ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেইঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0
639
ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেইঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেইঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আমার সিলেট ডেস্কঃ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে যুবলীগের নেতাকর্মীদের আত্মনিয়োগ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী জানিয়ে তিনি বলেন, ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। যে যত কথা বা সমালোচনা করুক, বাংলাদেশকে কেউ আর দাবায়ে রাখতে পারবে না। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি হলেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর ২০২২) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ যুবলীগ আয়োজিত বিশাল যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সমালোচকদের উদ্দেশ করে আরও বলেন, অনেকে বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, এই হবে, সেই হবে-তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি, ইনশাআল্লাহ হবেও না।
যারা বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তাদের মুখে ছাই পড়েছে। খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এইট পাস দিয়ে, মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চালালে উন্নয়ন হয় না। দেশপ্রেম ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যে দেশের উন্নয়ন করা যায় আমরা তা প্রমাণ করেছি। বিশ্বের কেউ আর এখন বাংলাদেশকে অবজ্ঞার চোখে দেখে না।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতিকে গতিশীল করা আমাদের লক্ষ্য। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি-লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা কামাই করে বিদেশে গিয়ে এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা তা কেউ রুখতে পারবে না-এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আজ এখানে বলতে চাই, আমি এই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে চাই। তরুণরাই এতে নেতৃত্ব দেবে।
যুবলীগের এই যুব মহাসমাবেশকে ঘিরে যেন বাঁধভাঙা মানুষের গণজোয়ার নেমেছিল রাজধানীতে। চারদিকে শুধুই মানুষের স্রোত। বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে সাংগঠনিক শক্তির শোডাউন হিসেবে রাজধানীবাসী দেখল যুবলীগের যুব মহাসমাবেশে জনসমুদ্রের গর্জন! আর এই সমুদ্রের গর্জন ছিল আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথ দখলের প্রাক-মহড়া। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের যুব মহাসমাবেশে শুক্রবার লাখ লাখ যুবক-তরুণের তীব্র জনস্রোতে কয়েক ঘণ্টার জন্য যেন থমকে গিয়েছিল ঢাকা মহানগরী।
বেলা আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাসমাবেশ স্থলে পৌঁছানোর আগেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, টিএসসির চতুর্দিকের দীর্ঘ পথই ছিল জনতরঙ্গ। যেন জনতরঙ্গের শুরু আছে, শেষ নেই। জনতরঙ্গ থেকে ভেসে আসা লাখো মানুষের গগনবিদারী একই স্লোগান-‘শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, স্বাধীনতাবিরোধী-চক্রান্তকারীদের ঠাঁই নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই গগনবিদারী প্রকম্পিত ছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা।
করোনা মহামারীর কারণে এমন বাঁধভাঙা মানুষের গণজোয়ার অনেকদিনই দেখেনি রাজধানীবাসী। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটের সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথে রাজধানীতে লাখো মানুষের বাঁধভাঙা স্রোত নামিয়ে শুক্রবার বড় ধরনের শোডাউন করেছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে বিশাল এই যুব মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী ও উপ-প্রচার সম্পাদক আদিত্য নন্দী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা আড়াইটায় মহাসমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে যুবলীগের বছরব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এবং তাকে উত্তরীয় ও সুবর্ণজয়ন্তীর ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পক্ষ থেকে কাঠে খোদাই করা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি উপহার দেন। এরপর সৃষ্টিশীল একাডেমির ‘শান্তির সারথী’ শীর্ষক গীতিনৃত্য এবং দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পীরা। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেগম মমতাজ বেগমও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা গান পরিবেশন করেন।
সারাদেশ থেকে শুধু যুবলীগের নেতাকর্মীরাই নন, মহাসমাবেশ দেখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস, রিয়াজ, চিত্রনায়িকা নিপুণ, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীসহ অন্য কলাকুশলীরাও। অনুষ্ঠানে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো, সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন এবং ওয়েব সাইট উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তারা উন্নয়ন নাকি চোখে দেখে না। চোখ থাকতে যদি চোখে না দেখে তাহলে আর কি বলার আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল তো তারাও ভোগ করছে। আর জিয়া-এরশাদ-খালেদা সবই একই ইতিহাস। ১৯টি ক্যুর মাধ্যমে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, সৈনিককে ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খুন করেছে। জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। সে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছে।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা তারা মেরে দিয়েছে। এতিমের জন্য আনা একটি টাকাও এতিমরা পায়নি, সবই খেয়ে ফেলেছে। এ জন্য খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তিনি হলো বিএনপির নেত্রী। আর বিএনপির আরেক নেতা (তারেক রহমান) মানি লন্ডারিংয়েও সাজাপ্রাপ্ত। তারা যে লুটপাটের কথা বলে, তারেক জিয়ার শাস্তিই হয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য। এরা হচ্ছে খুন, মানি লন্ডারিং, চোরাকারবারি। তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না।
রিজার্ভ নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। তাদের সময় রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। আমরা ক্ষমতায় থেকে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিয়েছিলাম। বিনামূল্যে মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে টিকা কিনেছি, বিনিয়োগ করেছি, বিমান কিনেছি, পায়রা বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। এভাবে রিজার্ভ থেকে খরচ হয়েছে। ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। দেশের জনগণের উন্নয়নে এই টাকা ব্যবহার করছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি হলেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। তবে তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেকে আমাদের সমালোচনা করছেন, কিন্তু যদি কেউ অন্ধ হয় তাকে তো দেখানো যায় না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে-সবই তো আওয়ামী লীগের দেওয়া। আর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া-সবই তো একই ইতিহাস। বাংলাদশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। হাজার হাজার সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মী। খুনিদের লালন-পালন করাই ওদের (বিএনপি) চরিত্র।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এতিমের টাকা মেরে খেয়ে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া হচ্ছেন বিএনপির নেত্রী। তার পরিবর্তে যাকে দিয়েছে সে তো আরও এক ধাপ ওপরে। তরেক জিয়ার সাজা হয়েছে মানিলন্ডারিং কেসে। এফবিআই এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে গেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা আর গ্রেনেড হামলার মামলায়ও সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতা হচ্ছে খুন, মানিলন্ডরিং ও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারির আসামি-তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দেশে কাজের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বিএনপি কখনো চিন্তা করেছে বাংলাদেশের স্যটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে? তারা এটা কল্পনাও করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটা করেছে। তিনি বলেন, যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এসএমই ফাউন্ডেশন, প্রবাসী ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক। সব জায়গায় লোন আছে। তারা সেখান থেকে লোন নিয়ে নিজেরা কাজ করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এদিকে ওদিকে না ঘুরে কাজ করে তারা দেশের উন্নতি করতে পারে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডার আদালত রায় দিয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্টে আরেকটি রায় আছে-তা হলো বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা)-কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছে। আমাদের আমদানি পণ্যগুলো অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যখন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি, তখন বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ দুর্ভিক্ষ হবে না। তবে তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রত্যেকে নিজের গ্রামে গিয়ে যে জমি অনাবাদী পড়ে আছে সেগুলো যাতে চাষ হয়-যে কোনো কাজ হোক-গাছ লাগানো হোক। ফসল ফলানো হোক। তরিতরকারি, সবজি-যা যা দরকার চাষ করতে হবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি মুক্ত দেশ গড়ার জন্য, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক থেকে যুব সমাজ যেন দূরে থাকে।
কোনো মতেই যেন কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় তার জন্য যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে অঙ্গীকার করতে হবে। সেভাবে কাজ করতে হবে। অন্য যুব সমাজের মাঝে চেতনা গড়ে তুলতে হবে। সেই চেতনায় বাংলাদেশের উন্নতি হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি মানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না তার এই দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতার দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ঘর করে দিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবিকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুবলীগও ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দিয়েছে। করোনাকালে তারা যথেষ্ট কাজ করেছে। রোগীর চিকিৎসা, লাশ দাফন, ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজে তারা উদ্যোগী হয়েছে। ঝড়-বন্যায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন মানবতার ডাকে ছুটে গিয়েছেন।
যুবলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তরুণের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। যুবকদের আজকে দেশ গড়ার কাছে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে হবে। সে জন্য যুব সমাজকে অনুরোধ করব-আমাদের পরনির্ভরশীল থাকলে হবে না, আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এ জন্য আহ্বান করেছি-এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সংকটকালে আমি আহ্বান করেছিলাম-কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার জন্য। যুবলীগসহ সব সংগঠন-কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন। বৃক্ষরোপণের আহ্বান করেছি-যুবলীগ লাখ লাখ বৃক্ষরোপণ করেছে। এভাবে মানুষের পাশে আমাদের এখনো দাঁড়াতে হবে।
যুবলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীদের বলব যারা এখানে আছেন বা বাইরে আছেন সকলের জন্য-নিজের গ্রামে যান। নিজের গ্রামে গিয়ে সেখানে কোন জমি যেন অনাবাদী না থাকে সেটা দেখতে হবে। নিজের জমি চাষ করতে হবে। অন্যের জমিও যেন উৎপাদনশীল হয় সেই ব্যবস্থা প্রতিটি যুবলীগের কর্মীদের করতে হবে।
রিজার্ভ খরচের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাইরে থেকে সমস্ত খাবার, তেল আনতে হচ্ছে। করোনার কারণে দুটো বছর আমাদের কোনো ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আসেনি। দুই বছর পর সারা বিশ্ব উন্মুক্ত হওয়ার পর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আসছে। আমাদের রিজার্ভ তো ব্যবহার করতে হবে। তার মধ্যে আমরা ৮ বিলিয়ন ডলার বিভিন্নভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে তো হবে না। সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছি। সেটাও আমাদের মজুদ।
রিজার্ভ বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের টাকায় বিমান কিনেছি। সেটার জন্য আমরা বিমানকে লোন দিয়েছি। বিমান দুই শতাংশ সুদে সেই টাকা ফেরত দিচ্ছে। পায়রা নদী ড্রেজিং নিজেদের টাকায় করেছি। নইলে এই টাকা বিদেশী ব্যাংক থেকে নিতে হতো। সেখানে আমাদের সুদসহ ডলার ফেরত দিতে হতো। আজকে আমরা নিজেদের ব্যাংক থেকে নিচ্ছি। নিজেদের রিজার্ভ থেকে ব্যবহার করছি। তার ফলে ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। সুদের টাকাও আমাদের ঘরে থাকছে। অপচয় হচ্ছে না। এভাবে আমরা টাকা আমাদের দেশের জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করছি।
দেশের সকল যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব-উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য এখন থেকেই যুব সমাজকে কাজ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণ করতে হবে। ভূমিহীনরা ঘর পেয়েছে, আমাদের দরিদ্র মানুষ থাকবে না। বাংলাদেশ পারে আমরা তা প্রমাণ করেছি।
জাতির পিতার মতো আমিও বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। তাই তরুণ সমাজের দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আদর্শ নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সেটাই হবে সকলের প্রত্যয় ঘোষণা, সেটাই হবে প্রতিজ্ঞা।
সভাপতি মণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যুবলীগ জিয়াউর রহমানের অপশাসনের বিরুদ্ধে, স্বৈরশানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। যুবলীগ নেতা নুর হোসেন গুলির মুখে বুক পেতে দিয়েছিল খালেদা-তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বাংলার যুবসমাজ আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে যুবলীগ প্রস্তুত রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে দলীয় নেতাকর্মীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে আগামী ১৪ মাস নিরলস কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশকে গিলে খাবে- বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব খাবে গিলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যদি আরেকবার আসে সব খাবে। বিদেশী ঋণ গিলে খাবে। গণতন্ত্র গিলে খাবে। নির্বাচন গিলে খাবে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশ পর্যন্ত গিলে খাবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, খেলা হবে বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে, আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে। সবাই তৈরি হয়ে যান। প্রস্তুত হয়ে যান। জবাব দেব।
সফল আয়োজন করার জন্য যুবলীগকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, যুবলীগ কথা দিয়ে কথা দিয়ে কথা রাখে। তার প্রমাণ এটা যুব সমাসমাবেশ নয়, এটা মহাসমুদ্র। যুব জনতার মহাসমুদ্র। এদিকে সেদিক শুধু মানুষ। চারদিকে শুধু যুব জনতার ঢল। আজকের এই দিনে তাদের আমি ৫০ বার অভিনন্দন জানাই।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা বলছে ধাক্কা দিলেই নাকে সরকার পড়ে যাবে! এরা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। দেশে এমন কোন শক্তি নেই শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে পারে। তাই সজাগ থেকে যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার দল নেই। বিএনপি তারেক, ফালু, হারিছরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। বিএনপি এখন ছাগলের বাচ্চার মতো লাফাচ্ছে, কিন্তু জনগণের মন জয় করে তারা কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তবে সজাগ থাকতে হবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যুবলীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ পাবে না।
তীব্র জনস্রোত রীতিমতো জনসমুদ্র- মুখে পাল্টা কর্মসূচির কথা না বললেও, প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীতে ডাকা যুব মহাসমাবেশে শুক্রবার রাজধানীতে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি ঘটিয়ে বেশ ভালোই পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী ঐতিহ্যবাহী যুব সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ। মহাসমাবেশের প্রস্তুতি ছিল ব্যাপকই। কিন্তু কর্মসূচিতে এমন যে গণবিস্ফোরণ ঘটবে তা আয়োজকদেরও হতবাক করে দেয়।
সকাল থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ চতুর্দিকে সারাদেশ থেকে আসা এ যুবলীগের এত নেতাকর্মীর স্থান সংকুলান হবে না, এটা আঁচ করতে পেরে উদ্যানের চতুর্দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথেই শত শত মাইক টাঙিয়ে দেয় আয়োজকরা।
সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। দুপুর আড়াইটায় যুব মহাসমাবেশ শুরুর আগেই তীব্র জনস্রোতে রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ চতুর্দিকের কয়েক কিলোমিটার এলাকা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হওয়ার সময়ও বিভিন্ন স্থান থেকে জনসভায় মিছিল নিয়ে লোক আসতে দেখা গেছে।
সকাল থেকেই এ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। বেলা ১২টার আগেই শাহবাগ, মৎস্য ভবন পর্যন্ত এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকায় গড়ে তোলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে-ট্রাকে করে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন মহাসমাবেশস্থলে।
মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে সকাল থেকেই পরিবেশন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণ আর গণসংগীত। আয়োজক যুবলীগ হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হাজার হাজার সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও ছিল চোখের পড়ার মতো। মিছিলে মিছিলে কার্যত পুরো ঢাকায় যেন কিছু সময়ের জন্য থমকে যায়।
বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরুর আগেই প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এক পর্যায়ে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় মানুষের বাঁধভাঙা স্রোত নামে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন, প্রেসক্লাব নগর সর্বত্রই লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। শুধু ঢাকা আশপাশের জেলা বা ঢাকা মহানগরীরই নয়, সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাস-ট্রাকে চড়ে এসে জনসভায় যোগ দিতে দেখা যায়। দুপুর থেকেই তীব্র জনস্রোত ও মিছিলের কারণে এই পুরো এলাকায় প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয়।
উদ্যানেই জুমার নামাজ আদায় ॥ এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই অংশ নেন জুমার নামাজে। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় সেখানেই জুমার নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে সে জন্য আগেই মিম্বার তৈরি করে রাখা হয়েছিল। দুপুর ১টার দিকে ইমাম নামাজের জন্য মাইকে আহ্বান জানালে হাজার হাজার মানুষ জুমার নামাজে দাঁড়িয়ে যান। সোয়া ১টায় সবুজ ঘাসের ওপরই নামাজ পড়েন তারা।
নানা রঙের টিশার্ট-ক্যাপে রঙিন সমাবেশ ॥ মৎস্যভবন, শাহবাগ, টিএসসি, পলাশী মোড়, বকশিবাজার রোড, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার- সবখানে শুধু মানুষ আর মানুষ। শেখ মণির হাতে গড়া যুবলীগের ৫০তম জন্মদিন অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারা দেশে থেকে আসা সংগঠনটির নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষী নিজ নিজ ইউনিটের পছন্দ ও মনোনীত রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে হাজির হন।
কোনো ইউনিট লাল রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ, কোনো ইউনিট সবুজ, কোনো ইউনিট কমলা, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট নীল, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট গোলাপি, কোনো ইউনিট বেগুনি রং পরে পুরো আয়োজনকে রংধনু রঙে রাঙিয়ে দেয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাল টি-শার্ট ও টুপি পরেছিলেন। ঢাকা উত্তর যুবলীগের নেতাকর্মীদের মাথায় ছিল সবুজ টুপি ও হাতে দলীয় পতাকা। ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা কমিটির নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা রঙের টি-শার্ট ও টুপি পরে এসেছিলেন। বিভিন্ন জেলা-মহানগরের পদ প্রত্যাশীদের ছবি নিয়েও আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে অনেকে মিলিত হয় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।