হুমকির মুখে আগর আতর শিল্প

    0
    410

    এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী ,মৌলভীবাজার:  আগর-আতরের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের বড়লেখার আগর চাষের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের। তবে, গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে আগর চাষ বিস্তার লাভ করে। পর্যায়ক্রমে তা কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তৃত হয় এবং গড়ে ওঠে আগর-আতর শিল্প। করোনা মহামারীর কারণে স্থবিরতা নেমে এসেছে মৌলভীবাজারের এ ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি শিল্পে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় সীমিত করা হয়েছে কারখানাগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

    সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালে শিল্প হিসেবে ঘোষণার পর বাণিজ্যিকভাবে আগরের চাষ বেড়েছে এ অঞ্চলে। বড়লেখা উপজেলার আগর আতরের রাজধানী সুজানগর। সুজানগর ইউনিয়নে প্রায় ২শ ৫০ টি ছোট ও মাঝারি আগর-আতর কারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য স্থানে আছে আরো ৫০টির মতো। তবে, বন বিভাগের হিসেব মতে, জেলায় নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা ১শ ৭৬। এর বাইরেও অনিবন্ধিত কিছু ছোট কারখানা রয়েছে। আগর-আতরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন মৌলভীবাজারের ৪০-৫০ হাজার মানুষ। বড়লেখার সুজানগর ইউনিয়নের সুজানগর, সালদিঘা, রফিনগর, হাসিমপুর, চিন্তাপুর, বড়থল গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম এবং পাথারিয়ার পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি আগর চাষ হয়। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে ধস নেমেছে এ শিল্পে। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও দিন দিন চাহিদা বাড়ছিল পণ্যটির। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইয়েমেনসহ  ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগর-আতর রফতানি হয়। কুয়েত, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও আরব
    আমিরাতের দুবাইয়ে বাংলাদেশীদের কয়েকটি আগর-আতর কারখানা রয়েছে, যেখানে কাঁচামাল যেত মৌলভীবাজার থেকে। শুধু বড়লেখাতেই বছরে আগরের নির্যাস প্রায় ১ হাজার লিটার উৎপাদিত হয়। বিপুল চাহিদা থাকায় আগে যেখানে সরবরাহ দিতে হিমশিম খেতে হতো, এখন সেখানে কোনো পণ্যই বিক্রি হচ্ছে না। এ অবস্থায় শিল্পটি রক্ষায় সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রপতানিকারক প্রতিষ্ঠান বে অব বেঙ্গল পারফিউমারির স্বত্বাধিকারী কবির আহমদ জানান, তাদের ১০-১২ বিঘা জমিতে আগর বাগান রয়েছে।
    প্রতিষ্ঠানটিতে ৪০ জন মানুষ কাজ করেন। ওই কারখানার ১৬টি মেশিনে মাসে গড়ে ২শ তোলা (এক তোলায় ১১.৬২ গ্রাম) আতর হয়। প্রতি বছর ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের পণ্য রপতানী হয়।