৭খুনের ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের সম্পৃক্ততার কথা জানতো পুলিশ!

    0
    624

    “প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের বিরুদ্ধেঅভিযোগ ওঠার পরে গত ৫ই মে,র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি আফতাব উদ্দিন আহমেদকেপ্রধান করে চার সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়”

    আমারসিলেট24ডটকম,০৮মেঃ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭জনের গুমও খুনের ঘটনাটির সঙ্গে র‌্যাব সদস্যদেরসম্পৃক্ততার কথা প্রথম থেকেই জানতো পুলিশ। অপহরণের আগে আদালত চত্বরে র‌্যাবসদস্যকে আটক করার পর সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা ধরে নিয়ে ছিলেনর‌্যাব কোন অপারেশন চালাতে সেখানে অবস্থান নিয়েছে।এ জন্য পরিচয় নিশ্চিতহওয়ার পর আটক র‌্যাব সদস্যকে ছেড়ে দেয়া হয়। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, অপহরণ ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশ জানতে পারে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাদের পাঁচ সহযোগীকে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে গেছে। এজন্য প্রথম দু’দিন পুলিশ নজরুলসহ অন্যদের উদ্ধারে তেমন কোন তৎপরতা দেখায়নি।তবে ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও র‌্যাব যখন বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকে তখনটনক নড়ে পুলিশের। তখনই তারা বুঝতে পারে এই সাত জনকে জীবিত উদ্ধার করা আরসম্ভব নয়।
    এ জন্য নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় টহল পুলিশদের সতর্ক করেদেয়া হয়। অপরদিকে অপহরণের ঘণ্টা দুয়েক আগে আদালত চত্বরে নজরুলকেঅনুসরণকারী সাদা পোশাকের র‌্যাবের এক সদস্যের বিষয়ে খোঁজ করতে থাকে পুলিশ।অস্ত্রসহ সাদা পোশাকে আটক হওয়া ওই র‌্যাব সদস্য সম্পর্কে জানতে পুলিশের দুইকনস্টেবল ওমর হাওলাদার ও রফিক ইসলামকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন পুলিশেরঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুই কনস্টেবল র‌্যাব সদস্যকে আটকের পুরো কাহিনীকর্মকর্তাদের কাছে খুলে বলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাপ্রথম থেকে র‌্যাব যে, নজরুলসহ অন্যদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল তা জানার কথাস্বীকার করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্তচলছে। যারাই জড়িত হোক তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
    নারায়ণগঞ্জজেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নজরুল যে পালিয়েবেড়াচ্ছেন তা তারা আগে থেকেই জানতেন। গোয়েন্দা তথ্য ছিল নজরুলকেগ্রেপ্তারের জন্য র‌্যাব মরিয়া হয়ে খুঁজছে। কিন্তু নজরুল আত্মগোপনে থাকায়তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে র‌্যাব সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতেজানতে পারে ২৭ শে এপ্রিল, নজরুল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে আসবেন।এর আগে তিনি উচ্চ আদালত থেকে নেয়া জামিনে ছিলেন। জেলা বিশেষ শাখার এককর্মকর্তা বলেন, আদালতে নজরুলের উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটিবার্তা পান যে আদালত থেকে বেরোনোর পথে নজরুলকে র‌্যাব আটক করতে পারে। আদালতচত্বরে র‌্যাবের একাধিক সদস্যের উপস্থিতির কথাও জানানো হয়। পরে এক পর্যায়েআদালত চত্বর থেকেই র‌্যাবের সাদা পোশাকের এক সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করেনজরুলের অনুসারীরা। তাকে কোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে জানা যায় সের‌্যাব সদস্য।
    কিন্তু তার সঙ্গে কোন পরিচয়পত্র ছিল না। কোমরে শুধুসরকারি পিস্তলটি ছিল। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাকা হয় র‌্যাবেরআরেক সদস্যকে। তিনি আদালত প্রাঙ্গণের সামনে র‌্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ছিলেন।তার নাম মোস্তফা কামাল। দাড়িওয়ালা এই র‌্যাব সদস্য বর্ডার গার্ডবাংলাদেশের সদস্য। পরে তাকে ডেকে নিয়ে সাদা পোশাকের ওই র‌্যাব সদস্যেরপরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। গতকাল সাদা পোশাকের র‌্যাবসদস্যকে আটককারী দুই পুলিশ কনস্টেবল ওমর হাওলাদার ও রফিক ইসলামের সঙ্গে কথাহয় এই প্রতিবেদকের। কনস্টেবল ওমর হাওলাদার বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।তবে এক র‌্যাব সদস্যকে আটকের কথা স্বীকার করেন তিনি। বলেন, যা বলার পুলিশসুপারকে বলেছি। একই ভাষ্য অপর পুলিশ কনস্টেবল রফিক ইসলামের। তিনি বলেন, এটাতো এখন ওপেন সিক্রেট। সবাই জানে তিনি বলেন, র‌্যাব সদস্য নিশ্চিত হওয়ার পরআমরা তাকে ছেড়ে দেই। র‌্যাব সদস্য তাকে জানায় আদালত থেকে একজনকে ধরার জন্যতারা এসেছেন। পরে সাবেক পুলিশ সুপার বিষয়টি জানতে চাইলে তাকে সব খুলেবলেন।
    জেলা পুলিশের অতিরিক্ত একজন পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পরপরই এই সাতজনকে যে র‌্যাব তুলে নিয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ উদ্ধার অভিযানবন্ধ রাখে।এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে যে নূর হোসেনের প্রতি অভিযোগ করাহচ্ছিল তাতে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারণ তারা তখন পর্যন্ত জানতেন র‌্যাবযেহেতু তুলে নিয়েছে সেহেতু নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা উচিত হবে না।দু’-একদিনের মধ্যে হয়তো র‌্যাব তাদের কোন মামলায় গ্রেপ্তার বা কোন আইনিপ্রক্রিয়ার মধ্যে হস্তান্তর করবে।
    এ জন্যই প্রথম দিকে বিষয়টিকে গুরুত্বদেয়া হয়নি। কিন্তু যখন প্রথম দিন গাজীপুরে নজরুলের গাড়ি ও গুলশানেরনিকেতনে চন্দন সরকারের গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তখন শঙ্কানিয়ে নিখোঁজদের সন্ধানে নামে পুলিশ।
    র‌্যাবের তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থলপরিদর্শন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত হত্যা ঘটনায় র‌্যাবের তদন্তকারী টিমগতকাল শীতলক্ষ্যা নদীর চর ধলেশ্বরী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। র‌্যাব সূত্রজানায়, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আফতাব উদ্দিন আহম্মেদেরনেতৃত্বে একটি দল গতকাল সকালে প্রথমে লাশ উদ্ধারের স্থলবন্দর উপজেলারমদনগঞ্জ ও চর ধলেশ্বরী এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের লামাপাড়া এলাকায় অপহরণ হওয়ার স্থান পরিদর্শন শেষে র‌্যাব-১১ সদরদপ্তর ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পে যান। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা র‌্যাব-১১সদর দপ্তর ও নারায়ণগঞ্জ শহর ক্যাম্পের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন।উল্লেখ্য, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের বিরুদ্ধেঅভিযোগ ওঠার পরে গত ৫ই মে,র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি আফতাব উদ্দিন আহমেদকেপ্রধান করে চার সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।