হবিগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রেই ঈদ কাটলো সাড়ে ১৫হাজার মানুষের

0
249
হবিগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রেই ঈদ কাটলো সাড়ে ১৫হাজার মানুষের
হবিগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রেই ঈদ কাটলো সাড়ে ১৫হাজার মানুষের

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধি: বাকপ্রতিবন্ধী রাহুল মিয়া বয়স ১০ বছর। ২৩ দিন ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। ঈদে নতুন জামার জন্য কান্না করলেও রিকশাচালক বাবা একমাত্র ছেলেকে কাপড় কিনে দিতে পারেননি। তাই পুরোনো কাপড় পরেই ঈদের নামাজের প্রস্তুতি।

অন্য বছর ঈদের নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে সেমাইসহ সাধ্যমতো খাবারের আয়োজন থাকলেও এবার কিছুই নেই। নামাজ শেষে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে তাই বাবা-ছেলের নীরবে বসে থাকা।

রাহুলের বাবা হাসান মিয়া বলেন, “আমি গরিব মানুষ। তাই কোরবানি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। তবুও অন্য বছর নিজের সাধ্যমতো ছেলেমেয়ের জন্য নতুন কাপড় কিনে দেই। বাড়িতে সেমাইসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে আমার স্ত্রী। ঈদের দিন বাড়িতে পোল্ট্রি মোরগ হলেও নেয়া হয়। কিন্তু এ বছর ঈদ কাটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। তাই খাবারের আয়োজন করব কীভাবে! ছেলেটা কান্নাকাটি করছে একটা কাপড় কিনে দিতে পারছি না।”

হাসান মিয়ার পরিবারের মতো হবিগঞ্জের কয়েক শ পরিবারের ঈদ কাটছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, হবিগঞ্জে ৩৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৯৯ জন মানুষ অবস্থান করছেন।

এবার তাদের ঈদ বিষাদময়। পরিবারের শিশুদের পরনে নেই নতুন কাপড়, নেই ভালোমন্দ খাবারের আয়োজন। অন্যান্য দিনের মতোই ভাত খেয়ে কিংবা না খেয়ে কাটছে ঈদের দিন।

মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে রাজিয়া খাতুন বলেন, ‘গরিব হলেও অন্য বছর ঈদের দিন বাড়িতে অনেক আয়োজন করা হয়। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে অনেক আনন্দ-ফুর্তি করি। পাড়াপ্রতিবেশীরা গোশত দেয়। কিন্তু এবার আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। তাই এক প্লেট সেমাইও ছেলেমেয়েদের মুখে তুলে দিতে পারিনি।’

কামাল মিয়া বলেন, ‘এক মাস ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে। হাতে একটা টাকাও নাই। ঈদে নতুন কাপড়ের জন্য দুইটা ছেলে কান্নাকাটি করছিল। পরে টাকা ধার করে কাপড় কিনে দিলেও এখন সেমাই কেনার টাকা নাই। তাই ঈদের নামাজ পড়ে গতকালের পান্তা ভাত খেয়েই বসে আছি।’

এদিকে ঈদের দিনে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে দেয়া হয় খিচুড়ি। আজমিরীগঞ্জের ইউএনও সুলতানা সালেহা সুমি বলেন, “দুপুরে আজমিরীগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভালো মানের ভুনা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি।”