মোবাইল ব্যাংকিং গাইডলাইনে কিছু সংযোজন হচ্ছে

    1
    282

    আমার সিলেট ডেস্ক, ২৪ আগস্ট : বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি মাসেই লেনদেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এর মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১২৫ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই লেনদেনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৬টি ব্যাংককে অনুমোদন দিলেও ১৮টির মাধ্যমেই এই লেনদেন হচ্ছে। সার্ভিস চার্জে কোনো ঊর্ধ্বসীমা আরোপ না করলেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য টিকিয়ে রাখতে গাইডলাইনে নতুনভাবে কিছু ধারা সংযোজন হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

    দরিদ্র ও ব্যাংকিং সেবা-বঞ্চিত বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা, দেশের ভেতরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে ও দ্রুত টাকা পাঠাতে ২০১০ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কার্যক্রমের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো টাকা দ্রুত, সহজ ও নিরাপদে গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছানো এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ সহজ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সুযোগ দেয়া হয়। এ জন্য ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি গাইডলাইনও জারি করা হয়। ২০১০ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা ও ইস্টার্ন ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়।

    এরপর বিভিন্ন সময়ে ১৫টি ব্যাংক অনুমোদন লাভ করার পর গত জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সর্বশেষ অনুমোদন লাভ করে এক্সিম ব্যাংক।গত জুলাই পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে ২৭টি ব্যাংক এবং আরো ২টি ব্যাংক আবেদন করেছে অনুমোদনের জন্য। এর মধ্যে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রায় ৮৫ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে খোলা হিসাবের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৬৬ লাখ। এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বিকাশের হিসাব সংখ্যা। এই সব হিসাব নম্বরের মধ্যে গড়ে ৫ লাখ হিসাবে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সার্ভিস চার্জে যে যেভাবে পারছে তা আদায় করছে। বিকাশ লেনদেন পরে শুরু হলেও সবার আগেই এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি চার্জ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    শুরুতে বিকাশকে প্রতি হাজার টাকা লেনদেনে সাড়ে ১৮ টাকা (১ দশমিক ৮৫ শতাংশ) সার্ভিস চার্জ নিতে বলা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করে অধিকাংশ এজেন্ট প্রতি হাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে চার্জ আদায় করছে।মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালায় স্পষ্টভাবে সব কিছু উল্লেখ আছে। বিকাশের ক্ষেত্রে প্রথমে সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রতি হাজারে সাড়ে ১৮ টাকার কথা উল্লেখ করা হলেও এখন কোনো ঊর্ধ্বসীমায় বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক ব্যাংকই মোবাইল ব্যাংকিং শুরু করেছে।

    কাজেই যেখানেই কম চার্জ নেয়া হবে গ্রাহকরা সেখানেই যাবেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, সংক্ষুব্ধ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত চাঁদাবাজি, হুমকি দাতা, অবৈধভাবে অর্থ আদায়কারী, ব্যাংক হিসাব নম্বরবিহীনদের লেনদেন হতে না দেয়াসহ কিছু ব্যাপার শিগগিরই গাইডলাইনে সংযুক্ত করা হবে। বিকাশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কালাম কাদের বলেন, কোনো এজেন্ট প্রতি হাজারে সাড়ে ১৮ টাকার বেশি সার্ভিস চার্জ নিতে পারে না। কোনো এজেন্ট বেশি নিলে তার এজেন্টশিপ বাতিল করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

    গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দ্রুত ও কম খরচে লেনদেন এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক শাখা, এজেন্ট, এটিএম, মোবাইল আউটলেট এর মাধ্যমে ইউলিটি বিল, বেতন ভাতা, পেনশন, সরকারের অনুদান প্রদান যেমন-বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও ব্যক্তি কর্তৃক সরকারের অর্থ পরিশোধ যেমন-কর পরিশোধ সংক্রান্ত সেবা প্রদান সহজতর করা সম্ভব হয়েছে।

    তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমানো তথা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়েছে। এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহরের টাকা গ্রামে যাচ্ছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য টিকিয়ে রাখতে গাইডলাইনে নতুনভাবে কিছু ধারা সংযোজন হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।