আসুন শান্তি ও ঐক্যের পথ সমাধান করি : প্রধানমন্ত্রী

    0
    231

    “বিরোধী দল তাদের সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে নাম দিতে পারে। যাদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন “প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে সে সরকারে  বিরোধীলকেও অংশ গ্রহনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলের সদস্যও রাখা হবে এবং সে মনোনীত সদস্যদের তালিকা দিতে প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন; শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেন, সকল দলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই।

    তিনি আরো বলেন, বিরোধী দল তাদের সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে নাম দিতে পারে। যাদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার সাড়ে ৭টা থেকে ৭টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ভাষণের শুরুতেই তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ঈদ ও পূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান।
    ভাষণে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে দেশবাসী ভোট দিয়ে আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভূমিকা রাখছে। আগামীতেও তারা নাগরিকগের রক্ষায় একইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের বিনিয়োগ ও নারী শিক্ষা প্রসারের কাজে সারাবিশ্বে প্রশংসা পেয়ে আসছে। কৃষক শ্রমিক নারী একজন দিনমজুর দুই কেজি চাল পেত না। সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে পারত না। আজ তারা সেগুলো কিনতে পারছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের কাছে আমার আহ্বান, বোমা-মেরে আগুন জ্বেলে জনগণের ক্ষতি করবেন না। এতিমদের দিয়ে মাদ্রাসায় বোমা তৈরি করবেন না। গরিব বাস ড্রাইভার মারা বন্ধ করুন। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। যারা নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে। তাদের ঠিকানা হবে দোজখ। আসুন শান্তি ও ঐক্যের পথ সমাধান করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি চান সংসদে এসে সুনির্দিষ্টভাবে বলুন। বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে  আমি সংলাপে যেতে চাই।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক এগারোর মতো কোনো অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি জনগণ চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
    ২০০৭ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথ মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১/১১-এর মতো কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের উপর চেপে বসে তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। এধরণের অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি আর কখনোই হবেনা- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন যাদেরকে আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সময়ে মন্ত্রীসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি এবং নির্বাচনে যাতে কারো কোন সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দুর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে।
    মহাজোট নেতা বলেন, আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দিবেন। তিনি বলেন, তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি। সব ভেদাভেদ ভুলে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে তুলি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। এ জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের নাম চেয়ে তিনি বলেন, তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন যাদেরকে আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি। নির্বাচনে যাতে কারো কোন সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এ ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দিবেন। এ ভাষণে সরকারের গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি সংবিধান থেকে উদ্ধুত করে  নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে নিজের অবস্থানেরও ব্যাখ্যা দেন তিনি। নব্বই দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য সকল দলের সাথে, বিশেষ করে মহাজোটের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।
    সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান।

    এছাড়াও তিনি সংবিধানে ১২৩(৩) অনুচ্ছেদও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে নব্বই দিনের হিসাব শুরু হবে।
    সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। তিনি আরো বলেন, মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনই আমার জীবনের একমাত্র কাম্য। আসুন, সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করি। তাই, শান্তির পথে আসুন।
    বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি। বিরোধীদলীয় নেতাকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করবেন না। কোরান শরীফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করুন। মাদ্রাসায় বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করুন।
    ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম কখনোই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অনুমোদন দেয়না। যারা নির্দোষ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা করে তাদের চূড়ান্ত ঠিকানা হবে দোজখ। কাজেই, ছুরি, দা, খুন্তা, কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিরোধীদলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনতার উপর আস্থা রাখুন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করুন। আপনারা কি চান তা সংসদে এসে বলুন। আলোচনা করুন। আলোচনার দরজা সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আছে।
    আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে হয়ে যাওয়া পাঁচ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সকল নির্বাচনে বিরোধীদলের অনেক প্রার্থী জয়লাভ করেছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলেন, তার সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। কঠোর হাতে জঙ্গীবাদ দমন করেছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে।
    বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শাসনামলে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে  দেশজুড়ে হত্যা-সন্ত্রাস-ধর্ষণ-লুটপাট-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দেশকে অন্ধকারের পথে ঠেলে দিয়েছিল। সে দুঃসহ দহন-জ্বালার আতংক মানুষকে এখনো তাড়া করে ফেরে। হাওয়া ভবন নামে সরকারের ভিতরে আরেকটি সরকার এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। এ সময় বিএনপির অপকর্মের কারণেই ১/১১ এসেছিলো বলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি সংলাপে ডেকেছিলাম। দুঃখের বিষয় তার জবাবে তিনি আলটিমেটাম দিয়ে বললেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশছাড়া করবেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জাতীয় সংসদে বিএনপির মূলতবী প্রস্তাব দিয়েও তা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে আবারো মুলতবী প্রস্তাব দিন জাতীয় সংসদে এবং সুস্পষ্টভাবে বলুন আপনারা কি চান?