সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার শতাধিক গ্রামে বৃহস্পতিবার ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হচ্ছে

    1
    454

    হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া মাদ্রাসার মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ জানান, তারা হানাফি মাযহাবের অনুসারী, তাই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ পালন করেন।

    ঢাকা, ০৮ আগস্ট : মধ্যপ্রাচ্যের আরবদেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার শতাধিক গ্রামে বৃহস্পতিবার ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। তবে এসব গ্রামের বিভিন্ন পীরের অনুসারীরা বরাবরই রোজা, ঈদ, শবে-বরাত, শবে-মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে। চাঁদপুরের সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মো. আরিফ চৌধুরীর অনুসারিরা সকালে রাজধানীর পল্টনে ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এতে ইমামতি করেন শাহ সুফি খাজা বাকি বিল্লাহ।

    তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও চাঁদ দেখা গেলেই একসঙ্গে রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন তারা। সে অনুযায়ী সারা দেশের ২৫ জেলার প্রায় এক কোটি মুসলমান বৃহস্পতিবার ঈদ পালন করছেন বলে দাবি করেন তিনি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় ৩০টি গ্রামে বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।

    দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দীর্ঘদিন ধরেই একদিন আগে ঈদ পালন করে আসছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে মির্জাখীল দরবার শরীফে ঈদের মূল জামাত শুরু হয়। ইমামতি করেন মাওলানা মাকসুদুর রহমান। পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার ত্রিশটি গ্রামে ঈদ উদযাপন হচ্ছে ।

    স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, সাতকানিয়ার মির্জাখীল, চরতী, সুইপুরা, গাটিয়া ডেঙ্গা, চন্দনাইশের হারালা, কাঞ্চননগর, বাদামতল, পশ্চিম এলাহাবাদ, বাইনজুরি, হারলা, কেশুয়া, কানাইমাদারী, সাতবাড়িয়া, দোহাজারি, বরকল, বাঁশখালির চাম্বল, কালিপুর, শেখের খীল, ভাদালিয়া, হাছনদ-ী, চর বরমা, আলি নগর, পটিয়ার বাহুলী, পারিগ্রাম মোল্লা পাড়া, আলমদার পাড়া, হাইদগঁও, আনোয়ারার বরুম ছড়া, তৈলার দ্বীপসহ আরো কিছু গ্রামের মানুষ এদিন ঈদ করছে।

    এছাড়া চকরিয়া টেকনাফ, মহেষখালি, হ্নীলা, কুতুবদিয়া, আলিকদম ও সীতাকুন্ডের মাহমুদাবাদ এলাকাতেও  দরবার শরীফের অনুসারিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।

    জানাযায়, প্রায় দুইশ বছর আগে সাতকানিয়ার মীর্জার খিল গ্রামে হযরত মাওলানা মোখলেসুর রহমান জাহাগিরি (র.) দরগাহ শরীফ স্থাপন করেন। সে সময় থেকেই হানাফী মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী রোজা ও ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পালন করে আসছেন। ভোলাতেও ১৪টি গ্রামের ১০ হাজার পরিবার বৃহস্পতিবার ঈদ করছে। জেলার বোরহানউদ্দিনের মুলাইপত্তন গ্রামের মজনু মিয়ার বাড়িতে সকাল ১০টায় ঈদের প্রধান জামাত হয়। এছাড়া চৌকিদার বাড়ি, পঞ্চায়েত বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঈদের জামাত হয়।সুরেশ্বর দরবারের পীর ও সাতকানিয়া পীরের অনুসারীরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে জেলার বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও তজুমদ্দিন উপজেলার ১৪টি গ্রামে ঈদ পালন করছে।

    চাঁদপুরে অর্ধশত গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫০টি গ্রামের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা হামীদিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঈদ জামাতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মো. আরিফ চৌধুরী।

    চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, বলাখাল, মনিহার, ভোলাচোঁ, জাক্নি, সোনাচোঁ, প্রতাপপুর, বাসারা; ফরিদগঞ্জ উপজেলার উভারামপুর, উট্তলী, মুন্সিরহাঁট, মূলপাড়া, বদরপর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচর, বালুথুবা, কাইতাপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, ষোলা, হাঁসা, গোবিন্দপুর; মতলবের দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং শাহরাস্তি ও কচুয়ার কয়েকটি গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।সৌদী আরবের সাথে মিল রেখে বৃহস্পতিবার পাবনার সুজানগর উপজেলার একটি গ্রাম ৈর বাসিন্দারা ঈদ উদযাপন করছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও বদনপুর গ্রামের ৮০/৮৫টি পরিবার সৌদী আরবের সঙ্গে একই দিনে ঈদ উদযাপন করেছে।সেখানে সকাল সাড়ে ৯টায় বদনপুর শা’নকিবীয়া দরবার শরীফে ঈদের জামাত হয়।পাকিস্তানের কাদেরীয়া তরিকার অনুসারী বদনপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ সুফি আরশেদ আলম জানান, সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মোবারক হোসেন তাদের ঈদের জামাতে ঈমামতি করেন। জানাযায়, মুন্সীগঞ্জ ৭টি গ্রামে ঈদ হচ্ছে। শিলই ঈদগাঁহে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের জামাতে প্রায় ৫শ’ লোক অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন হাজী ডা. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখেই রোজা শুরু ও ঈদ উদযাপন করি।”স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জাহাগীর তরিকার প্রায় ৫ হাজার মানুষ এদিন ঈদ করছে।

    ঝিনাইদহ  জেলার, হরিণাকু- উপজেলার ফলশী, শিতালী, ভালকী, কুলবাড়ে ও পার্বতীপুর গ্রামের ৩৫টি পরিবার বৃহস্পতিবার সকালে ঈদের নামাজ পড়েন। বরগুনায়  হরিণাকু-ু পৌরসভার ঋষিপাড়ায় নুরু রহমানের বাড়ির উঠানে সকাল ৮টায় এই ঈদের জামাত হয়।

    জানাযায,কাদেরিয়া চিশতিয়া তরিকা ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অনুসারীদের ১০টি গ্রামের আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করছেন।সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গৌরীচন্না ইউনিয়নের ধুপতি, গৌরীচন্না, পাজরাভাঙ্গা, কালিরতবক, আমতলা, বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বকুলতলী, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী, কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া, পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের সিংড়াবুনিয়া ও কাকচিড়া গ্রামে ঈদ হচ্ছে বৃহস্পতিবার।

    বরগুনার পাজরাভাঙ্গা, বেতাগীর বকুলতলী মালেক চেয়ারম্যানের বাড়ি, আমতলীর গোজখালী শাহসাবের বাড়ি ও কুকুয়ায় সকালে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

    দিনাজপুর জেলার চার উপজেলায় বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। দিনাজপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা রউফ উদ্দিন। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শতাধিক মুসলমান সেখানে নামাজ আদায় করেন।এছাড়া বিরলের ভাড়াডাঙ্গী বাজার, চিরিরবন্দরের সাইতাড়া, কাহারোলের রসুলপুর ও গড়েয়া বাজারে ঈদের জামাত হয়। নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার লামাপাড়ায় ঈদের নামাজ হয় বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টায়।

    হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া এতিম খানা ও হেফজ খানা মাদ্রাসায় ‘জাহাগিরিয়া তরিকার’ অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এদিন ঈদ করছেন। গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরাতন ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি জামাতে অংশ নিতে ফতুল্লায় আসেন।

    এ জামাতে ইমামতি করেন হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া মাদ্রাসার মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ। তিনি জানান, তারা হানাফি মাযহাবের অনুসারী, তাই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ পালন করেন।