শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ    

    2
    847

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৯জুলাই,জহিরুল ইসলামঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহি  একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ। ২০১৪ সালে অধ্যক্ষ প্রফেসর সমীর চন্দ্র সাহার অবসরের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন সহকারী অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ। তারপরই  ২০ জুলাই ২০১৪ ইং তারিখে যোগদান করেন শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানা। আর যোগদানের পর থেকেই শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজকে দূর্নীতি ও অনিয়মের পাহাড় হিসেবে গড়ে তোলেছেন অধ্যক্ষ মনোয়ারা এমন অভিযোগ স্থানিয়দের।

     অভিযোগ থেকে জানা যায়, যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় কলেজে তার মনগড়া নিয়ম-নীতি, দূর্নীতি এবং কলেজ ফান্ড থেকে নিয়ম-বর্হিভূত ভাবে লুটেপুটে খাওয়ার এক তান্ডব লীলা। এ যেন দেখার বা প্রতিবাদ করার কেউ নেই। আর থাকবেই বা কেমন করে কারণ তার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে, অনেক সময় ব্যয় করে দেখা করতে হয়। মনে হয় পুরো কলেজটাই তার ব্যক্তিগত সম্পদ। ২০১৫ সনের এইচএসসি ভর্তি সংক্রান্ত বা কোন বিষয়ে অভিভাবক মহল তার সাথে দেখা করতে চাইলে ও কথা বলতে গেলে সন্তুষ্ট জনক আচরণ করেন না এমনকি দেখা করতে হলে ও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

    কোন মন্ত্রীর সাথে ও দেখা করতে হলে এত কষ্ট হয় না। কিন্তু উনার সাথে দেখা করতে হলে অনুমতি ও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি এই প্রতিবেদক ও কয়েকজন সংবাদকর্মী উনার সাথে কথা বলতে গেলে সংবাদ  কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ সহ এব্যাপারে পাত্তা দিতে চান না তিনি। এব্যাপারে সরকারি তথ্য দিতে তিনি নারাজ।

    অথচ বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন করে যে কোন তথ্য সহজে জনগন পাওয়ার জন্য। কিন্তু এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাধারণ জনগন কীভাবে তথ্য পাবে। গণতন্ত্র ন্যায় বিচার আইনের শাসন, সচ্চতা,জবাবদিহিতা, সততা, নিরপেক্ষতা সকলের সমঅধিকার। অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানার এসব কর্মকান্ডের ব্যাপারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীবৃন্দরা অনেক কিছু জানলেও মুখ খুলতে রাজি নন কেউ। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  অনেকের কাছ থেকে তার কৃর্তিকলাপ সমূহ।

    বিনা ভাড়ায় সরকারি আবাসস্থলে বসবাসের অভিযোগঃ

    চাকুরীবিধি মোতাবেক কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসায় কিংবা প্রতিষ্ঠানে কোনো কক্ষে বসবাস করার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানা কলেজের একটি কক্ষকে আবাসস্থল বানিয়ে সেখানে বিনা ভাড়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছেন। বিধি মোতাবেক সরকারি আবাসস্থল থাকলে সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাসা ভাড়া বাবদ প্রাপ্য ভাতা কর্তন করতে হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানা বিধি বিধান তোয়াক্কা না করে সরকারি অফিসে থাকছেন, একইসঙ্গে প্রতিমাসে বাসা ভাড়া বাবদ ১২.৪৬০টাকা উত্তোলন করছেন- যা রীতিমতো বে-আইনি এবং চাকুরি বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

    ব্যাক্তিগত কাজের লোককে কলেজ তহবিল থেকে বেতন প্রদানের অভিযোগঃ

    অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানা ব্যক্তিগত কাজের জন্য এমনকি রাতে দেখা শোনা করার জন্য  একজন কাজের লোক রেখেছেন। উক্ত কাজের লোক কলেজের কোনো কর্মচারী নয়, একান্তই অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত। (মাউশি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালক ( ডিজি) এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য সচিব ও সদস্য সকল বিভাগের প্রধানকে উনি না জানিয়ে বা অবগত না করে নিজের কাজের লোকের বেতন কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতি মাসে ২.০০০ টাকা দিচ্ছেন । জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করছেন কলেজ তহবিল থেকে যা কোন ভাবেই বিধি সম্মত নয়।

    কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগঃ 

    গত ১৪ই মে বৃহস্পতিবার রাতের আধারে কম্পিউটার অপারেটর তানভির নামে একজনকে নিয়োগ প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম-বর্হিভূত। নিয়ম অনুযায়ী কম্পিউটার অপারেটর পদে তিন জনের আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানা নিয়োগ কমিটি গঠন না করেই প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই বাছাই না করে একাডেমীর কাউন্সিলর এর অনুমোদন ছাড়াই এমনকি ঐ অপারেটরের বেতন ৪৫০০(চার হাজার পাঁচশত) টাকা ধরা হয়। নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন এ যেন একাষ্কিকা নাটকের ম শালা। আর বাকি সবাই হচ্ছেন নাটকের দর্শক।

    অর্থলোলুপ কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের অভিযোগঃ 

    অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা অধ্যক্ষের আস্কারা ও যোগ সাজেশে এরা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে চলেছেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে ৫টি অনার্স বিভাগে ( হিসাববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন ও গণিত) প্রথমবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ফরমপূরন কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়। হিসাববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন ও গণিত বিভাগের বিধি মোতাবেক উক্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ করলে ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান জনাব ফজলূর রহমানের নির্দেশে ৬৩ জন আবেদন কারীর কাছ থেকে জন প্রতি ৫০ টাকা করে অর্থ  রশিদ ছাড়া আদায় করা হয়। এই বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্ত শিক্ষকবৃন্দ উক্ত অর্থ অফিসে জমা করেন। বে-আইনিভাবে আদায়কৃত এই অর্থের ব্যাপারে অধ্যক্ষ মহোদয় ওয়াকিবহাল আছেন। কিন্তু অর্থ কেলেংকারীর দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। এমনকি তাদেরকে কোনো শোকজ নোটিশ ও প্রদান করেননি। কারণ অর্থলোলুপ এসব কর্মকর্তা অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

    স্বশরীরে উপস্থিত না থেকেও অবমুক্তির অভিযোগঃ 

    বাংলা বিষয়ক প্রভাষক কানিজ লায়লা ৩৩তম বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে যোগদান করেন। জানুয়ারীর (২০১৫) মাঝামাঝি সময়ে কানিজ লায়লা অধ্যক্ষ মহোদয়কে মৌখিকভাবে অবহিত করে স্বামীর কর্মস্থল খুলনায় গিয়ে শ্রীমঙ্গলে আর ফেরেন নি। গত ২২ জানুয়ারী তাঁর বদলীর আদেশ হয় ২৫ জানুয়ারী কানিজ লায়লার পরিবর্তে তার স্বামী বদলীর আদেশ নিয়ে অধ্যক্ষ মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেন। ২৬ জানুয়ারী কানিজ লায়লা অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ থেকে অবমুক্ত হন। উল্লেখ্য ঐ দিন কানিজ লায়লা স্বশরীরে কলেজে উপস্থিত ছিলেন না, ছিলেন তার স্বামী। এমতাবস্থায় অধ্যক্ষ মহোদয় কোন বিধির বলে অবমুক্ত করলেন। কাণিজ লায়লার অনুপস্থিতির বিষয়ে কয়েকজন কলেজ শিক্ষক এবং কর্মচারীবৃন্দ অবগত আছেন।

    দায়িত্বে অবহেলা ও খারাপ আচরণের অভিযোগঃ 

    একজন প্রতিষ্টানের প্রধান হিসেবে তাঁর অনেক দায়িত্ব কিন্তু দায়িত্বের পিছনে না ছুটে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সাথে খারাপ আচরণ ও ব্যক্তি স্বার্থে এমনকি সরকারি নিয়মনীতি লঙ্গন করাই উনার একমাত্র কাজ। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি এমন একজন অধ্যক্ষ থাকেন, তাহলে দেশ, জাতি বা শিক্ষাখাতের কখনও উন্নয়ন কি হবে? প্রশ্নটি (মাউশি) এর নিকট। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন হবে  এবং সরকারের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করেন। অভিযোগের  ব্যাপারে  অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোয়ারা সুলতানার  সেল ফোনে  বার বার যোগাযোগ  করার চেষ্টা করলেও তিনি  রিসিভ করেননি।