১৬ বছরেও হয়নি সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার বিচার

    0
    501

    নূরুজ্জামান ফারুকী,নবীগঞ্জ থেকে:  আজ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৬ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় তিনিসহ ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে শতাধিক লোকজন জন আহত হন। হত্যাকান্ডের সাড়ে ৯ বছর পর সম্পূরক চার্জশীট দাখিলের মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হলেও বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। জানা যায়- ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভায় শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তৎকালীন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন। আহত হন কমপক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনার রাতেই হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তৎক্ষালিন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে কাজ করে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু মামলাটির স্বাভাবিক তদন্ত না হয়ে দলীয় বিবেচনায় পরিচালিত হতে থাকে। সিআইডি’র তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ মার্চ ১ম অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

    অভিযোগপত্র দেয়ার পর মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে না-রাজি আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন খারিজ করলে ১৪ মে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করেন। এই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করেন। এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এ মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুুপার রফিকুল ইসলামকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামী করে এই আলোচিত মামলার অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

    কিবরিয়া হত্যাকান্ডের সাড়ে ৬ বছর পর লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামী করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল। ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া চার্জশীটের উপর হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল আদালতে না-রাজি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার মুল নথি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে থাকায় বিচারক রাজিব কুমার বিশ্বাস উপনথির মাধ্যমে আবেদনটি সিলেটে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যাকান্ডের অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্রের নারাজি আবেদন গ্রহণ করেনসিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার বণিক। তিনি সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্তেরজন্য নির্দেশ দেন।

    এরপর সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাড়ে ৯ বছর পর ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পূরক অভিযোগপত্র নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভূক্ত করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। অন্তর্ভুক্ত আসামীরা হলেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজ উদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ, হাফেজ ইয়াহিয়া। এর পর ২০১৫ সালের জুনে মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকে সেখানে বিচার কার্যশুরু হয়েছে। চলছে সাক্ষী গ্রহন।

    সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষ হয়েছে। মোট আসামি ৩২ জনের মধ্যে অন্য একটি মামলায় ৩ আসামির ফাসি কার্যকর হয়েছে। এখন এখন ২৯ জন আসামী রয়েছে। এর মধ্যে জামিনে আছে ১২ জন। পলাতক ৭ জন এবং হাজতে আছে ১০ জন। মামলার প্রসঙ্গে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেন, এ মামলায় মোট ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করা হয়। আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি উভয় মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে। ‘এ মামলার মূল আসমিদের বিরুদ্ধে সারা দেশে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। তাদের দেশের বিভিন্ন আদালতে হাজির করার জন্য এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করতে হয়েছে। তাই মামলার ধার্য তারিখে সব সময় আদালতে হাজির সম্ভব হয় না।

    এতে মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে,’ বলেন তিনি। সরোয়ার আহমদ আরও জানান, মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজনের ইতোমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপন। বিচার কার্য নিয়ে মামলার বাদী এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি বলেন- দেখতে দেখতে চলে গেল ১৬ বছর। মামলা হয়েছিল প্রত্যাশা ছিল কিবরিয়া হত্যার বিচার হবে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ইতিমধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই বিচারকার্য সমাপ্ত হবে। এ ব্যাপারে শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া বলেন- দীর্ঘ ১৬ বছর অতিক্রম হলেও আমার বাবা হত্যা মামলার এখনো বিচার হয়নি। সুষ্ঠু বিচারের কোনো সম্ভবনা দেখছিনা। তিনি বলেন- আমরা ৩টি চার্জশিট প্রত্যাখান করেছি এবং করে যাবো, যতদিন এর সুষ্ঠু তদন্ত না হয় ততদিন সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার সম্ভবনা নেই।