাকারীরা তাঁকে ঘিরে ধরে মাটিতে পড়া অবস্থায় উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন, বেশির ভাগ কুপের আঘাত পায়ের দিকেই করা হয়েছে। এ সময় মাইক্রোবাসটি দ্রুত মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়।

আশপাশ মিলে ১০-১২ জন হামলাকারীকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় এদের মধ্যে সরাসরি পাঁচজনকে কোপানোয় অংশ নিতে দেখা যায় বাকিরা সহযোগিতা করে। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তাঁকে কুপিয়ে হামলাকারীরা ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে ধলাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে নিরাপদে চলে যান। সড়কে অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন ব্যবসায়ী নাজমুল। আশপাশে স্থানীয় দু-একজন মানুষকে দেখা গেলেও, রাস্তায় পরে থাকা নাজমুলকে সাহায্য করতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি তবে দূর থেকে শুধু শুধু চেয়ে দেখতে দেখা যায়।

এদিকে ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন উদ্ধারের সময় হামলাকারী ২ জনকে উদ্ধারে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

গত রোববার ৩১ অক্টোবর দুপুরে চৈত্রঘাটে নিজ বাড়ির কাছে নাজমুলের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতাল ও পরে সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যার দিকেই তিনি মারা যান। নাজমুল হাসান (৩৫) উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি।

স্থানীয়রা জানান , ধলাইর বালুঘাট ও চৈত্রঘাট বাজারের দোকানঘর নিয়ে নিহত নাজমুলের সঙ্গেও একটি পক্ষের বিরোধ চলছিল। এদেরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলার কারণে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থানায় মামলাও রয়েছে।

তা ছাড়া গুরুতরভাবে আহত হয়ে সিলেটে হাসপাতালে যাওয়ার সময় মুঠোফোনে লাইভে ব্যবসায়ী নাজমুল হামলাকারী চারজনের নাম প্রকাশ করেন। তিনি লাইভে বলেছিলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তিনি রহিমপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তফজ্জুল। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিরোধের জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে কোপানো হয়েছে।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক মাইক্রোবাসচালক আমির হোসেনকে (৪০)ও অপর একজন জুয়েল মিয়া (৩৭) কে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে তাদের মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত সোহেল রানা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলায় অংশ নেওয়া সকল আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।

নিম্নে ঘটনার ভিডিও লিঙ্ক