পরকীয়া বিবাহিত জীবনে অশান্তির অন্যতম কারন

    1
    506

    আমারসিলেট24ডটকম,০ডিসেম্বরঃ মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক আকদ বা বিবাহ।আর এই বিবাহের মত চিরবন্ধনের সম্পর্ক ইদানিং কেন যেন ঠুনকো হয়ে গিয়েছে। যদি দু/একটি বিষয়ে মতের অমিল হয়, তবেই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অনেক দম্পতি। কেউ কারো জন্য কিছুই ছাড় দিতে রাজি নন ইদানিংকার দম্পতিরা। তাই বিয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কও চোখের পলকে ভেঙে দিচ্ছেন অনেকেই। এছাড়া যারা বিবাহবিচ্ছেদে যেতে পারছেন না বা যেতে চাচ্ছেন না তাদের মধ্যে অনেককেই পরকীয়ার মত অবৈধ একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।এ ক্ষেত্রে দুর্বল চিত্তের অধিকারী পুরুষ বা মহিলার যে কোন একজন বা কোন কোন সময় দেখা যাচ্ছে উভয়েই জড়িয়ে পড়েছে পরকীয়ার মত অবৈধ একটি সম্পর্কে।তবে এর মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ কারণ যে নেই তাও বলা যাবে না ।

    যে ভাবেই হোক বা কারণেই হোক পরকীয়ার সম্পর্ক একটি বিষাক্ত সম্পর্ক। একটি সুন্দর হাসিখুশি সুখের সংসার নিমিষেই গুঁড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে এই পরকীয়ার সম্পর্ক। কেউ নিজের ইচ্ছায় এই বিষাক্ত সম্পর্কের পথে পা বাড়ান আবার কেউ মনের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন। মনের মত স্বামী/স্ত্রী না পেলে অনেকে সচেতন ভাবেই পরকীয়া করেন। আবার, ঘরের স্বামী/স্ত্রীর কাছ থেকে অবহেলার শিকার হয়ে মনের অজান্তেই অন্য কারো সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। পরকীয়ার বিষ সংসারে ঢুকলে সুখ শান্তি কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। বিয়ের মত একটি পবিত্র বন্ধনকেও বিষাক্ত মনে হয় তখন।কিন্তু কিভাবে বুঝবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী কোন পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়েছেন কিনা? আসুন জেনে নেয়া যাক কি কি লক্ষনে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার স্বামী/ স্ত্রী পরকীয়া করছেন কিনা।
    সঙ্গী যদি ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েন।কেন আসক্ত এর যুক্তিসঙ্গত দিক আছে কি না ? সঙ্গী ফোনের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করছেন সেদিকে নজর রাখুন। একসাথে বসে থেকে বা ঘুরতে গেলে যদি তিনি ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন- তাহলে তা নিশ্চিতভাবে অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত বহন করে। এছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়ে তাকে যদি ফোনালাপে ব্যস্ত পাওয়া যায় তাহলেও বিষয়টি লক্ষণীয়। অনেকে বলতে পারেন কাজের প্রয়োজনে মানুষ ফোন বেশি ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন, কাজের প্রয়োজনে ফোনালাপ এবং কারো সাথে প্রেমময় ফোনালাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্য বোঝার মত ক্ষমতাও বিবাহিত প্রত্যেক মানুষের থাকা উচিত। শুধুমাত্র ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর দিতে হবে।তিনি যদি আপনার ও পরিবারের পেছনে কম সময় ব্যয় করেন তারও কারণ খুজতে হবে।

    সঙ্গী যদি আপনাকে আগের চাইতে কম সময় দেয়া শুরু করেন, তাহলে এটিও একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। খুব ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চাইতে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে ব্যয় করছেন। আপনি তাকে সময় দেয়ার কথা বলে দেখুন, একসাথে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানান, আত্মীয় স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা। সঙ্গী যদি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে বিনা কারণে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত।
    নতুন কোন নাম বা এলাকার নাম বা কোন বস্তুর নাম বা কোন ঘটনার কথা বাড়বার বলে যায় কিনা তাও  লক্ষ্য রাখতে হবে এতে কেন আগ্রহ বাড়ছে।

    আপনার সঙ্গীটির মুখে যদি নতুন কোন একটি নাম ঘন ঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে বন্ধুটির কথা আগে কখনো শোনেননি, এমন কারো কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় তবে বিষয়টি অবশসই চিন্তার।অকারণে রেগে যাওয়া বা কথায় কথায় প্রতিউত্তর দেওয়াটা ও ভাবতে হবে।

    আরও একটি বিষয় আছে যা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। তা হল আপনার সঙ্গীর কথায় রাগের সুর। খেয়াল করে দেখুন তো, আগে যে বিষয়গুলো আপনার সঙ্গীর রাগের উদ্রেক করতো না সেসব বিষয়ে কি তিনি রেগে যাচ্ছেন? কিংবা কথায় কথায় আপনাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছেণ? তার এসব কথার কোন যুক্তি আছে কিনা এইসব ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করুন। বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করা, কিংবা সবসময় খিটখিট করা পরকীয়ার অন্যতম লক্ষণ। আপনি যদি কোন কারণে বাড়ি বা অফিসের  বাহিরে থাকেন খেয়াল রাখুন ঘরে বা অফিসে আপনার যে সঙ্গীটি রয়েছে তিনি আপনাকে কিভাবে খোজ করছে ? কোথায় আছেন ? কি করছেন? কতক্ষন বাড়ি ফিরবেন? এ সকল প্রশ্ন এবং উত্তর থেকে ও পরকীয়ার লক্ষণ পাওয়া যেতে পারে।
    আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে উদাসীনতা সবচেয়ে  বড় ধরনের পরকীয়ার কারণ হতে পারে।সঙ্গী যদি আপনার সাথে যৌনসম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষন হিসেবে ধরতে পারেন। যিনি অন্যের সাথে সময় কাটিয়ে আপনার প্রতি উদাসীন, তার মুখের অভিব্যক্তিই আপনাকে সব কথা বলে দেবে। আপনার সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গী আগ্রহী নন, অর্থাৎ তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারো মাধ্যমে। এছাড়াও অভ্যাস বশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা স্রেফ আপনাকে খুশি করতে, সেটিও লক্ষ্য করুন।
    আপনার প্রতিদিনের রুটিন খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা-

    এছাড়া খেয়াল করে দেখুন আপনার স্বামী/ স্ত্রী আপনার প্রতিদিনকার রুটিন সম্পর্কে হঠাৎ অতিরিক্ত নজর দিচ্ছেন কিনা অর্থাৎ আপনি কটায় বাড়ি ফিরবেন বা কোন কোন জায়গায় কখন যাবেন এই ধরনের প্রশ্ন করছেন কিনা। তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার চোখ এড়িয়ে নিরাপদে সম্পর্ক চালিয়ে যেতেই তার এত জিজ্ঞাসা।
    তিনি যদি হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে উঠেন

    আপনার স্বামী/স্ত্রী যদি হঠাৎ নিজের ত্বক, সাজগোজ, শারীরিক গঠন কিংবা পরিহিত পোশাক আশাকের দিকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে শুরু করেন, তাহলে আপনি একে পরকীয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এখানে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে সঙ্গী আপনার জন্যই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন কিনা। কারন অনেক স্বামী/স্ত্রীই আছেন যারা দাম্পত্য জীবনে পুনরায় রোমান্স ফিরিয়ে আনতে এই পন্থা বেছে নেন। কিন্তু আপনি এই দ্বিধাবোধের অবসান করতে পারেন নিজেকে ২/৩ টি প্রশ্ন করে। আর তা হল, আপানার স্বামী/স্ত্রী কি আপনার পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করছেন? তিনি কি শুধুমাত্র আপনাকে দেখানোর জন্যই বিশেষ পোশাক ও সাজগোজ করেন? আমাকে কেমন দেখাচ্ছে এই ধরনের প্রশ্ন আপনাকে করা হচ্ছে কিনা সেটাও লক্ষ্য করুন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার সঙ্গী পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িত আছেন। আপনি যখন খাবার টেবিলে, বাথরুমে, তখনও ভাবতে পারেন সঙ্গীটি কেন  হঠাৎ  আপনাকে বেশী সময় দিচ্ছে বা দিচ্ছেনা এর মাঝেও পরকীয়ার একটি লক্ষণ বুঝা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে অকারনে কোন বিষয়ে নিস্তিত না হয়ে শুধু মাত্র সন্দেহের আলোকে কাউকে দুষী বলা যাবে না।