যাত্রী সংকটে খুলনা-কলকাতা রুটের ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’

    0
    580

    বেনাপোল থেকে এম ওসমান : খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে সরাসরি চলাচলকারী ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেসে যাত্রী দিন দিন কমতে শুরু করেছে। ১০টি কোচের এই ট্রেনে ৪৫৬ টি আসন থাকলেও যাতায়াত করছে ১শ’ থেকে ১২০ জন যাত্রী।

    অথচ বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করে থাকে। দুই দেশে তেমন কোনো প্রচার প্রচারণা না থাকায় এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট দুটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি করায় যাত্রীদের মাঝে অনিহা দেখা দিয়েছে। তবে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

    রেল কর্তৃপক্ষের রেল পরিচালনার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে যাত্রী স্বল্পতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এ রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। তাদের বক্তব্য, যশোর ও বেনাপোল রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রি না করা, যশোর ও বেনাপোল রেলস্টেশনে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য স্টপেজ না দেয়া, অন্যদিকে সপ্তাহে মাত্র এক দিন এ রুটে ট্রেন চলাচলসহ বিভিন্ন কারণ সামনে আসছে যাত্রী কম হওয়ার পেছনে।

    এছাড়া ভাড়ার পরিমাণও যাত্রী স্বল্পতার অন্যতম বড় একটি কারণ। ১২০ কিলোমিটার সড়কে এসি সিটে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ভ্রমণকরসহ ২ হাজার টাকা ও এসি চেয়ারে নেয়া হচ্ছে ভ্রমণকরসহ ১ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে একজন পাসপোর্ট যাত্রীর কলকাতা যেতে ভ্রমণকরসহ খরচ হয় মাত্র ৬০০ টাকা।

    বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ছেড়ে এসে দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনায় পৌঁছে। এরপর খুলনা থেকে দুপুর দেড়টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে কলকাতা পৌঁছে।

    এ ব্যাপারে যশোর নাগরিক কমিটি যশোর রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রি ও যাত্রী ওঠানো-নামানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাতেও তেমন একটা সাড়া মেলেনি রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

    খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেসের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর। গত ৭ মাসে ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে। ফলে লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষকে। লোকসানের বোঝায় যেন বন্ধ হয়ে না যায় খুলনা-কলকাতার বন্ধন মৈত্রী ট্রেন।

    ভারতীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত খুলনা ও কলকাতা ছাড়া কোথায়ও স্টপেজ বা টিকিট বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন রেলস্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হলে অন্যান্য স্টপেজে যাত্রী উঠানামা ও টিকিট বিক্রির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

    এ রুটে চলাচলকারী বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী আসাদুল হক বলেন, ভারতীয় কাস্টমসে যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ সম্প্রতি বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাত অবস্থান বাধ্যতামূলক করায় এবং সপ্তাহে এই রুটে এক দিন বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চালু থাকায় ট্রেনে করে কেউ আর যাতায়াত করতে চায় না। সপ্তাহে ২-৩ দিন ট্রেন চলাচল ও ভাড়ার পরিমাণ কমালে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

    ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী মনতোষ বসু খুলনা-কলকাতা রুটে ট্রেন চলাচলের প্রচার না হওয়া, নির্দিষ্ট দুটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি করায় যাত্রীরা ট্রেন যাতায়াতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করেন। অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি ও স্টপেজ বাড়ালে যাত্রী বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

    বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৭ নভেম্বর খুলনা-কলকাতার মধ্যে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হয়। বন্ধন এক্সপ্রেসে ১০টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও পাওয়ার কার দুটি। বাকি আটটি কোচে ৪৫৬টি আসন রয়েছে। সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। গত ৭ মাসে ৩ হাজার ৪৪৫ জন যাত্রী কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসেছে এবং বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ জন যাত্রী কলকাতায় গেছে। নিরাপদে ও সুষ্ঠুভাবে যাত্রী চলাচল করার পরও যাত্রী সংখ্যা দিন দিন কমছে। বন্ধন এক্সপ্রেসটি সপ্তাহে একাধিক দিন চলাচল করলে এবং যশোর ও বেনাপোলের মানুষের জন্য টিকিট বিক্রি ও স্টপেজ দেয়া হলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি জানান।

    বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, বন্ধন এক্সপ্রেসে যেসব যাত্রী সরাসরি যাতায়াত করেন, আমরা তাদের ভালো সার্ভিস দিচ্ছি। আপাতত যাত্রীসংখ্যা একটু কম। আমরা যত দ্রুত সম্ভব ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করি। তবে ট্রেনে খরচ একটু বেশি পড়ে। খুলনাসহ আশপাশের লোকজন ট্রেনে যাতায়াত বেশি করছেন।

    বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার বলেন, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের বেশির ভাগ যাত্রী হয় রোগী। না হয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। তাই কাস্টমসের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সেবা দেয়া হয়। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে হল রুমে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত সম্পন্ন করে থাকি আমরা।