হবিগঞ্জের বাল্লাকে স্থল বন্দর ঘোষনা করলেন মন্ত্রী শাহজাহান

    0
    196

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০মার্চ,এম এস জিলানী আখনজীঃ দীর্ঘ ৬৫ বছর পর আধুনিকায়ন হচ্ছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত বাল্লা স্থল বন্দর। বারবার পরিদর্শন আর অনিশ্চয়তার পর অবশেষে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বাল্লাকে স্থল বন্দর ঘোষনা করেন। পাশাপাশি স্থান হিসাবে কেদারাকোর্ট নির্ধারন করেন। তিনি এক সপ্তাহের মাঝেই গেজেট প্রকাশ করার পর কাজ শুরু করা হবে বলেও ঘোষনা দেন।

    বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বাল্লা স্থল বন্দর পরিদর্শনকালে আয়োজিত সভায় তিনি এই ঘোষনা দেন। তার এই ঘোষনায় চুনারুঘাটবাসী নতুন করে স্বপ্ন ফিরে পেয়েছে।

    চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের এর দাবীর প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, সুতাং ও খোয়াই নদী খননের ব্যবস্থা করা হবে। বাল্লা রেল লাইনে বাইপাস সড়ক নির্মান করা হবে এবং দ্রুত চুনারুঘাটে ইকনোমিক জোনের কাজ শুরু হবে।

    সভায় মন্ত্রী বলেন‘ খালেদা জিয়ার চোখে ছানি পড়েছে তাই তিনি দেশে উন্নয়ন দেখেন না। বিদেশে চোখের চিকিৎসা করে এসে বলেন টেকসই উন্নয়ন ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হয়না। বর্তমান সরকার যখন দেশে দ্রুত উন্নয়ন করছে তখন পাকিস্তানের মদদে দেশে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে। আমাদেরকে পাকিস্তানকে ঘৃনা করতে হবে। এমনকি পাকিস্তান টিমকেও ঘৃনা করতে হবে।

    সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ-৩ (সদও-লাখাই) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির, হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়, বাংলাদেশ স্থল বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ও চুনারুঢ়ঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রোকন উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জামিল, সহকারি কমিশনার তন্ময় ইসলাম, কাস্টমস এন্ড ভ্যাট যুগ্ন কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকবর হোসেন জিতু, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক উসমান আলী, ইউপি চেয়ারম্যান চৌধুরী শামছুন্নাহার, মাওলানা তাজুল ইসলাম।

    এতে বক্তব্য রাখেন সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ আলী মাষ্টার, সজল দাশ, সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ, যুগ্ন সম্পাদক আনোয়ার আলী, হুমায়ুন কবির, আঃ মালেক, বাল্লা আমদানি-রপ্তানী কারক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়া আওয়ামীলীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ। এর আগে ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাল্লা স্থল বন্দর আধুনিকায়নের বিষয়টি অনুমোদন করেন।

    হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম বিগত জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে বাল্লা স্থল বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তিতে পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও আধুনিকায়ন এর উদ্যোগ ছিল না হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত বাল্লা স্থল বন্দরের কাজ। দফায় দফায় আশ্বাস আর পরিদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় শ্রমিকরা মাথায় বোঝা নিয়ে পায়ে হেটে নদী পার হয়ে চলছে  আমদানী রফতানীর কাজ।

    বর্ষাকালে এই আমদানী-রপ্তানীর কাজ আরও বেশী করে বিঘœ ঘটে। ফলে আমদানী-রপ্তানীর খরচও বেড়ে যাবে। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই বন্দরের আধুনিকায়নের দাবী জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। হবিগঞ্জ সীমান্তের বাল্লা স্থলবন্দরটি ১৯৫১ সালে ৪.৩৭ একর জমির উপর প্রতিষ্টিত হয়।

    এ স্থান দিয়ে বর্তমানে দু’দেশের মাঝে ব্যবসা বানিজ্য চলে আসছে। এখানে রয়েছে চেকপোষ্ট সহ সীমান্ত ঘাটি। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ বাল্লা স্থলবন্দরের ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কেদারাকোট নামক স্থানে স্থলবন্দর স্থাপনের চেষ্টা করে।

    ২০১২ সালের  ১১ জুন  কেদারাকোট নামক স্থানে স্থল বন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জন্য বাংলা-ভারতের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ৫ সদস্য দলের নেতৃত্ব দেন তখনকার বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের বানিজ্য উপ-সচিব মোকাব্বির হোসেন ও ভারতের পক্ষে ৫ সদস্য দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের কমার্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ইন্দিরা মারাঠি। প্রস্তাবিত কেদারাকোট স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে বানিজ্য উপ-সচিব মোকাব্বির হোসেন ও ইন্দিরা মারাঠি সাংবাদিকদের  বলেন, দু’দেশের সরকার ত্রিপুরা দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য প্রসারে আগ্রহী।

    তাই বাল্লা সীমান্তের কেদারাকোট নামক স্থানে স্থলবন্দর স্থাপন করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। ভারতীয় দল এই স্থল বন্দর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে। এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুলাই তখনকার বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যোরোর ভাইস চেয়ারম্যান জালাল আহমেদও বর্তমান বন্দর ও কেদারাকোট উভয় স্থান পরিদর্শন করেন এবং স্থল বন্দর উন্নয়ন এর গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।

    সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারী মাসে ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে বাল্লা স্থল বন্দর প্রতিষ্ঠায় ঐক্যমত পোষন করা হয়। এর কিছু দিন পরই স্থান নির্ধারনের জন্য বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ পরিদর্শন এর পর বর্তমান স্থানে স্থল বন্দর আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারত খোয়াই নদীতে ব্রীজ করবে এবং তাদের অংশের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করবে এবং বাংলাদেশ তারে অংশের রাস্তা সংস্কার এবং অবকাঠামোড়ত উন্নয়ন কাজ করবে।

    দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সম্ভাবনাময় এ স্থল বন্দরটি বিগত ১৯৯১ সালে পুনরায় চালু হওয়ার পর এ বন্দর দিয়ে সিমেন্ট, ইট-পাথর, মাছ নানা পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বিনিময়ে ভারত থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল, ফলমুল, বাঁশ, চকলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি পণ্য আমদানি হচ্ছে। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে লোকজনও বৈধভাবে পারাপার হচ্ছেন।