২৪ অক্টোবর নিয়ে অনিশ্চয়তার কিছু নেই:দীপু মনি

    0
    237

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরকী ঘটতে যাচ্ছে ২৫ অক্টোবর? দেশের সর্বত্র এখন এই প্রশ্ন। বর্তমান সরকার আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে, এমন ধারণা থেকেই এই তারিখ ঘিরে এতো আলোচনা। এদিন সরকারি দল আওয়ামী লীগ ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে। একইদিন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও রাজধানীতে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়।

    একদিকে বিরোধী দল সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। আর অন্য দিকে সরকারি দল ২৪ অক্টোবরের পরেও, অর্থাত্ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সংসদের চলতি ও শেষ অধিবেশন চালাতে চাচ্ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পাল্টাপাল্টি এই অবস্থানের কারণে ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা, জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ, উত্কণ্ঠা ও শঙ্কা।

    রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সংস্থার সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, যদি সত্যিই ২৫ অক্টোবর সরকার ও বিরোধী দল রাজধানীতে শক্তি প্রদর্শনের কিংবা বড় ধরনের মহড়ার পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে জানমালের নিরাপত্তায় প্রশাসন ওইদিন ১৪৪ ধারা জারি করতে পারে। উভয় দলকে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করা থেকে বিরত রাখতে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনে আগাম এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা করছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য অতীত উদাহরণ টেনে রাজনৈতিক সূত্রগুলো এমন আভাসও দিচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত যেকোনো একটি পক্ষ ঐদিন সমাবেশ স্থগিত কিংবা বাতিল করতে পারে। আবার সব ধারণা বা অনুমান এলোমেলো করে দিয়ে পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নিতে পারে বলেও মনে করছে কোনো কোনো সূত্র।

    বিরোধী দলসহ কেউ কেউ ধারণা করছে, ২৪ অক্টোবরের পরেই ৯০ দিনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বর্তমান সরকার একটি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপ নেবে। ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর এই বক্তব্যের কারণেই এই ধারণার অবতারণা হয়েছে । সরকারের একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্যে এই ধারণা আরও শক্ত হয়েছে। যে কারণে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বলেছেন, আমরা ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেখবো, এরমধ্যে সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে না নিলে ২৫ অক্টোবর থেকে লাগাতার আন্দোলন। সরকার ও বিরোধী দলের এমন বক্তব্যের কারণেও ২৫ অক্টোবর এখন কিছু কিছু জনগণের মধ্যে অন্যরকম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

    তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল শুক্রবার নিজ নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২৪ অক্টোবরকে ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার কিছু নেই। এটা কোনো বিশেষ দিনও নয়। কোনো কোনো মহল দিনটিকে ঘিরে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সরকারের মেয়াদ রয়েছে। এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে যেকোন দিন নির্বাচন হতে পারে। সেটি ৮০তম কিংবা ৮৫তম দিনেও হতে পারে। ২৪ অক্টোবরের পরেও সংসদের চলতি অধিবেশন চালানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিবেশন কতদিন চলবে তা নির্ধারণ করবেন স্পিকার। তার মতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংসদ চলতে কোনো বাধা নেই।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত হচ্ছে-সংসদের চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। কিন্তু এখন সরকারি দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা এরপরও অধিবেশন চালানোর কথা বলছেন। নির্বাচন না করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতেই তারা এ ধরনের কথা বলছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার ফলে জনমনেও এই শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, নির্বাচন আদৌ হবে কিনা।

    এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে। বিএনপিও একইদিন রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদন করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পল্টন ময়দান অথবা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

    পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২৫ অক্টোবর সমাবেশের নামে আন্দোলন করে ৫ মে’র মতো আরেকটি হেফাজতি কাণ্ড ঘটাতে দেয়া হবে না। ২৪ অক্টোবরের পর দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা হলে একটি নির্বাচিত সরকার তা চেয়ে চেয়ে দেখবে, এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। ‘২৫ অক্টোবর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়’-বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরও গতকাল বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি অসাড়ের তর্জন-গর্জন। দেশ চলবে সংবিধান অনুযায়ী।

    ২৫ অক্টোবর সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ করে জঙ্গি সংগঠনগুলো বেশ তত্পর রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে বোমা তৈরি করার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ধরাও পড়েছে বেশ কয়েকজন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য মিলেছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সুত্র থেকে জানা যায় । সরকারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতার স্থানগুলোতে গোয়েন্দা তত্পরতা বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে সমাবেশের আগেই ১৪৪ ধারা জারি করা হতে পারে।

    পুলিশ সদর দফতরসূত্রে জানা গেছে, সরকারি দলের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ব্যঙ্গাত্মক গান, দলীয় সংগীত ও কবিতা লেখা হয়েছে। এগুলোর সিডি তৈরি করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিরোধী দলের নেতাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। ২৫ অক্টোবরের সমাবেশে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এসব ব্যঙ্গাত্মক গান, দলীয় সংগীত ও কবিতা পরিবেশন করা হবে। এ নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘর্ষ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে।

    ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন অতিরিক্ত কমিশনার জানান, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে নজরদারি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএমপি থেকে কয়েকদিন আগে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে তল্লাশি করছে। ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের কর্মীদের দিকে পুলিশ বেশি নজর দিচ্ছে।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচনে সরকার তার যে দায়িত্ব পালন করা দরকার তা করবে। সংবিধানের আওতায়ই সব কিছু হবে।

    তিনি বলেন, সংবিধানের আওতায় যে বিষয়গুলো হবে তা নিয়ে বিরোধী দল ও সরকারি দলের মধ্যে নিশ্চয়ই আলোচনার সুযোগ আছে। ২৪ অক্টোবর নিয়ে অনিশ্চয়তার কিছু নেই। এটি কোন বিশেষ দিন নয়। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ। তার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। আর ৯০ দিনের শুরু হচ্ছে ২৪ অক্টোবর। এছাড়া এই দিনের আর কোন গুরুত্ব নেই। এই ৯০ দিনের মধ্যে যে কোন দিন নির্বাচন হতে পারে। সেটি ৮০ কিংবা ৮৫তম দিনেও হতে পারে। তাতে কোন ধরনের সমস্যা নেই। কিন্তু একটি মহল এই দিনটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।  সূত্র: ইত্তেফাক