হাতে টানলেই উঠে যাচ্ছে মৌলভীবাজারে এক সড়কের বিটুমিন

    0
    224
    হাবিবুর রহমান খান,জুড়ী প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী সদরের জায়ফরনগর ইউপির গৌরীপুর গ্রামের ১ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হতে না হতেই হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন। এলাকাবাসী অভিযোগ শুরু থেকেই এই সড়কটিতে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ হচ্ছিল। তাই নতুন করে সড়ক তৈরি করার পরও বিটুমিন উঠে যাচ্ছে।
    সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার লোকজন সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টান দিলেই বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন সড়কে বিটুমিন কম দেওয়া হয়েছে। বিটুমিনের পুরুত ২৫ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ জায়গায়ই ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার বিটুমিন দেখা যায়।
    এই সড়কটি ব্যবহার করেন আশপাশের ৫টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক লোক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রিকশা, সিএনজি অটো রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করে। তাই এই সড়কটি টেকসই ভাবে তৈরি না করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
    গৌরীপুর গ্রামের বাসিন্দা আনু মিয়া বলেন, এই সড়ক তৈরি করা নিয়ে শুরু থেকেই নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেছে ঠিকাদার। এখন হাত দিয়ে টান দিলেই বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। ২ বছর লেগেছে ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করতে। এখন এই ভাঙা সড়ক মেরামত করতে আরো কত বছর সময় লাগবে তা চেয়ারম্যান, মেম্বার আর ঠিকাদারই জানেন।
    গৌরীপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা নোমান আহমদ বলেন, যে ঠিকাদাররা নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে সড়কের কাজ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। আমারা সাধারণ মানুষজন যদি বুঝি যে সড়কের উপকরণ নিম্নমানের তাহলে কোনো ইঞ্জিনিয়ার কেন বুঝল না। এই নিম্নমানের কাজের জন্য জড়িত সকলকে শাস্তি দেওয়া হোক। এবং অতিসত্বর আমারে সড়ক ভাল উপকরণ দিয়ে মেরামত করা হোক।
    এলজিইডি সূত্রে জানা যায়,গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জায়ফরনগর ইউপির ভোগতেরা-বিশ্বনাথপুর সড়ক এবং পাশের গৌরীপুর এলাকার এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরনের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সড়কের কাজ পান মৌলভীবাজার সদরের ঠিকাদার নোমান আহমদ। ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর সড়কের কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিলো ২০১৮ সালের ২৮ মে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করতে না পারায় সড়কের শেষের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, বড়লেখার ঠিকাদার কামাল হোসেনকে। গত ১০ অক্টোবর থেকে আবারও গৌরীপুর এলাকায় ১৯৬ মিটারের সড়কের পাকার কাজ শুরু হয়। কাজটি শেষ হয় গত রোববার।
    এ ব্যাপারে জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গৌরীপুরে গিয়েছি। এবিষয়টি আমি মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলে ধরেছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
    এ ব্যাপারে কথা বলতে ঠিকাদার কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগর চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সড়কের শ্রমিকদের কাজের ঠিকাদার জহির মিয়া বলেন, ঠিকাদারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি।
    এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। বিটুমিনের পুরুত ২৫ মিলিমিটার। তবে স্থানভেদে এক-দুই মিলিমিটার এদিক-সেদিক হতে পারে।
    অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক ও জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকালে সরজমিনে সড়কটি পরিদর্শন করেন। এসময় এলাকাবাসী সড়কের কাজের অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন তাদের কাছে।
    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক বলেন, “অভিযোগ পেয়ে আমি সড়কটি পরিদর্শন করেছি। যে ঠিকাদার এই কাজ করেছেন তার চেক আটকে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সড়কটি মেরামত করে দেওয়ার পরই তার পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে।”