পেট্রোল বোমায় দগ্ধ গরু রাখাল খোরশেদ:মৃত্যুর কাছে হার মানলেন

    1
    290

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬মার্চ,এম ওসমানঃ শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় আবারও শোকের মাতম। চাঁদপুরে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে গরু রাখাল খোরশেদ (৩২)‘র মৃত্যু। ৮ দিন শরীরে অসহ্য পোড়া যন্ত্রনা নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা  লড়ে অবশেষে গত বুধবার ১ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় সে। বৃহস্পতিবার রাতে লাশ শার্শার বাগআঁচড়ার বাড়িতে পৌছানোর পর স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে উঠে। এসময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। তার অকাল মৃত্যুতে বাগআঁচড়াসহ আশে-পাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে স্তব্দ হয়ে যায় সবাই। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ খোরশেদকে এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। তার বিভৎস লাশ দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলে এবং অপরাধীদের ধিক্কার জানাতে থাকে। একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি খোরশেদ অভাব অনাটনের সংসারে দিন মজুরীসহ যখন যে কাজ পাই সেই কাজ করে থাকে। স্ত্রী সন্তানসহ সংসারের সবাইকে নিয়ে অতি কষ্টে দিন আনে দিন খাই ভাবে জীবিকা নির্বাহ করত।

    গত ১৭ মার্চ মঙ্গলবার বাগআঁচড়া সাতমাইল পশু হাট থেকে গরু রাখাল হিসাবে ট্রাকে যাওয়ার জন্য স্ত্রী আয়শা খাতুনসহ পরিবারের সকলের কাছ থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু সে নিজে বা তার পরিবারের কেউ জানতো না যে এ যাওয়াই তার শেষ  যাওয়া। ৮/৯ দিন পর সে বাড়িতে ফিরলো তবে জীবিত নয় পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হওয়া বিভৎস লাশ হিসাবে। ১৮ মার্চ চাঁদপুরের চান্দ্রা চৌরাস্তায় দূর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমায় ঐ ট্রাকে থাকা চালক বাগআঁচড়া বাগুড়ী বেলতলা এলাকার সুরত আলী মোড়লের ছেলে জাহাঙ্গীর ঘটনা স্থলেই মারা গেলেও মারাত্বক দগ্ধ হয় খোরশেদসহ তিন জন। এদের মধ্য ট্রাকের মালিক ঝিকরগাছার উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের সাহাবুদ্দীন খন্দকারের ছেলে শরিফ খন্দকার মারা যাওয়ার পর মৃত্যুর মিছিলে খোরশেদের নাম যোগ হয়। ৮ দিন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলো সে।

    আতœীয় স্বজন ও প্রতিবেশিরা জানায়, ৪ ভাই ৪ বোনের মধ্য সবার ছোট সদা হাস্যজ্জ্বল খোরশেদ বাগআঁচড়া গ্রামের ভ্যান চালক আব্দুস সোবহানের মেয়ে আয়শা খাতুনকে বিয়ে করে শ্বশুরের দেওয়া ১ কাঠা জমিতে টিনের ছাপড়ি বেধে বসাবাস করত। তাদের একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান তুষার বাগআঁচড়া ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।

    নিহত খোরশেদের অসহায় স্ত্রী আয়শা খাতুন জানান, দীর্ঘদিন অবরোধ হরতালের কারণে পরিবারে ব্যাপক অভাব দেখা দেয়। তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও সহ পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঋন নিয়ে দায়-দেনা গ্রস্থ হয়ে পড়ে সে। অভাবের তাড়নায় স্ত্রী সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পেটের জ্বালায় সে বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুহাট থেকে গরু রাখালের কাজ নিয়ে চট্টগ্রাম যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে চাঁদপুরে চান্দ্রা চৌরাস্তায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার দুপরে তার মৃত্যু ঘটে। স্ত্রী, ছেলে, শ্বশুর-শাশুড়িসহ এলাকাবাসীরা এই অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসন, সরকারী-বেসরকারী দ্বাতা সংস্থাসহ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।