কেন বাংলাভাষী মুসলমানরা নাগাদের ক্ষোভের শিকার হচ্ছেন?

    0
    220

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১মার্চঃ উত্তরপূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ডে ধর্ষণে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে জেল ভেঙে বার করে এনে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছে নাগা আর বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে চলতে থাকা দ্বন্দ্ব।

    একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নাগাল্যান্ডে মুসলমানরা থাকেন, কিন্তু কেন সম্প্রতি বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন স্থানীয় নাগা মানুষেরা?

    কেন ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে নাগাল্যান্ডে ব্যবসা করতে যাওয়া মানুষদের ওপরে রাগ না থাকলেও বাংলাভাষী মুসলমানরা নাগাদের ক্ষোভের শিকার হচ্ছেন?

    এটা কি শুধুই ধর্ষণের দায়ে একজন অভিযুক্তের ওপরে ক্ষোভ?
    ধর্ষণে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির ওপরে ক্ষোভ থাকতেই পারে.. কিন্তু হাজার হাজার মানুষ মিছিল করে গিয়ে জেল ভেঙে অভিযুক্তকে বার করে পিটিয়ে মেরে ফেলছে – এটা বিরলতম। তাও অভিযুক্ত আদৌ দোষী কি না তাও কেউ জানে না।

    কিন্ত এখানে একটা স্বার্থান্বেষী মহল সাধারণ মানুষের ক্ষোভটাকে উস্কিয়ে দিয়েছে, এমন মনে করা যথেষ্ট কারণ আছে।

    অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরে রীতিমতো ফেসবুক – টুইটারে প্রচার চালানো হয়েছে যে অভিযুক্ত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে।

    ঠিক কারা সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলল তাদের পুলিশ চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।

    কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ওপরে নাগাল্যান্ডের বাসিন্দাদের যে পুরোনো রাগ রয়েছে – এক্ষেত্রে সেই ক্ষোভ একজন ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলমান অভিযুক্তের ওপরে গিয়ে পড়েছে।

    কেন বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরে ক্ষোভ সেখানকার মানুষের?
    নাগাল্যান্ডের বাসিন্দাদের ক্ষোভটা কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরে নয় – তারা ক্ষুব্ধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে।

    অনেক স্থানীয় মানুষই বলেছেন যে তারা কেন অন্যদেশ থেকে অবৈধভাবে নাগাল্যান্ডে গিয়ে অর্থ উপার্জন করবেন – সেটা একটা অভিযোগ। অন্যদিকে এই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের একটা অংশ বিভিন্ন রকম অনৈতিক আর অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়েন।

    কিন্তু কে যে আসামের বাংলাভাষী মুসলমান আর কে অনুপ্রবেশকারী – সেটা স্থানীয় মানুষ বুঝতে পারেন না।

    মুসলিম নেতারা বলছেন, যে এটা তাদের, সরকারের বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ব্যর্থতা যে তারা বাংলাভাষী মুসলমান মানেই যে অনুপ্রবেশকারী নয় – সেটা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারেন নি।

    তাই সব বাংলাভাষী মুসলমানের ওপরেই রাগটা গিয়ে পড়ে । অথচ মুসলমানরা নাগাল্যান্ডে একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন – সবথেকে বড় যে জামে মসজিদ ডিমাপুরের, সেটা ১৯০৬ সালে তৈরি হয়।

    আর গুজরাট বা রাজস্থান থেকেও বহু ভারতীয় নাগাল্যান্ডে থাকেন, ব্যবসাবাণিজ্য এরাই চালান- তবে তাদের ওপরে কিন্ত স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভ নেই – ক্ষোভটা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ওপরে।

    পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা
    পুলিশ প্রশাসন যে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে স্বীকারই করে নিয়েছেন।

    ডিমাপুরের জেলা প্রশাসক আর পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও এই ব্যর্থতা ঢাকার কোনও উপায় তাদের নেই কারণ এমনিতেই জঙ্গীগোষ্ঠীগুলির কারনে সেনা আধা সেনা প্রচুর সংখ্যায় মোতায়েন থাকেন।

    গোয়েন্দা নেটওয়ার্কও শক্তিশালী।

    কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন গোয়েন্দা বা পুলিশ-প্রশাসন সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক প্রচার নজর করতে পারল না, বা হাজার হাজার মানুষ যখন মিছিল করে যাচ্ছেন, তখন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারল না.. এগুলো তো বড় প্রশ্ন।

    এমনকি যে অভিযুক্ত মারা গেছেন – তার নামও প্রথম দু-তিন দিন পুলিশের পক্ষ থেকে ভুল করে বলা হয়েছিল ফরিদ খান – পরে মৃতের ভাই জানান যে তার নাম আসলে সরিফ খান।

    এছাড়াও পুলিশের মহানির্দেশক ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বলে দেন যে মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী।

    সেটাও যে ভুল তা প্রমাণিত – তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার কোনো উপায় নেই প্রশাসনের।সুত্রঃবিবিসি