হেফাজত-জামায়াত গোপন ফোনালাপ ফাঁস

    0
    466

    ‘আমাদের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই’ জনতার আক্রমণ থেকে বাঁচতে বার বার এমন দাবি করলেও ফাঁস হয়ে গেছে হেফাজতে ইসলাম নামধারী সংগঠনের আসল চেহারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে জেগে ওঠা আন্দোলনের বিরুদ্ধে হঠাৎ ধর্মীয় জিকির তুলে দাঁড়িয়ে যাওয়া হেফাজত নেতাদের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের সরকার উৎখাত ও লংমার্চের ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত গোপন টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে গেছে।

    হোতাদের অন্যতম ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল নাশকতার পরিকল্পনা করেছেন হেফাজত নেতাদের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে আছেন হেফাজত হেফাজতের উপদেষ্টা মাইনউদ্দিন রুহী, মুফতী ফয়জুল্লাহ। সাধারণ মুসল্লিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় হেফজত আমিরকে ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলন চালানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন তাঁরা।

    এদিকে বাংলা লিক্স ঘোষণা দিয়েছে, অবিশ্বাসকৃতদের মূল্যায়নের জন্য সকল তথ্য প্রকাশে আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। একই সঙ্গে বলেছে, প্রতিনিয়ত আমাদের চোখের সামনে এবং অগোচরে কত কিছুই না ঘটে যাচ্ছে, কিছুদিন আগের ঘটনা এক বিচারপতির গোপন কিছু কথাবার্তা ফাঁস হলো এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উনাকে স্ব-সম্মানে স্ব-গদি ছাড়তে হলো। এটাকে আমরা বলব লিকস্। উইকিলিকস্ নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করল, কয়েক মিলিয়ন গোপন ডাটা নিয়ে, যাতে বাদ যায়নি বিশেষ কোন রাষ্ট্র, সরকার, মিডিয়া, ব্যাংক, সামরিক-বেসামরিক বাহিনী। এটা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিকস্। এ রকম অসংখ্য ঘটনা এবং হারিয়ে যাওয়া বা মুছে যাওয়া মুহূর্তগুলোকে দৃষ্টির আড়াল থেকে সরিয়ে লোকচক্ষুর সামনে হাজির করার প্রয়াসেই আমাদের- লিকস্, বাংলা লিকস্। শুক্রবার সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে হেফাজত নেতাদের গোপন টেলিফোন আলাপের তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। ফেসবুক বাংলালিকস্ পেজ ও ইউটিউব বাংলালিকস্ পেজে এ সংক্রান্ত রেকর্ড আপ করা হয়েছে। (“http://www.facebook.com/Bangla.Leaks.page”) ও (“http://www.youtube.com/BanglaLeaksOrg)” টেলিফোন আলাপে দেখা গেছে, থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার উৎখাত ও লংমার্চের মাধ্যমে দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে। জামায়াত নেতা হেফাজত নেতাদের গত চার তারিখের আগেই তাদের আমির আহমদ শফীকে ঢাকায় এনে লালগাহ মসজিদে রাখার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুসারে কাজ হয়েছে। এছাড়া মতিঝিলে মঞ্চ তৈরিতে কত টাকা লাগবে হোফজত নেতাদের কাছ থেকে তাও কথা বলে জেনেছেন জামায়াত নেতা। এছাড়া জামায়াতের আরেক নেতা হেফাজত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ৬ এপ্রিল (আজ) যেন মতিঝিলের মঞ্চ বন্ধ করা না হয়। জামায়াত নেতা বলছেন, ‘আপনারা আমির শফী সাহেবকে ৬ তারিখ মঞ্চে আনবে না। সভা-সমাবেশ পথসভা করে সময় কাটিয়ে পরদিন মঞ্চে আনবেন। ওই দিন পর্যন্ত সমাবেশ অব্যাহত রাখবেন।‘ এ সময় হেফাজত নেতা বলেন, ‘আপনি মির্জা ফখরুল সাহেবের সঙ্গে কথা বলে রাখবেন। ওই দিন কোন হরতাল বা অন্য কোন কর্মসূচী যেন না দেয়।’ এদিকে আজকের লংমার্চকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকেল ও পৌনে ৫টায় রাজধানীর রেডিসন হোটেলে উগ্রবাদী এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। সূত্র জানিয়েছে, লংমার্চে অপকৌশল নির্ধারণ করতেই মুজাহিদ কমিটির ও নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে আজকের লংমার্চ থেকে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। জানা গেছে, সম্প্রতি একটি পত্রিকা অফিসে জামায়াত নেতার ও তাদের পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্য, হেফাজত নেতা ও এক সম্পাদকের বৈঠক হয়েছে।
    সেই বৈঠকের পরই প্রায় শতকোটি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে জামায়াতপন্থী উগ্রবাদী দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। পুলিশের নজরদারি থাকলেও সেখানে গোপনে একটি বৈঠক হয় গত ১১ মার্চ। এই বৈঠকটাতেই মূলত হেফাজতের অন্যতম নীতিনির্ধারক বৈঠক। এখানে টাকা থেকে শুরু করে কিভাবে লংমার্চ হবে, কিভাবে নৈরাজ্য চালানো হবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। লংমার্চের দুটো প্ল্যান আছে। জামায়াতের লোকরাই কিছু তরুণ নেতাদের খুন করতে পারে। কিছু মাদ্রাসা পুড়িয়ে দেবে। এছাড়া খুলনাতে একটা গ্রুপ নাস্তিক সেজে কোরান শরীফ পুড়িয়ে সরকারের ওপর চাপাতে চেষ্টা করবে। ঘটনার জের ধরে হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর হবে। এই আন্দোলনে শুরুতে থাকলেও এখন বাইরে এমন একটি দলের নেতারা বলছেন লংমার্চের একটা প্ল্যান যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল আলীমকে খুন করা। এতে দেশে একটা ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানায় পাগলাঘণ্টা বাজানোর পরিকল্পনাও আছে খুন করে। পরিকল্পনা আছে কওমি মাদ্রাসার ৫০ থেকে ১০০ আলেম, শিক্ষক ও ছাত্রকে খুন করার। কোথাও আক্রমণ করা হলে ‘জয় বাংলা; সেøাগান দিয়ে কওমি ওলামাদের ওপর আক্রমণ করার অপকৌশল নেয়া হয়েছে। ঢাকাতে তারা অতর্কিতে হামলা করতে পরে গণজাগরণ মঞ্চে এবং সেইখানেও তারা হামলা করে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেফাজতের ব্যানারে এ আন্দোলনে পুরো টাকার মধ্যে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা যাচ্ছে হেফাজত নেতাদের হাতে। বাকি টাকা ১৮ দলের অংশীদার উগ্রবাদী ৯টি দলের নেতাদের কাছে। টাকার যোগান দলগতভাবে জামায়াত, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জেলে আটক এক বিএনপি ও এক জামায়াত নেতার পরিবার দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই দুই পরিবারের সদস্যরা সর্বশেষ গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
    এদিকে বেড়েই চলেছে হেফাজতে ইসলামের দাবি। প্রথমে অনলাইনে ব্লগারদের ধর্মবিরোধী লেখা ছাপার অভিযোগে আন্দোলনে নামলেও এখন তারা আরও বহু দাবি যোগ করেছেন। হেফাজতের সব দাবি মানতে হলে ভেঙ্গে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক অপরাজেয় বাংলাসহ সব ভাস্কর্য, বন্ধ করে দিতে হবে নারী-পুরুষের সহ শিক্ষা বা মেলামেশাও।
    এর পাশাপাশি দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযানও চালানো যাবে না। শাহবাগে গণজাগরণ শুরুর পর চুপ থাকলেও কদিন পরই এর সঙ্গে জড়িতদের ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলামী। একই দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামীও। অবশ্য হেফাজতে ইসলাম বলছে, তাদের দাবির সঙ্গে জামায়াতের দাবির কোন সম্পর্ক নেই। নিজেদের জামায়াত সম্পৃক্ততাও অস্বীকার করছেন হেফাজত নেতারা। যদিও হেফাজতের প্রায় নেতাই একযুগ ধরে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ রাজনীতি করছে। হেফাজতের এসব দাবি মানতে হলে পুরো পাল্টে দিতে হবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, শিক্ষা পদ্ধতি। বন্ধ করে দিতে হবে রাষ্ট্রীয় বহু আচার, মুক্তিযুদ্ধের নাটক-সিনেমা নির্মাণ করা যাবে না, একত্রে চলাফেরা চাকরি, পড়ালেখাও করা যাবে না। ভাস্কর্য আপত্তি কেন, জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামীর উপদেষ্টা আঠারো দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘ইসলাম অনুযায়ী যে কোন প্রাণীর মূর্তি করা যাবে না।’ ভাস্কর্য তো কেউ পূজা দেয় না, তাহলে কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পূজা না দিলেও কোন প্রাণীর আবক্ষ মূর্তি রাখা যাবে না।’ তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলা কি আপনারা ভেঙ্গে দেবেন? জানতে চাইলে নেজামী বলেন, ‘এক সময় মানুষ এটাও ভেঙ্গে দেবে।’ কখন সেটা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন মানুষ বুঝবে এটা ইসলামী ধ্যান-ধারণার বিরোধী, তখন এটা হবে।’ এটা কি কখনও হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই জাগরণ তো এখন সারাদেশে শুরু হয়েছে’। সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার বাড়িতেও তো জিয়াউর রহমানের একটি আবক্ষ মূর্তি ছিল, এটা নিয়ে কেন কথা বলেন না, জানতে চাইলে বিএনপির শরিক দলের নেতা ও হেফাজতে ইসলামীর উপদেষ্টা বলেন, ‘ওটা তো সেনানিবাসের ভেতরে ছিল। আমরা কেমনে জানব?। তবে কোন ব্যক্তির ভাস্কর্য হলে সেটা যারই হোক, ভেঙ্গে ফেলতে হবে।’ চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে এই দাবি কেন জানাননি, জানতে চাইলে নেজামী বলেন, ‘তখন তো ভাস্কর্য হয়নি।’ শহীদ মিনারের বর্তমান রূপও পছন্দ নয় হেফাজত নেতাদের। তাদের দাবি এই রূপটি বিকৃত। শুরুতে এর সঙ্গে মসজিদ করার কথাও ছিল। তাই নামের শেষে মিনার শব্দটি যোগ করা হয়েছে। হেফাজতের চতুর্থ দাবি মানতে হলে ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে শিক্ষা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করে দিতে হবে একই সঙ্গে চাকরি। ছেলে আর মেয়েদের মেলামেশাও বন্ধ করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক-সিনেমায় স্বাধীনতাবিরোধীদের দেখানো যাবে না বলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আবদার তাদের। হেফাজত দাবি করছে, গণমাধ্যমে ধর্মীয় লেবাসধারী লোকদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এতে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব জন্মে এটা বন্ধ করতে হবে। সংগঠনটির ১৩ দফা দাবির মধ্যে নবম দাবি এটি। এই দাবির আড়ালে হেফাজত মূলত মুক্তিযুদ্ধের নাটক-সিনেমার কথাই বুঝিয়েছে। সে সময়কার মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীর স্বাধীনতাবিরোধীদের পোশাকের প্রতি ইঙ্গিত করেই এই দাবি তোলা হয়েছে। তাহলে কি ’৭১ নিয়ে নাটক-সিনেমা বানানো যাবে না? জানতে চাইলে আব্দুল লতিফ নেজামী ঢাকা বলেন, কেবল ’৭১-এর নাটক সিনেমাতেই নয়, অন্যগুলোতেও ইসলামী লেবাসধারীদের খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরা হয়।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার-আলবদররা যে পোশাকে ছিলেন তা কেন তুলে ধরা যাবে না, জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। কৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতাদের মুুক্তি দাবি করে হেফাজত দাবি করা শুরু করেছে, দেশে আলেম ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যা চলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আর গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি চেয়েছে তারা।

    to know real pls visit below link-