ডাঃ সুস্মিতার ভুল চিকিৎসায় সুমির মৃত্যুঃমামলা দায়েরঃসুস্মিতার কুঠির জোর কোথায় ?

    0
    257

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫মে,মতিউর রহমান মুন্নাঃনবীগঞ্জে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ডাঃ সুস্মিতার ভুল চিকিৎসায় হতভাগিনী সুমি বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় হবিগঞ্জ শহরের প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার সুস্মিতা ঘোষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

    গতকাল বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেশমা আক্তারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা গ্রামের নিহতের পিতা কদ্দুছ মিয়া। মামলায় ওই ডাক্তার ছাড়াও আরও অজ্ঞাত ৩ জনকে আসামী করা হয়েছে।

    এদিকে প্রায় ২ বছর পূর্বে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ জেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু অন্যত্র চাকুরিরত থাকা অবস্থায় কিভাবে তিনি নবীগঞ্জ শহরের অজিত রায় ড্রাগ হাউসে চেম্বার করে প্রতিদিন রোগী দেখেন। তার খুঁটির জোর নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে।

    মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ডাঃ সুস্মিতা ঘোষ প্রায় ২ বছর আগে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ময়মনসিংহ করা হয়। তারপরও অফিস ফেলে অধিকাংশ সময়ই উসমানী রোডে অজিত রায় ড্রাগ হাউজে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। সে সূত্র ধরে প্রায় সময়ই রোগীদের কৌশলে ভয় দেখিয়ে হবিগঞ্জ শহরের প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালে এনে সিজার করেন।

    তাদের নিকট থেকে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা। একই রকমভাবে বাউশা গ্রামের কদ্দুছ মিয়ার অন্তঃসত্তা মেয়ে সুমি বেগমকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে গেলে ওই ডাক্তার তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গেলে উন্নত চিকিৎসা হবে বলেও তাদের আশ্বস্থ করেন।

    ফলে শুরু থেকেই তারা ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা করান। শেষ পর্যায়ে ডাক্তার পরামর্শ দেন প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে জানানোর জন্য। ১১ মে রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হলে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ডাঃ সুস্মিতা বিস্তারিত শুনে ওসমানীতে গেলে ভাল চিকিৎসা পাওয়া যাবেনা বলে রোগীর স্বজনদের জানান। তিনি তাদের বলেন, আমি সুমির চিকিৎসা করেছি। কাজেই আমি জানি বাচ্চার অবস্থান। সরকারি হাসপাতালের খবর আমার জানা আছে। ওসমানীতে  কোনভাবেই ভাল চিকিৎসা হবেনা। প্রাইভেট চিকিৎসা করালে রোগীনির জন্য ভাল হবে। আমি নিজে অপারেশন করবো। এ জন্য ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হবে।

    এ বলে তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য বলেন। পাশাপাশি প্রাইভেট চিকিৎসা করলে মা ও সন্তান সুস্থ এবং নিরাপদ থাকবে বলেও তিনি নিশ্চয়তা দেন। তার কথায় রোগীর স্বজনরা রাজি হলে তাকে সাথে নিয়ে জেলা শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কে প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালে যেতে বলেন। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটায় তারা ডাক্তার ও রোগীকে নিয়ে একটি অটোরিক্সায় প্যানাসিয়া ক্লিনিক হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথে অপারেশনের টাকা অগ্রীম দেয়ার দাবি করেন ডাক্তার। বলেন, এত রাতে অন্য ডাক্তারদের ঘুম থেকে উঠিয়ে আনতে গেলে আগেই পেমেন্ট দিতে হবে। পরে রোগীর স্বজনরা ১৩ হাজার টাকা অগ্রীম দেন। রাত সাড়ে ৩টায় হাসপাতলে পৌছে আরও ২শ’ টাকা এবং একটি কাগজে দস্তখত নেন। রাতেই অপারেশনের পর নবজাতককে রোগী সুমির বাবার কাছে দেন। তিনি এ সময় মেয়ের অবস্থা জানতে চাইলে ডাক্তার বলেন অবস্থা জানতে চাইলে আরও কিছু সময় লাগবে। কিছুক্ষণ পরই এসে বলেন রোগীর অবস্থা আশংকাজনক। তাকে রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সে অজ্ঞান অবস্থায় আছে। সেখানে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসা পেলেই সুস্থ হয়ে উঠবে। দ্রুত তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

    পথে সন্দেহ হলে নবীগঞ্জে পৌঁছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীকে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, সে অনেক আগেই মারা গেছে। পরে তারা রোগীর মৃত্যু সংক্রান্ত কাগজপত্র চাইলেও প্যানাসিয়া কর্তৃপক্ষ তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত তারা ওই কাগজ আদালতে দেবে বলে জানান।

    প্রসঙ্গত, মৃত সুমি বেগম নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোশাহিদ আলীর স্ত্রী।

    স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ জেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু অন্যত্র চাকুরিরত থাকা অবস্থায় কিভাবে তিনি নবীগঞ্জ শহরের অজিত রায় ড্রাগ হাউসে চেম্বার করে প্রতিদিন রোগী দেখেন। তার খুঁটির জোর নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে। এছাড়া রোগীদের জটিল ও মারাত্মক রোগের কথা বলে মিথ্যে ভয় দেখিয়ে ইঞ্জেকশন দিতে হবে, ওয়াশ করতে হবে ইত্যাদি বলে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগও রয়েছে ডাঃ সুস্মিতা ঘোষের বিরুদ্ধে।