ধর্মান্তরিত স্বামীর খোজেঁ এসে বিপাকে স্ত্রী

    0
    224

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২০মার্চ,মতিউর রহমান মুন্না: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের সুজাপুর গ্রামে ধর্মান্তরিত স্বামীর খোজেঁ এসে কুমিল্লার মেয়ে রুবি আক্তার দু’ সন্তান নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে। মুসলমান হওয়ার দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর গ্রামের বাড়ি এসে অতিতের সংসার জীবন ভুলে গিয়ে পুর্ণরায় সনাতন ধর্ম অনুসরন করে বিয়ে করেছে বালাগঞ্জে। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টিসহ ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লার ওই মেয়েটি দ’ দিন যাবৎ স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মতিউর রহমান কটন এর হেফাজতে রয়েছে। এদিকে রুবি আক্তার তার স্বামী সুমন মিয়াকে না নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে না বলে সাফ জানিয়েছেন। অন্যতায় আইনের আশ্রয় এবং সহযোগিতা নিবেন বলেও জানিয়েছেন। এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রামের কানু পালের ছেলে কাজল পাল প্রায় ১২ বছর পুর্বে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। ওই সময় কুমিল্লা শহরের রসুলপুর বাজারে রিপন মিয়ার চা-ষ্টলে কাজ নেয়। কিছু দিন পরই সে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। কাজল পাল পরিবর্তন করে তার নাম রাখা হয় সুমন মিয়া। পিতার নাম কানু পালের পরিবর্তে রাখা হয়েছে তালেব হোসেন, মাতার নাম লেখা হয় মাছুমা বেগম। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী সে সময় তার কৎনা কাজও সম্পন্ন হয়। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করায় চা-ষ্টলের মালিক রিপন মিয়া তার বাড়িতে থাকার জায়গা দেয়। সেই সুযোগে আশ্রয় দাতার ভাতিজি রুবি আক্তারের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রেজিস্ট্রি কাবিন মুলে কুমিল্লা সদরের রসুলপুর গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে রুবি আক্তারকে বিয়ে করে সুমন। দীর্ঘ ৮ বছরে তাদের সংসার জীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বড় মেয়ে ইসাত জাহান সুচনা (৭) স্থানীয় কেতাশা সরকারী প্রাইমারী স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। ছোট ছেলে রাহাদ আহমদ মিনাজ এর বয়স ১৭ মাস। সেখানে স্বামী-স্ত্রী উভয় দর্জির কাজ করতো। সুমন মাঝে মধ্যে ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করতো। রুবি আক্তার জানায়, প্রায় ৫/৬ মাস পুর্বে তার স্বামী ট্রাকের হেলপার হিসেবে সিলেটে আসলে আটকা পড়ে। ফোনে আমাকে অসুবিধার কথা বলে ফোন দিতে বারণ করে। কিছু দিন পর ফিরে এসে দু’দিন অবস্থান করে ভাইয়ের অসুখের কথা বলে চলে আসে। সর্বশেষ ২১ ফের্রুয়ারী কুমিল্লা এসে ব্যবসার কথা বলে ১০ হাজার টাকা এনে আর ফিরে যায়নি। ফোন নম্বারে ফোন দিলে সুইচ অফ পাওয়া যায়। অপেক্ষা করতে করতে সে ফিরে না যাওয়ায় গত সোমবার দু’ অবুঝ সন্তানকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে নবীগঞ্জে আসেন রুবি আক্তার। শহরে তার স্বামীর দেয়া দোকানের ঠিকানা অনুযায়ী এসে স্বামীকে না পেয়ে স্থানীয় লোকজনকে সুমন নামে তার স্বামীকে খোজেঁ দিতে অনুরুধ করেন। কিন্তু লোকজন ওই নামে কাউকে ছিনেন না বলে জানালে রুবি তার কাছে থাকা স্বামীর ছবি দেখান। ছবি দেখে লোকজন সনাক্ত করেন তিনি সুজাপুর গ্রামের কানু পালের ছেলে কাজল পাল। লোকজনের সহযোগিতায় অসহায় রুবি আক্তার ছুটে যায় স্বামীর বাড়ি সুজাপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী সুমন মিয়া কাজল পাল সেজে গত ৯ মার্চ সোমবার সিলেটের বালাগঞ্জে এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে। বর্তমানে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সে শশুর বাড়ি বালাগঞ্জে অবস্থান করছে। গতকাল মঙ্গলবার বাড়িতে ফিরে আসার কথা। কিন্তু এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কাজলের পরিবার তাকে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে রুবি। রুবি আক্তার তার নির্মম এই ঘটনাটি সুজাপুর গ্রামবাসীসহ সুমন মিয়া (কাজল পাল) এর চাচাতো ভাই কৌশিক পালকেও অবহিত করেছে। স্বামীর বাড়ি ঠাই না পেয়ে অবশেষে রুবি আক্তার স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার একই গ্রামের মতিউর রহমান কটনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে শত শত লোকজন ভীড় করছেন মেম্বারের বাড়িতে। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন গ্রামবাসী। গ্রামবাসী বলেন, কাজল পাল প্রায় ১০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম একটি মেয়েকে বিয়ে করে, স্ত্রী-সন্তান রেখে পুর্ণরায় সনাতন ধর্ম অনুসরন করে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করার ঘটনাটি অস্বাভাবিক। গ্রামের লোকজন বলেন, এটা শুধু ওই মেয়ের সাথে প্রতারনা নয়, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করার সামিল। তারা জানান, প্রায় ১২/১৩ বছর পুর্বে ওই কাজল পালের বড় বোন এবং কানু পালের মেয়ে অর্চনা পাল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে তাসলিমা বেগম নামে চট্রগ্রামে স্বামীর সাথে সংসার করছে। রুবি আক্তার বলেন, তাদের সংসার জীবনে তার স্বামী সুমন তাকে নিয়ে তার বোনের বাসায় চট্রগ্রামে একাধিক বার বেড়াতে নিয়ে গেছে। ওয়ার্ড মেম্বার মতিউর রহমান বলেন, সামাজিক ভাবে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি। কাজল পাল ওরপে সুমন মিয়ার পরিবার সমাধানে এগিয়ে না আসলে গ্রামবাসীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিষয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন বলেও তিনি জানান। এ ব্যাপারে রুবি আক্তার বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ধর্মীয় রিতিনীতি অনুসরন করেই সুমন আমাকে বিয়ে করেছে। এবং ২০০৮ সালে কুমিল্লার রাজাপুর কর্মস্থলের ঠিকানায় সুমন এবং তার ছবিযুক্ত আইডি কার্ড হয়েছে। বিবাহের কাবিননামাসহ স্ত্রী সন্তানের সাথে সুমন মিয়া ( কাজল পাল) এর ছবি রয়েছে। এঘটনায় সুজাপুর গ্রামসহ আশপাশ এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিকে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সুমন (কাজল) আত্মগোপন করেছে বলেও অনেকে ধারনা করছেন। গতকাল বিকালে বাবা বাড়ি এসেছে খবর পেয়ে বড় মেয়ে ইসাতজাহান সুচনা তাদের বাড়ি গিয়েছিল। কাজল পালের বাবা-মা তাকে দেখে দরঝা বন্ধ করে দিয়েছে। সরজমিনে গেলে কান্না জড়িত কন্ঠে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় রুবি আক্তার। এ সময় গ্রামের শত শত মানুষ ভীড় জমায়। তাদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।