হায়েনা পুরুষদের ছোবলে শ্রীমঙ্গলে নিরীহ কিশোরীর মৃতদেহ

    0
    695

    “স্বরস্বতী পূজায় স্বপ্নের নুপুর পরা হলো না নিহত পিতৃহীনা কিশোরী ললিতা নায়েক সিপার (১৬)” 

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকায় আজ শনিবার সকাল ছয়টায় একটি মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। গত ১০ দিন নিখোঁজ থাকা কিশোরীর লাশ তার গর্ভধারিণী মা আবিষ্কার করেন নিজ বসতঘর সংলগ্ন পিছনের টিলার একটি গর্ত থেকে। ধারনা করা হচ্ছে কয়েকদিন আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে মেয়েটি কে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ সন্দেহমূলক ওই কিশোরীর প্রেমিক লিটন সাঁওতাল (২২)কে গ্রেপ্তার করেছে।

    সরেজমিন নিহত ললিতার বাড়িতে গিয়ে ছোট্ট উঠানে তার গর্ভধারিনী মা ছোটভাই প্রশান্ত  (১০) বিমর্ষ অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়, পাশে আরও ৩/৪ জন নারী-পুরুষকে বাক রুদ্ধ বসে  আছে নিহত ললিতার মায়ের নিকটে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ললিতার মাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমার সিলেটকে বলেন, আজ থেকে ১০ দিন আগে শিপা ওরফে ললিতা নিখোঁজ হয়।

    পিতৃহীন পরিবারে তেমন কোনো অভিভাবক না থাকায় চা বাগানে কর্মজীবী মা ও একমাত্র ছোট ভাই প্রশান্তকে নিয়ে আশপাশের এলাকা ঘুরে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে স্থানীয় মেম্বার এর সহযোগিতায় শ্রীমঙ্গল থানায় ডায়েরি তিনি জিডি করার কথা করেছে কি না;তিনি জানেন না এবং কোন পুলিশ আজকের(শনিবার) আগে উনার বাসায় আসেনি।

    নিহত ললিতা নায়েক শিপার মা ও একমাত্র ছোট ভাই। 

    নিহত মেয়ে ললিতার সাথে কারো কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ওই দিকে বাড়ি লিটন সাঁওতাল এর সাথে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং লিটন প্রতিনিয়ত তাদের ঘরে আসা যাওয়া করতো। মেয়ের প্রেমিক লিটনের প্রতি মেয়ে হত্যায় ওনার সন্দেহমূলক অভিযোগ রয়েছে তবে লিটন এই কাজ করেছে কিনা তিনি জানেন না, মেয়ে নিখোঁজের প্রথম থেকেই তাকে সন্দেহ করে আসছে।হয়তো কোথাও নিয়ে তাকে লুকিয়ে রেখেছে এমন ধারনা ছিল ললিতার মায়ের।

    লাশের সন্ধানের ব্যাপারে ললিতার মা জানান,আজ শনিবার সকাল ছয়টায় উঠান পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন একটি গর্ত থেকে কাপড় দেখা যাচ্ছে এবং শুকনো পাতা দিয়ে ঢাকা কাপড়ের একটি অংশ দেখা যাচ্ছে। এতে মোরগ গুলো লতাপাতা আঁচড়িয়ে যাচ্ছে। একটু এগিয়ে গেলে এই গর্তে একজন মানুষের শরীর দেখতে পান তিনি। এ সময় মেয়ের গায়ের কাপড় ও দেখা গেলে তিনি চিৎকার করে আশপাশের লোকদের জড়ো করে এবং কাদামাটি মিশ্রিত তার মেয়ের মৃতদেহ পরে থাকতে দেখতে পায়।

    থানায় সংবাদ জানালে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুস ছালেক, সহকারি সিনিয়র এএসপি আশরাফুজ্জামানসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং মৃতদেহ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করেন।

    জানা গেছে,সেখান থেকে সন্ধ্যায় তার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ এলাকায় এনে সমাহিত করা হয়েছে।
    নিহত ললিতার ছোট ভাই প্রশান্ত জানান,যে গর্তে তার দিদির (ললিতা) মৃতদেহ পেয়েছে সে গর্ত থেকে মাটি এনে সরস্বতী পূজার জন্য উঠোনে পূজার বেদী বানিয়েছেন এবং সাজিয়েছিলেন তার দিদি।

    কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হায়েনা পুরুষদের ছোবলে স্বপ্নের সরস্বতী পূজার ৬/৭ দিন আগেই মেয়েটি নিখোঁজ হয়;ফলে তার পক্ষে আর সরস্বতী পূজায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

    অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র থেকে জানা যায়,পূজার ১০/১৫ দিন পুর্বে প্রায় চার হাজার ৩০০ টাকা মূল্যের এক জোড়া নুপুরের অর্ডার দেন ললিতা এবং অর্ডার গ্রহণকারী ফেরিওয়ালাকে নাকি বলেছিল “দাদা সরস্বতী পূজার আগেই আমার নুপুর গুলো দিবেন আমি এগুলো পরে পূজা অনুষ্ঠান করবো।

    ওই সুত্র জানান পূজার দু’একদিন পূর্বে ওই ফেরিওয়ালা রুপার নূপুর নিয়ে তার (ললিতার) বাড়িতে গেলে তার মা বলেন “আমার মেয়ে আজ ৫/৬ দিন ধরে নিখোঁজ। ওই ফেরিওয়ালা তার অর্ডার দেওয়া নুপুর ফিরিয়ে নিয়ে যান।

    এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসমর্থিত আরেকটি সূত্র জানাই মেয়েটি নিখোঁজ ও হত্যার পিছনে ৮/৯ জনের একটি গ্রুপ জড়িত তবে তাদের নাম ঠিকানা বলতে পারেন নি তিনি।

    ৪ নং ওয়ার্ড মির্জাপুর ইউপি সদস্য শাহানুর আলম

    থানায় জিডি ও মেয়েটি নিখোঁজ থেকে হত্যার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহানুর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,”গত বুধবারে শ্রীমঙ্গল থানায় জিডি করতে গেলে ওসি সাহেবকে না পেয়ে চলে আসেন এবং থানা থেকে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মধু বাবুকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়।”

    ইউপি সদস্য শাহানুর আলম আরও বলেন যে ছেলেটির সাথে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাকে এস আই মধু বাবু আটক করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি জানালাম যে,সে এলাকার ছেলে ভাগতে পারবে না, আমাদের এখানে থাকবে আমরা আরেকটু অপেক্ষা করে দেখি মেয়েটি ফিরে আসে নাকি ?

    তিনি আরো বলেন, এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে অনেক সময় কোন ছেলে কোন মেয়েকে নিয়ে দু’দিন তিনদিন পাঁচদিন সাতদিন পর্যন্ত দূরে কোথাও চলে যায় পরে আবার ফিরে আসে, আমরা ভাবছিলাম যে এই বিষয়টিও এমনই হয়তো হবে।

    এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুস ছালিক দুলাল বলেন “আমরা সন্দেহ মূলক একজনকে আটক করেছি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আগামী কাল রোববার বিস্তারিত বলতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সাথে জড়িত যে কেউ থাকুক আমরা তাদের খুঁজে বাহির করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।”