আন্দোলনের সাফল্য আমার জীবনীশক্তিঃতারেক রহমান

    0
    367

     আমারসিলেট24ডটকম,০৬জানুয়ারীঃ  তারেক রহমানের ভাষায়,একতরফা নির্বাচন বর্জন করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘তামাশার নির্বাচনকে রুখে দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ একটি লক্ষ্য অর্জন করেছে মাত্র। এটি চূড়ান্ত কোনো সাফল্য নয়, চলমান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়ারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে গণতন্ত্রকামী মানুষের চেতনার প্রতিফলন ঘটানোই বিএনপির মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।’
    তিনি বলেন, “২০০৮” সালের নির্বাচন সবার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থাকার পরও বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে সংসদেও গিয়েছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা অবৈধ সরকার। অবৈধ সরকারের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়।’ রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে সেন্ট্রাল লন্ডনের ফোর সিজন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
    তারেক রহমানের মতে,বিএনপি  নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনকে প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করায় গণতন্ত্রকামী সমগ্র দেশবাসী ও ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের তৃণমূলসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এক ভয়ানক এ দুর্যোগকালীন সময় পার করছে, যেখানে ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়ের, সত্যের সাথে মিথ্যার, এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতার মোহের লড়াই চলছে।’
    তিনি আরও বলেন, “৫” জানুয়ারির প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনের দিন সরকারের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি সাহসী সেনানী, আহত হয়েছেন অসংখ্য। নির্মম নির্যাতন ও জেল-জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন অগণিত মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশ যেন আজ এক রক্তের উপত্যকা।’ রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-নিপীড়নে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
    আরও বলেন, ‘দেশের ১৬ কোটি মানুষের বড় একটি অর্জনের জন্য আর সরকারের চাপিয়ে দেওয়া পরাধীনতা, এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য পরিবার-পরিজন-সহযোদ্ধা হারানোর গভীর কষ্ট বুকে চেপে রেখেই আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে হবে।’ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও তাদের পরিবার সমূহের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আত্মত্যাগের এই স্মৃতিই হবে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত আন্দোলনের সংগ্রামী প্রেরণা। সেই আত্মত্যাগকে অর্থবহ করে তুলতে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যেকোনো মূল্যে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।’
    নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, চলমান চিকিৎসার কারণে তিনি অতীতের মতো রাজপথের আন্দোলনে শরিক হতে না পারলেও তাঁর চিন্তা-চেতনা, ভাবনা-পরিকল্পনার সবকিছুর আবর্তন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ ও চলমান আন্দোলনকে ঘিরেই। “নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আন্দোলনের সাফল্য আমার জীবনীশক্তি।” তার শারীরিক অনুপস্থিতি যেন বাংলাদেশি জাতীয়তবাদের এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তারেক রহমান তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
    তারেক বলেন, ‘দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গড়া তীব্র আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতীক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সৈনিক। মনে রাখবেন, এই গণ-আন্দোলনে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা প্রত্যেক বাংলাদেশির সমর্থন রয়েছে। বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ও গণমাধ্যম একচ্ছত্রভাবে আমাদের এই মুক্তির সংগ্রামের পক্ষাবলম্বন করছে।’ তিনি সবাইকে নিজ-নিজ এলাকায় শত প্রতিকূলতার মাঝেও সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘ইন-শা-আল্লাহ পৃথিবীর কোন শক্তির পক্ষে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।’
    ‘দেশ শিগগিরই স্বৈরাচার ও অপশাসন মুক্ত হবে’- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তারেক রহমানআরও বলেন, ‘বিশাল, নিবেদিতপ্রাণ, জনসমর্থিত বিএনপিকে কেউ অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই আন্দোলন শুধু আমাদের একার নয়। দেশের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ স্বৈরাচারীদের উৎখাত চায়। তাই একচুল পরিমাণ ছাড় না দিয়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যান।’
    প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘যারা ৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তাদের দায়বদ্ধতা কি জনবিচ্ছিন সমর্থনহীন সরকারের প্রতি, নাকি নিষ্পেষিত গণমানুষের প্রতি। দেশের অর্ধেকেরও কম আসনে অনুষ্ঠিত ন্যক্কারজনক নির্বাচনে যখন শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোট পড়ে আর সারা দেশের শতকরা ২ ভাগেরও কম মানুষ যখন ৫ বছরে একবারের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন- সেই ভোটারদের আবার প্রায় সবাই যখন হয় অবৈধ সরকারের জাল ভোটার, দলীয় কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর সদস্য- তখন দেশের জন্য নেওয়া শপথের সম্মানে হলেও আপনাদের উচিত নিজেদের কর্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ে নতুন করে ভাবার।’
    তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সরকারি দায়িত্ব পালনের অজুহাতে দেশবিরোধী শক্তির হুকুম তামিলের সুযোগ নেই। কারণ আজ সরকারপক্ষ বলে কিছু নেই। পক্ষ শুধু গণবিরোধী স্বৈরাচারী বনাম দেশের মানুষ। ভেবে দেখুন, আপনারা কোন পক্ষে থাকবেন। স্বৈরাচারীদের সূর্য অস্তগামী দেখেও যদি মানুষের পক্ষে থাকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে আপনারা কিন্তু ইতিহাসের দায় এড়াতে পারবেন না।’
    দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতিটি বাড়িকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একাত্তরে আমরা দেশকে হানাদারমুক্ত করার যে সংগ্রাম করেছিলাম সে সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। আর আজকের এই সংগ্রাম সার্বভৌমত্ব রক্ষার। সেই সংগ্রাম ছিল দেশকে হানাদারমুক্ত করার। আর আজকের এই সংগ্রাম দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার।’ তিনি বলেন, ‘দেশটা আমাদের সবার। একে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সবাইকে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। তা আমরা সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকি, আর নাই থাকি।’
    সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস আশিক ইসলাম, সাংবাদিক সালেহ শিবলী, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শরীফুজ্জামান তপন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম ক্যামব্রিজের প্রেসিডেন্ট ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক মাহদি আমিন, শরীফুল ইসলাম সবুজ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।