এমসি কলেজ ছাত্র হাসানের দাফন সম্পন্নঃএলাকায় শোকের ছায়া

    0
    237

    “আমার বাবারে আইনা দাও। আমার বাবারে ছাড়া কেমনে দিন কাটব বলে নিহতের মায়ের কান্না”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১জুলাই,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাংগুয়ার হাওরে পানিতে ডুবে নিহত এমসি কলেজ মেধাবী ছাত্র আশরাফুল ইসলাম হাসানের (২৩) লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১১টার সময় ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হয়।

    এসময় উপস্থিত ছিলেন,ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব খাঁ,তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক,ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরস ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলী আমজাদ,ধর্মপাশা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক লুৎফুর রহমান উজ্জল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্ধ সহ এলাকার সর্বস্থরের মানুষের অংশ গ্রহনে কানায় কানায় পূর্ন হয় মাঠ। জানাযার নামাজ শেষে সেলবরস ইউনিয়নের এলাকাবাসীর সম্মিলত কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

    জানাযায়, বাবা চাঁন মিয়া সুনামগঞ্জ গনর্পূত বিভাগে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরীর সুবাধে সুনামগঞ্জের হাজি পাড়াস্থ সরকারী কোয়াটারে থেকেই স্কুল জীবন শুরু করে। উন্নত লেখা পাড়ার সুবাধে চলে আসে সিলেটে। ভর্তি হয় এমসি কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগে। পড়াশুনা ছিল মেধাবী তার জন্য সবার একটু ভাল লাগা ছিল ছিল সবার প্রিয় পাত্র। শেষ মুর্হুতে ৪র্থ বর্ষে ছিল হাসান। ৩বোন এক ভাইয়ের মধ্যে হাসান দ্বিতীয়।

    একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে বাবা চাঁন মিয়া আর মায়ের নাড়িছেড়া ধন হারানো বেদনায় বার বার মূর্চা যাচ্ছে। বার বার শুধু বলছেন আমার বাবারে আইনা দাও। আমার বাবারে ছাড়া কেমনে দিন কাটব। বাবা আমার কেমনে আমরারে ছাইড়া চলইলা গেল। কোন ভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না মায়ের মন। মায়ের আতœ চিৎকারে এলাকার এক হ্নদয় বিধারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আতœীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা নিজেদের চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। একমাত্র সন্তান কে হারিয়ে বাবা চাঁন মিয়া একবারেই হাত পা ছেঁেড় বসেছে। কারন একামাত্র সন্তান কে নিয়ে ছিল তার অনেকে স্বপ্ন সব স্বপ্ন এভাবে এক মূর্হূতে নিঃশ্বেস হয়ে যাবে কোন ভাবেই তা মানতে পারছেন না তিনি। নিহতের বাবা চাঁন মিয়া বলেন,বাবারে নিয়া অনেক স্বপ্ন ছিল আমরার সব শেষ হইয়া গেল। ভাল ছাত্র ছিল কষ্ট করে তাই লেখা পাড়া করার লাগি সিলেটে এমসি কলেজে পড়াইতা ছিলাম কেরে যে বাবা আমার হাওরে গেল না গেলে ত এমন হইত না। আমার বুকটা খালি করই দিয়া গেল। কেমনে বাঁচমো তারে ছাড়া আমরা। নিহতের তিন বোন ভাই হারানো বেদনায় মা,বাবাকে জরিয়ে চিৎকার করে শুধুই চোঁেখর জল ফেলছে। এমসি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী হাসানের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার নিজ এলাকা সেলবরস ইউনিয়নে সহ উপজেলা জুড়ে। হাসানের মৃত্যু খবর শুনে ছুঠে আসছে তার সহপাটি সহ এলাকাবাসী। সবাই নির্বাক দৃষ্টিতে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া হাসানের পরিবারের দিকে তাকিয়ে আছে আর শান্তনা দিচ্ছে পরিবারের সকল সদস্যদের কে। এভাবে অকালে না ফেরার দেশে চলা যাওয়া কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার র্দীঘ সময়ের সহপাটিরা। হাসানের সহপাটি এহসানুল হক মুন্না,অভি,অপু তালুকদার সহ সবাই ভুকভাড়া র্দীঘশ্বাস আর কান্না জরিত কণ্ঠে জানায়,হাসান আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা কোন ভাবেই মানতে পারছি না পারছি না ভাবতে। এখন ও ভুলতে পারছি না আমরা গতকাল এক সাথে ট্যাকেরঘাট,বারেকটিলা,লামকাছড়া ও টাংগুয়ার হাওরে বেড়ানো ও গোসল করার মুর্হুত গুলো। কত আনন্দ করেছি আমরা সবাই মিলে। আজ হাসান আমাদের মাঝে নেই তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজের হাতে আমাদের প্রিয় বন্ধু কে এভাবে মাটি দিতে হবে তা কখনোও ভাবি নি। আমরা আর তার সাথে কথা বলতে পার না পারব না আড্ডা দিতে ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে উঠে। নিহত হাসানের চাচাত ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও মোফাজ্জল হায়দার বলেন,হাসান খুবেই মেধাবী ছাত্র ছিল আমরা সবাই তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্নœ দেখে ছিলাম আজ সব শেষ হয়ে গেলে। সে পরিবারের সবার আদরের ছিল। এই ভাবে যে আমাদের ছেড়ে ছলে যাবে ভাবতে পারছিনা। এবার ঈদে বাড়ি আসে নি। এই ত বাড়ি আসল একবারে নিরব নিতর দেহটা। আর তার মুখে বড় ভাই ডাক শুনব না মনে হলে কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়। উল্লেখ্য,সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের গত মঙ্গলবার ঈদ উপলক্ষে সকালে সিলেট থেকে হাসান মিয়া (২৩) ও তার কলেজের বন্ধু সহ মোট ২১জনের একটি দল ট্যাকেরঘাট,টাংগুয়ার হাওর সহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসে। রাতে ট্যাকেরঘাট অবস্থান করে আজ বুধবার দুপুরে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার যোগে টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। বেড়ানোর এক প্রর্যায়ে টাংগুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের পাশে নৌকা রেখে সবাই গোসল করতে নামে। গোসল শেষে সবাই নৌকায় উঠে কাপড় পরিবর্তন করে তাহিরপুরের উদ্যোশে রওনা করে। এক সময় সবাই হাসানের মোবাইল নৌকার উপড়ে দেখতে পায় কিন্তু হাসান কে নৌকার উপরে ও ভিতরে না পেয়ে সবাই নৌকা ঘুড়িয়ে ওয়াচ টাওয়ারে কাছে যায়। সেখানে গিয়ে অনেক খোঁজা খুজির পর তারা ওয়াচ টাওয়ারে পাশেই হাসানের মৃত দেহ ডুবন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। সাথে সাথে তাকে উদ্ধার করে বিকাল সাড়ে ৫টায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তারগন থাকে মৃত ঘোষনা করেন।