হাওর রক্ষা বাঁধে নীতিমালায় কৃষক,কাজে সিন্ডিকেট !

    0
    287

    বিপ্লব রায়: হাওর বাওর এলাকা সুনামগঞ্জ। সারা দেশে হাওরকন্যা হিসেবে আখ্যায়িত পেয়েছে এ জেলা। প্রান্তিক জনগোষ্টি থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় কৃষকদের মাঝে ভয়ের সঞ্চার সৃষ্টি হয়। বন্যায় হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর সরকার কৃষকদের পাশে দাঁড়ান। ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে এদেশের কৃষক বাঁচিয়ে রাখেন।

    সরকারের এই উদ্যোগে ২০১৭ সালের ভয়কে জয় করেই ঘুরে দাঁড়ান হাওরপাড়ের কৃষকেরা। এরপর থেকেই বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরপাড়ের কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছেন হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে।

    এর আগেও সরকার বিভিন্ন ভাবে নানা পরিকল্পনাও নিয়েছে অতীতে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। প্রায় এক দশক আগে সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে ছিল-হাওর এলাকায় পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও খাল খনন। সেই সঙ্গে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়।

    এছাড়াও নদী অববাহিকায় পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও খাল খননের মাধ্যমে নাব্যতা সচল এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পরিকল্পনাও নেয়া হয়। এরপরও হাওর অ লের ফসলহানিসহ নানা বিপর্যয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সুনামগঞ্জের হাওরা লে ফসলডুবির ঘটনা নতুন নয়।

    দু’তিন বছর পরপরই ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সর্বপ্লাবী বন্যা হাওরে ঢুকে পড়ে। কৃষককে পথে বসিয়ে ‘ধানের খনি’ জলের অতলে হারিয়ে যায়। এক ফসলি এলাকা হওয়ায় ফসলডুবির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখানকার মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। তবে ২০১৭ সালের আগে বাঁধ নির্মাণের কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হত।

    ঠিকাদারদের লুটতরাজ্যের ফলে ঘটে যায় হাওরে মহামারি। এরপর থেকেই হাওরের বাঁধ সুষ্টুভাবে নির্মাণের জন্য সরকারর নতুন নীতিমালা প্রনয়ণ করেন। এই নীতিমালায় জেলা প্রশাসক, নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলৗকে দায়িত্বভার দেয়া হয়। ওদের মাধ্যমে হাওর এলাকায় কৃষক প্রতিনিধিদের দিয়ে বাঁধ নির্মাণে পিআইসি(প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করার কথা উল্লেখ করা হয়।

    সরকার যেখানে নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার কথা উল্লেখ করেছেন সেখানে নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

    সুনামগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ উপজেলায় হাওর রক্ষা বাঁধ কৃষকদের আতংকিত করে তুলছেন। এর মধ্যে শাল্লা উপজেলা।

    এই উপজেলায় প্রতি বছরই পিআইসি গঠন করা হয় জমিহীন ব্যাক্তিদের দিয়ে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নেয়া হয় সকল প্রকল্পের কাজ। কোনো প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া পিআইসি কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি।

    শুধু তাই নয়, যে এলাকায় বাঁধ সেই এলাকার কোনো লোকজনদেরকে তালিকায় রাখা হচ্ছে না। অন্য এলাকার লোক দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ দেয়া হচ্ছে। সরকারের নীতিমালায় পিআইসি কমিটিতে কৃষক অর্ন্তভুক্ত করার কথা থাকলেও এসব নিয়মনীতি মানছেন না সংশ্লিষ্টরা।

    ফলে বাঁধ নির্মাণে পিআইসি গঠনে নীতিমালার চরম পরিপন্থি হচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। অভিযোগ উঠেছে পিআইসি গঠন করে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন একটি সিন্ডিকেট চক্র। আর এই চক্রের লোকেদের দিয়ে পিআইসি গঠন করে প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করছেন। হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করা সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ প্রকল্প।

    এই উদ্যোগকে ধুলিসাৎ করার জন্য সিন্ডিকেট চক্রের লোকেরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের নামে আত্মসাৎ করার জন্য হাওর এলাকায় পিআইসি একটি দৃশ্য হয়ে গেছে। প্রতিটি পিআইসি প্রকল্পে একের অধিক আবেদন করা হয়েছে। দেখা গেছে কৃষকদের আবেদনটি বাতিল করে সিন্ডিকেটের আবেদনটি গ্রহন করে প্রকল্প কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

    হাওরপাড়ে এখন পিআইসি নিয়েই আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির এমন দৃশ্যপটে মুখ খুলেছেন শাল্লা উপজেলা ভেড়াডহর হাওরের কৃষক আব্দুস ছাত্তার। তিনি প্রকল্প কমিটি গঠন তালিকার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছেন। এমনকি উপজেলার প্রতিটি পিআইসি কমিটি যাচাই বাছাই করে প্রনয়ন করার দাবী জানিয়েছেন তিনি।

    হাওরপাড়ের কৃষকদের ভাগ্যের হাতিয়ার হচ্ছে হাওর রক্ষা বাঁধ। আর এই বাঁধকে নিয়ে প্রতিবছরই ছিনিমিনি খেলা হয়। প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে পিআইসি কমিটি গঠন করা হলে লুটপাটের রাজ্য থেকে সিন্ডিকেট চক্রটি বিতাড়িত হবে। সেই সুবাধে লুটপাট কায়েম করার সুবিধার্থে একটি সিন্ডিকেট চক্র উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে ঘিলে ফেলেছে।

    এই হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে চোর পুলিশের খেলা না খেলার জন্য হাওরের প্রতিটি কৃষকেরা দাবী জানিয়েছেন। তাই হাওর পাড়ের কৃষকদের দাবী সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর নেয়া খুবই জরুরী। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট