১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকুপ বিষ্ফোরণ দিবস

    0
    300
    ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকুপ বিষ্ফোরণ দিবস
    ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকুপ বিষ্ফোরণ দিবস

    ঢাকা, ১ জুন: ১৪ জুন ১৬ তম মাগুরছড়া দিবস। মাগুরছড়াসহ ৩টি গ্যাসকূপে অগ্নিকান্ডের ক্ষতিপূরণ ১৬ বছরেও মেলেনি।

    ১৯৯৭ সালের এইদিন মধ্যরাতে মাগুরছড়ার ১নং অনুসন্ধান কুপ খননকালে হঠাৎ করে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ঘটে। গ্যাসকুপে বিষ্ফোরণে মুহুর্তে আগুনের লেলিহান শিখা হয়ে উঠে উর্ধমুখী। মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজার স্ট্রাক্চার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি সম্পদ, রাস্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিষ্ফোরিত আগুনের তেজস্ক্রীয়তায় গলে যায় রেলপথ, জ্বলে ছারখার হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ। মারা যায় হাজার হাজার বন্যপ্রানী ও পাখী। সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মানুষ। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মাগুরছড়া গ্যাস কুপে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও ত্র“টির কারনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়।

    ভয়াবহ মাগুরছড়া গ্যাসকুপ বিষ্ফোরণের পর পরই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তৎকালীন জালানী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষ্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের ব্যর্থতার জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন অভিমত প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ। তাদের কাছে অক্সিডেন্টালের ১৫/১৬ টি ত্রুটি ধরা পড়ে। মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজার স্ট্রাক্চার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি সম্পদ, রাস্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮শত ৫৮ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। এসময় ছোট বড় ২৯টি চা বাগানের ৪৬ কোটি ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৩০টাকা ক্ষতি সাধিত হয়। তাছাড়া বনাঞ্চলের ৬৯.৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণ বয়স্ক গাছ আগুনে পুড়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৩৩.৬১ কোটি টাকার। বিশেষজ্ঞদের মতে একটি  বনের স্বাভাবিক উচ্চতার গাছ বাড়তে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ৬০ বছর, এবং স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে কমপক্ষে ১১০ বছর সময় প্রয়োজন। প্রতি বছর ৮০.৩০ কোটি টাকা হিসাবে ১১০ বছরে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮,৮৩৯ কোটি টাকা। বনাঞ্চলের আংশিক ক্ষতির পরিমাণ ৮,১০০ গাছ এবং ২২.৫০ হেক্টর ভূমি। উল্লেখিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০ বছর সময় দরকার।

    তদন্তে ক্ষতি বাবদ ধরা হয় ৫০৭.১২ কোটি টাকা। এছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫,৪৫০ টি বৃক্ষ। ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার পেতে ১০ বছরে  ক্ষতির পরিমান ৪৮৪.৫৮ কোটি টাকা। বিস্ফোরণের ফলে ২ হাজার ফুট রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস হয়েছে, এতে ক্ষতি হয়েছে ৮১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা (রাজস্ব ব্যতীত)। সড়ক পথের ক্ষতি ২১ কোটি টাকা। গ্যাস পাইপ লাইনের ক্ষতি ১৩ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯১৮৬ টাকা। খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজ সমূহ প্রতিদিন ৪৭,৭৫০ টাকা হারে মোট ১২ লক্ষ টাকা।

    ভয়াবহ মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস বিনষ্ট হয়। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাসের তৎকালীন মুল্য ৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশী টাকায় মাগুরছড়ার মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বলে তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষনে জানা গেছে। 

    অক্সিডেন্টালডয়টেগকোম্পানীরক্ষয়ক্ষতিরবিবরনঃঅক্সিডেন্টালের রিগ ড্রিলিং যন্ত্রপাতি সহ জার্মান ডয়টেগ কোম্পানীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় সর্বমোট ২৯,৪৭০,৪০০ মার্কিন ডলার।

    অক্সিডেন্টাল কোম্পানী তদন্ত রিপোর্ট বীমা কোম্পানীর নিকট জমা দিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতিপুরনের সম্পুর্ন টাকা আদায় করে নিয়েছে বলে এক তথ্যে জানা গেছে। তদন্ত রিপোর্টে কাজে লাগিয়ে অক্সিডেন্টাল তার ক্ষতিপুরণের টাকা আদায় করে নিলেও আমাদের গ্যাস সম্পদ, বন ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশকে প্রদানের ক্ষেত্রে নানা টাল বাহানা করে আসছে। তাদের সাথে সম্পাদিত মুল চুক্তি পিএসসি-৯৪ অনুযায়ী ক্ষতিপুরণের টাকা অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল ও শেভরন পরিশোধে বাধ্য।

    এছাড়া শেভরন কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদালতে হুইলিং চার্জের মামলায় বাংলাদেশ আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ করে। এই রায়ে বাংলাদেশ শেভরনের কাছ থেকে গ্যাস পাইপ লাইনের হুইলিং চার্জ বাবদ প্রতি বছর ২ হাজার ৭শত কোটি টাকা পাচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক আইনী লড়াইয়ের বাংলাদেশের ব্যয় হয় মাত্র ৫ কোটি টাকা। মাগুরছড়ার ক্ষতিপুরন আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যে, বিষয়টি ফয়সালার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে বাংলাদেশ আইনী লড়াইয়ে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।

    ১৯৯৭ সালের জুন মাসে স্থানটি রাতারাতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়। এখনো প্রতি বছর ‘মাগুরছড়া দিবস’- ছাড়াও মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনামে মাগুরছড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে জনগণের সামনে আবির্ভূত হয়। ১৪ই জুন মাগুরছড়া দিবস। এ বছর মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১৬ বছর পূর্ণ হবে। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন ব্লো-আউটের পর থেকেই ক্ষতিপূরণের দাবীতে দীর্ঘ আন্দোলন করে আসছে ‘‘মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংশের ক্ষতিপুরণ আদায় জাতীয় কমিটি’’। কিন্তু ১৯৯৭-২০১২ সময়কালে মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।

    ২০০৮ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল ১১ টায় লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে ব্লো-আউট সংঘটিত হলে সংরক্ষিত বনের বিপুল পরিমাণ বৃক্ষাদিসহ একটি খাসিয়ার পান পুঞ্জি ভষ্মিভুত হয়। ভূ-তাত্বিক জরিপের ফলে অবলা বন্যপ্রাণী পালিয়ে লোকালয়ে অথবা অন্যত্র আশ্রয় নিতে গিয়ে মারা যায় অসংখ্য মেছো বাঘ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় লাউয়াছড়ার আশপাশের বাসিন্দাদের। যার ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সিসমিক জরিপের ফলে লাউয়াছড়া বন ও আশপাশের বাসিন্দাদের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকারও অধিক। এমনি ভাবে ১৯৯৭ সালে ১৪ জুন মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল কূপ খনন কালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে।

    গত বছরে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে মার্কিন কোম্পানী শেভরন ত্রিডি ভুতাত্বিক জরিপ চালিয়ে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। সংরক্ষিত বনে এ ধরনের জরিপ নিষিদ্ধ থাকলেও শেভরনকে তেলগ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অনুমতি দেওয়ায় জরিপ কাজের ফলে অসংখ্য বন্যপ্রানী লোকালয়ে বেরিয়ে যায়। শেভরনের সিসমিক জরীপকালে  লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণী ও পাখি বিভিন্ন এলাকার মানুষের হাতে ধরা পড়ে। ত্রিমাত্রিক ভূ-তাত্বিক জরিপ চলার সময় লাউয়াছড়া বনে হঠাৎ আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাৎক্ষনিক তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছিল এবং এতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হযেছিল। জেরিন চা বাগান ও মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের জামে মসজিদ সংগ্লন্ন প্রায় ১০০ গজ দুরত্বে ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বোমা বিস্ফোরন ঘটায় ভূ-কম্পনের ফলে জামে মসজিদ সহ গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক কাচা-পাকা ভবনে ফাটল ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন অংশে জরিপ কাজে নিয়োজিত শত শত মানুষ ও জরিপ কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহনের শব্দের কারণে লাউয়াছড়া বন থেকে হরিণসহ বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী বেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসে। ভূ-তাত্বিক জরিপের ফলে লাউয়াছড়ার বন্যপ্রানী ভীত হয়ে পালিয়েছে। এসময় অনেক প্রাণী লোকালয়ে যাওয়ায় মারাও গেছে। ফলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রমের পরিবর্তে বন্যপ্রাণীর বিপদজনক স্থানে পরিণত হয়। বিপন্ন হয় লাউয়াছড়ার জীব বৈচিত্র আর বন্যপ্রাণী। ত্রিমাত্রিক জরিপের ফলে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছিল আজও তা পূরণ হয়নি।

    এ ব্যাপারে ‘মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংশের ক্ষতিপুরণ আদায় জাতীয় কমিটি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান “আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম”কে বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার জন্য শেভরনকে নোটিশ প্রদান ও ক্ষতিপুরণের বিষয়টি নিষ্পত্তির নিমিত্তে আমরা গতবছর ১৩ জুন বুধবার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারক লিপি প্রদান করেছি। যতক্ষন পর্যন্ত ক্ষতিপুরণ আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আর ক্ষতিপুরন আদায় হলেও আমরা মাগুরছড়া দিবস হিসেবে পালন করে যাবো।

    উল্লেখ্য যে, ১৪ জুন শ্রীমঙ্গলবাসীর জন্য এক ভয়াবহ ও আতংকের দিন। ১৬ বছর পূর্বে এই দিনে শ্রীমঙ্গলের মাগুরছড়া এলাকায় ঘটেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ গ্যাসের বিস্ফোরণ। বছর ঘুরে এই দিনটি এলে শ্রীমঙ্গলবাসী সেই বিভিষীকাময় গ্যাস বিস্ফোরণের দিনের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবী দাওয়া তুলে ধরেন। অথচ তেল গ্যাসে সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট বিভাগের অন্যতম ৩টি গ্যাসকূপে ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আজও পায়নি সিলেটবাসী। বিভিন্ন সরকারের আমলে এ ক্ষতিপূরনকে পাশ কাটিয়ে বার বার বদল হয়েছে বিদেশী কোম্পানীর নাম। কিন্তু ক্ষতিপূরণের বিষয়টি থেকে গেছে অন্তরালে। নানা প্রতিকী কর্মসূচী আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হবে মাগুরছড়া দিবস।

    দেশের মোট ৭৩টি কূপের মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৩৮টি কূপ। সিলেট বিভাগের তেল গ্যাস সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল মাগুরছড়ায় ১৯৯৭ সালে ১৪ জুন যে বিস্ফোরন ঘটে তার মাত্রা ছিল ভয়াবহ। তৎকালীন সময়ে মার্কিন তেল গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল ছিল এই কূপ খননের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই স্থানে গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষতি হয় ৭৩‘হাজার কোটি টাকা। মাগুরছড়া মূল গ্যাস জোনের আয়তন ছিল ৫ কিলোমিটার। এ কূপে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটেরও অধিক গ্যাস মজুত ছিল। যার বাজার মূল্য ছিল ৩৬‘হাজার ৪‘শ কোটি টাকা। পাশাপাশি এই বিস্ফোরণে প্রাকৃতিক ও জীব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অরণ্যের ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সরকার ও মাগুরছড়াবাসীকে কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে অক্সিডেন্টাল হাত বদল হয় ইউনোকল নামে। একটা সময় সেই দাবী পরিশোধে সোচ্চার হয়ে উঠে মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংশের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটি, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য বাম রাজনৈতিক দল ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। সেই দাবীকে উপেক্ষা করে আবার কোম্পানী বদল হয়। যা এখন শেভরন নামে পরিচিত।

    মাগুরছড়া বিস্ফোরণের কয়েক বছর যেতে না যেতে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারী সিলেটের সুনামগঞ্জের টেংরাটিলার গ্যাসকূপে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ। বিদেশী বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানী নাইকো ছিল এই গ্যাস কূপের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। টানা এক মাস গ্যাস জ্বলে। যার পরিমান ছিল ১০ বিলিয়ন ঘনফুট। এ কূপে মজুত ছিল ৩৭৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে উত্তোলন যোগ্য গ্যাস ছিল ৯০ বিলিয়ন ঘনফুট। সেখানেও পরিবেশের ক্ষতি হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা।