হেফাজতের তাণ্ডব : সংঘর্ষ গুলি বোমায় পল্টন রণক্ষেত্রে নিহত ৩

    0
    355

    হেফাজতের তাণ্ডব : সংঘর্ষ গুলি বোমায় পল্টন রণক্ষেত্রে নিহত ৩
    হেফাজতের তাণ্ডব : সংঘর্ষ গুলি বোমায় পল্টন রণক্ষেত্রে নিহত ৩

    ঢাকা, ০৫ মে : রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঘিরে মতিঝিল, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর ও কাকরাইল এলাকায় হেফাজত, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলি ও বোমায় পুরো পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- হানিফ পরিবহনের হেলপার সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ওরফে বুলেট (২৮), দোকান কর্মচারি নাহিদ (২৬)। তার পিতার নাম দেলোয়ার সিকদার, গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে।রাজধানীর ওয়ারি এলাকার ২৭৪ জয়কালি মন্দিরে তার বাসা। এছাড়া দৈনিক বাংলা মোড় থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক লোক (৪৮)। তার পরনে ছিল চেক লুঙ্গি ও এশ কালারের ফুলহাতা শার্ট। তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকলে পথচারিরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান হাতে গুলি ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। লাশগুলো ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
    আজ রবিবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে সমাবেশ চলাকালীন বন্ধ ছিল। এরপর সন্ধ্যায় সমাবেশ শেষ হলে আবার নতুন করে শুরু হয় হেফাজতের তাণ্ডব। পল্টন মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনে হামলা চালিয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাথে থাকা বইয়ের দোকানসহ হকারদের মালামাল পুড়িয়ে দিয়েছে হেফাজতের কর্মী সমর্থকরা। বিনা উস্কানিতে দুপুর থেকে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইট, পাথর, ককটেল ও হাতবোমা নিয়ে পুলিশের ওপর দফায় দফায় হামলা ভাঙচুরসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা।
    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেফাজতের কর্মীরা বিনা উস্কানিতেই পুলিশের ওপর আক্রমণ করছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে একটি বাসে আগুন দিয়েছে তারা। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গেলে তাদেরও বাধা দেয় তারা। শুধু তাই নয়, এ এলাকায় হকারদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালালেও তারা নিবৃত্ত হননি।
    এদিকে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালায়ের সামনে ১০ থেকে ১৫টি হাতবোমা বিস্ফোরণের পর ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এক পরিবহন শ্রমিক। আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানান, এ হামলা ও সংঘর্ষের পেছনে জামায়াত শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

    ১৩ দফা দাবিতে হেফাজত ইসলাম ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। এ কারণে আজ ভোরেই দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। মহানগরীরর প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নিয়ে দুপুর পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। এ কর্মসূচির শেষে শাপলা চত্বরের সমাবেশে অংশ নিতে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, উত্তরা, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে মতিঝিলের দিকে আসতে শুরু করে হেফাজতকর্মীরা।
    হামলাকারীরা পূর্ব বিজয়নগরে ট্রাফিক বক্সে আগুন দিলে অগ্নিদগ্ধ হন কনস্টেবল পিয়ারুল ইসলাম (৩৫)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর সংঘর্ ছড়িয়ে পড়ে নয়া পল্টন ও কাকরাইল এলাকাতেও। পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ঠেকাতে টিন হাতে রাস্তায় আড়াল নিয়ে পাল্টা ঢিল ছুড়তে দেখা যায় হামলাকারীদের। দফায় দফায় সংঘর্ষে পল্টন, নয়া পল্টন, বিজয়নগর, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররমের আশেপাশের এলাকার রাস্তা রাশি রাশি ইট ও কাচের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধোঁয়া আর টিয়ার গ্যাসে পুরো এলাকা যেন অন্ধকার হয়ে আসে। 
    প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলাকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, হেফাজতের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যারা বিশৃঙ্খলা করছে তারা তাদের কর্মী নয়। হেফাজত ইসলামের মোড়কে জামায়াত শিবির কর্মীরাই এটা করেছে। তিনি যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন সচিবালয়ের পাশেই টিয়ারশেল ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁঝ পাওয়া যাচ্ছিল সচিবালয়ের ভেতর থেকেও। হেফাজতকে শুরুতে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলেও পরে কেন দেয়া হলো জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার কথা বললেও তারা হিংসাত্মক কাজ করছে।
    সিপিবি অফিসে হামলার ঘটনায় দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আমাদের সংগঠনের প্রতি স্বাধীনতাবিরোধীদের আক্রোশ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্র তারা আবার প্রকাশ করে দিল।
    সকাল ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ি থেকে আসা হেফাজতকর্মীদের একটি দল বায়তুল মোকাররম ইউসিবিএল ক্রসিংয়ে পুলিশের বেরিকেড ডিঙিয়ে এগোতে চাইলে শুরু হয় সংঘর্ষ। বৃষ্টির মতো ঢিলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লেও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটক ও বিজয়নগরেও সংষর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বেলা পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালায়ের সামনে ১০ থেকে ১৫টি হাতবোমা বিস্ফোরণে পরে সেখানেও ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। বিস্ফোরণের পরপরই কয়েকজনকে ভ্যানে করে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
    প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলাকারীদের হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে। হামলাকারীদের মধ্যে থেকে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ শ্লোগান দিতেও শোনা গেছে বলে অনেকে দাবি করেছেন। এ সময় হামলাকারীরা অন্তত ১৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে স্টেডিয়াম, রাজউক ভবন, গুলিস্তান ও গোলাপ শাহর মাজার এলাকাতেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও।
    পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ একের পর এক রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশের রিকুইজিশন করা হানিফ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার সিদ্দিকুর রহমানের (২৮) মুখে গুলি লাগে। ওই বাসের চালক জুয়েল জানান, স্টেডিয়ামের পাশে সংঘর্ষের সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন জুয়েল। এ সময় তার মুখে গুলি লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
    ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতাপ বলেন, গুলির আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার আগেই জুয়েল মারা গেছেন। সংঘর্ষে আহত ৪৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের ৯০ শতাংশের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
    পক্ষান্তরে পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনে হামলা চালিয়ে ফটক ভেঙে নিচতলার দোকানগুলোতে ভাংচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ঢিল ছুড়ে ভবনের পাঁচ তলা পর্যন্ত সামনের কাচগুলোও ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। এছাড়া পুলিশ পল্টন মোড় থেকে পুলিশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে অবস্থান নেয়া হামলাকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকলে উল্টো দিক থেকে চলে ঢিল বৃষ্টি। ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা আগুন নেভাতে সেখানে উপস্থিত হলেও সংঘর্ষের কারণে সিপিবি অফিসের সামনে পৌঁছাতে তাদের বেগ পেতে হয় বলেও জানান ফায়ার অফিসার মো. মহসিন। 

    ১৩ দফা না মানলে সরকারকে বিদায় নিতে হবে : হেফাজত

    মতিঝিলের সমাবেশ থেকে হেফাজতের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ১৩ দফা দাবি মেনে না নিলে সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। আজ সন্ধ্যার আগেই ১৩ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকারও ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজত নেতারা। আজ রবিবার বিকেল ৩টার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ শুরু হয়।

    সমাবেশে বলা হয়, হেফাজতের কর্মীদের বাধা না দিয়ে এ মুহূর্তে তাদেরকে আসার রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে। অথবা যেখানে বাধা দেয়া হবে সেখানেই লড়াই হবে। একই সঙ্গে সংগঠনটি সমাবেশ থেকে আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে। সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে আসার পথে তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। আটকে রাখা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। গুলি করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানান তারা। না হলে সমুচিত জবাব দিতে বাধ্য হবেন বলেও তারা হুমকি দেন।
    হেফাজত কর্মীদের ওপর পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, আপনাদের লেলিয়ে দেয়া ছাত্রলীগ, যুবলীগকে থামান। না হয় রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হবে। এদকে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, আর ১৩ দফা নয়, এবার এ সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা অর্থাৎ সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আর কোনো সময় দিতে চাই না। কারণ সরকার আমাদের দাবি বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়।
    হেফাজত চট্রগ্রাম বিভাগের নেতা আব্দুর রহমান বলেন, আজ প্রমাণ হবে, দেশে আস্তিক থাকবে নাকি নাস্তিক থাকবে। এ সরকার মুরতাদদের সরকার। এ সরকার নাফরমানদের সরকার। তাই আল্লামা শফীর ডাকে আমাদের সবাইকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। এছাড়াও সমাবেশে হেফাজতের সিলেট বিভাগের নেতা মাওলানা জয়নাল আবেদীন বলেন, শাহবাগী নাস্তিকদের ফাঁসি দিতে হবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার ও শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান তিনি। এ সময় ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
    নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের নেতা মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাইতুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটসহ বেশ কিছু এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলা বন্ধে আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যদি এরপর আর কোনো হামলা চলে তাহলে তার জন্য কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকারকেই সে দায় বহন করতে হবে।
    অপরদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছিল সংগঠনটি। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তবে আজ মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি পায় হেফাজত। পাঁটটি শর্তে সংগঠনটিকে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত সেখানে সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। অনুমতি পাওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে হেফাজতের নেতা কর্মীরা মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড়, শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেন তারা।

    পল্টনে হেফাজত পুলিশ আ’লীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ : পরিবহন শ্রমিক নিহত

    অবরোধ কর্মসুচীতে পন্টনে হেফাজত পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ওরফে বুলেট (২৮) নামে হানিফ পরিবহনের একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অনেকে। আজ রবিবার দুপুর ২টার দিকে পুরানা পল্টন মোড়ে সংঘর্ষের কবলে পড়ে তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে  রাখা  আছে। জানা গেছে, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে হানিফ পরিবহনের একটি গাড়িতে হেলপারের চাকরি করতেন বুলেট। ওই গাড়ির চালক জুয়েল জানান, কামরাঙ্গির চার থানার পুলিশ গত শুক্রবার গাড়িটি রিক্যুইজিশনে নেয়। চালক জুয়েল আরো জানান, নিহত বুলেট থাকতেন রাজধানীর মানিকনগরে। আজ এক  কাজে আমরা পল্টন গিয়েছিলাম। হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে বুলেটকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে দেখি। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। কর্তব্যরত সার্জন হরিদাস সাহা প্রতাপ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
    এদিকে রাজধানীর পল্টনে পুলিশকে লক্ষ্য করে হেফাজতের কর্মীরা ইট-পাটকেল ছোড়ার পর তাদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। পল্টন ছাড়াও গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার, বঙ্গবাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, শাপলা চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গোলাপশাহ মাজারের সামনে হেফাজতকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়েছে। একপর্যায়ে হেফাজতকর্মীদের তাড়া খেয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে যান।এর আগে বেলা দেড়টার দিকে হেফাজতের কিছু নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একটি গাড়িতে আগুন দিলে তাদের ধাওয়া দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। পরে হেফাজত কর্মীরা সংগঠিত হয়ে ফিরে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।এ পরিস্থিতিতে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে বঙ্গবন্ধু এলাকা থেকে হেফাজত কর্মীদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় পথচারী ও পুলিশসহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন।ফুলবাড়িয়া, গোলাপ শাহ মাজার, বায়তুল মোকাররম এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছে হেফাজতকর্মীরা।
    প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ীর ব্যারিকেড ডিঙিয়ে মতিঝিলে এসে অবস্থান নেয়া হেফাজত কর্মীদের একটি অংশ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে এসে জড়ো হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থাকা হেফাজতকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। পুলিশের ধাওয়ায় বায়তুল মোকাররমের সামনে থাকা হেফাজতকর্মীরা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে সরে যায়। আরেকটি অংশ মসজিদের ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় মসজিদের সামনে দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়।
    সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে থাকা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হেফাজতকর্মীদের তাড়া করেন। পরে তারা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অবস্থান নেয়। পুলিশ অনুমতি দেয়ার পর বেলা ৩টায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ শুরু হয়েছে ।