আবার শাহবাগে শামিল হয়েছে জনতা, দাবি উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির

    1
    679

    ॥ আব্দুল মজিদ ॥                     

    জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সরকারকে বেঁধে দেয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার বিকালে স্বাধীনতা দিবসে গণজাগরণ মঞ্চের মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সমাবেশ হয়। Shahbag somabesh

    এক মাস বিরতি দিয়ে আবার শাহবাগে শামিল হয়েছে জনতা, স্লোগানে স্লোগানে দাবি উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির। 

     ‘আল্টিমেটাম শেষ হল, সরকার কী করল’- স্লোগানে উচ্চকিত সমাবেশে বিকাল ৪টা থেকে বক্তব্য রাখছেন ছাত্রনেতারা। মূলমঞ্চে সারিগান পরিবেশন করেন টাঙ্গাইল থেকে আসা শিল্পীরা।

    যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে সোমবার মহাসমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ।

    দুপুর থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে থাকে বিভিন্ন সংগঠন।

    মিছিলকারীদের হাতে থাকা প্লাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল- ‘পার্লামেন্টে বিল আন, জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ কর’/ ‘আল্টিমেটাম শেষ হল, সরকার কী করল’/ ‘জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ চাই’/ ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও চাই’/ ‘শাহবাগের গর্জন, জামায়াত-শিবির বর্জন’ স্লোগান।

    মিছিলের সামনের ব্যানারে লেখা ছিল- ‘জামায়াতের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তদন্ত কমিশন গঠন কর, রাষ্ট্রায়ত্ত কর’।

    শাহবাগ মোড়ে, যা এখন প্রজন্ম চত্বর নামে পরিচিত, মঞ্চ তৈরি হয়েছে দক্ষিণ দিকে মুখ করে, চারুকলা ছাড়িয়ে গেছে সমাবশের বিস্তৃতি।

    সমাবেশ শুরুর আগে দুপুর ১টায় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে জমায়েত হয় আন্দোলনকারী ১৯টি সংগঠন।

    বিকাল ৩টায় মূলমঞ্চে সারিগান পরিবেশনের মাঝেই কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে ১৯ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে মঞ্চের সামনের মহাসমাবেশস্থলে আসে।

    এই ১৯ সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, গণরায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্কোয়াড, আমরা, শহীদ রুমী স্কোয়াড, জেগে আছি, বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ, ফাঁসির মঞ্চ, মুভিয়ানা, রাস্তা, অর্বাক, ম্যাজিক মুভমেন্ট, ঘাসের কেল্লা, আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা-সর্বজন, আদিবাসী ফোরাম, সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও তীরন্দাজ।

    গত ২১ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করতে সরকারকে সময় বেঁধে দেয় গণজাগরণ মঞ্চ।

    বেঁধে দেয়া সময় হলেও এখনো জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

    দাবি পূরণ না মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

    যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে তার ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে একদল তরুণের অবস্থান কর্মসূচি দেশব্যাপী গণজাগরণের সৃষ্টি করে।

    যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে সৃষ্ট এই প্রতিবাদ দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়ার পর জাতীয় সংসদে আইন সংশোধন করে সরকার ও আসামি পক্ষের আপিলের সমান সুযোগের বিধান যোগ করা হয়।

    একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার গণজাগরণ মঞ্চের দাবির মুখে পরে সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কোনো দল বা সংগঠনের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিধানও যোগ করা হয়।

    গণজাগরণ মঞ্চ একে আন্দোলনের অর্জন হিসেবেই দেখছে।

    পরে ২১ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নিষিদ্ধে সময় বেঁধে দেয়াসহ ৬দফা দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে।

    প্রজন্ম চত্বরে ওইদিন লাখো মানুষের সমাবেশে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১৭ দিনের টানা অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি টানা হয়। তবে নানা কর্মসূচি অব্যাহত ছিল।

    আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত তিনজনের মামলার রায় হয়েছে, যার মধ্যে কাদের মোল্লা ছাড়া বাকি দুজন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আবুল কালাম আজাদ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।