হবিগঞ্জের খোয়াই,কালনী,কুশিয়ারার পানি বিপদ সীমার উপরে

    0
    241

     হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওড় গুলোর ধানী জমি তলিয়ে যাচ্ছে,কাঁদছে কৃষক!

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৬এপ্রিল,শংকর শীল,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রায় ১৯ দিনের বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ হবিগঞ্জ সদর,উপজেলার ভাটি অংশের ১৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর বোরো ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা দিনরাত হাওরের ফসল রক্ষায় কাজ করছেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ বাধগুলোতে তারা নিজের উদ্যোগে মাটি ভরাট করছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের কোন সহায়তা করছেন না। হবিগঞ্জের খোয়াই নদীসহ আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কালনী, কুশিয়ারা ও ভেড়ামোহনা নদীতে গত ৪৮ ঘন্টায় ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সেখানে বিপদসীমার হবিগঞ্জে ৮.৬০ ও আজমিরীগঞ্জে ৭.৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর এক ফুট পানি বাড়লেই বাধ তলিয়ে যাবে। এতে হুমকির মুখে কৈয়ারঢালা প্রকল্পের ১১ হাজার হেক্টর জমি। পাশাপাশি আশপাশের হাওরগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
    বুধবার (৫ এপ্রিল) কাকাইলছেও ইউনিয়নের মাহতাবপুর এলাকায় বাধের উপর দিয়ে পানি হাওরে ঢুকে হাওরের জমি তলিয়ে গেছে। কৃষকরা তাৎক্ষণিক বাধটি বাধেন। পানি আরো বাড়লে বাধটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
    আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা জানান, উপজেলার নিচু এলাকার অধিকাংশ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার সাতগাঁও বাধ, বছিরা নদীর খালের বাধ, কাটাগাঙ্গের বাধা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
    আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আতর আলী মিয়া জানান, কৃষকরা যে আশা নিয়ে তাদের জমিতে ফসল ফলিয়েছিলেন সে ফসল আজ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার মাহতাবপুরে বাধের উপর দিয়ে পানি উঠলে তাৎক্ষণিক কৃষকরা বাধটি বাধলেও বুধবার বাধটি ছুটে গেছে। এতে কাকাইলছেও শিবপাশা ইউনিয়নসহ বানিয়াচঙ্গ উপজেলার মুরাদপুর পৈলারকান্দি, সুজাতপুর ইউনিয়নের নিচু জমিগুলো তলিয়ে গেছে। তিনি স্থানীয়ভাবে বাধগুলো নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
    বুধবার সন্ধ্যায় বানিয়াচং ইকরাম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঢলের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। অনেকে কৃষকরা তাদের কাচাঁ জমি কেটে ফেলেছেন। ইকরাম গ্রামের সামছুর রহমান জানান, এবার আমি ৮০ কের জমিতে বোরো ধান চাষ করছিলাম। কিন্তু ৬০ কের জমি পানিতে তলি গেছে। আর মাত্র ২০কের জমি বাকি রয়েছে। পানি বাড়লে এ জমিগুলো কাটতে পারবো না। তিনি বলেন-ওই এলাকার কাতিয়া, হুগলী, জিনারজুড়ী, হিজলীসহ বেশ কয়েকটি হাওরের সম্পন্ন সফল তলিয়ে গেছে। সরকারের কাছে একটাই দাবি আমাদের সফল যাতে রক্ষা পায় সে দিক বিবেচনা করে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার। কুমড়ী গ্রামের বাসিন্দা শচীন্দ্র কলেজের ছাত্র মাহফুজুল ইসলাম জানান, তাদের ৫ একর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

    এছাড়া এলাকার শত শত হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আজমিরীগঞ্জের নোয়াগরের কৃষক শাহজাহান মেম্বার জানান, কাটাগাঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ খনন না হওয়ায় পলি পড়ে তা ভরে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাওর হুমকিতে পড়ে যায়। এছাড়া বেড়ি বাধ না থাকায় ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে কি-না বলা মুশকিল। তিনি সরকারের কাছে খাল খনন ও বেড়িবাধ নির্মাণের দাবি জানান।
    কৃষক রেনু মিয়া জানান, এই ফসল হল তাদের একমাত্র অবলম্বন। যদি ফসল রক্ষা করা না যায় তাহলে সারা বছর জীবিকা নির্বাহ দায় হয়ে পড়বে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় নলাইর হাওর,
    কোদালিয়া হাওর, ঝিনুয়া হাওর ও মাকালকান্দি হাওরের ফসল রক্ষার জন্য স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ দিচ্ছেন।নোয়াগাওড় হাওরে অনেক কৃষককে কাঁচা ধান কেটে নিতে দেখা যায়।
    কৃষক আব্দুর রহিম জানান, তার বেশ কিছু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন সেগুলো তিনি কেটে আনছেন গরুকে খাওয়ানোর জন্য। গফুর মিয়া জানান, বৃষ্টি আসার আগেই যদি বাধ নির্মাণ করা যেত তাহলে জমির ফসল রক্ষা করাএসম্ভব হত। কৃষক আব্দুর রহমান জানান, এই হাওরে তার ৮ একর জমি রয়েছে। এবার ধান পাকার আগেই জমি তলিয়ে গেছে। ফলে এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারবেন না।
    কৃষক ফারুক মিয়া জানান, ধার-দেনা করে অনেক কষ্টে দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। কিন্তু পানিতে পুরো হাওরই তলিয়ে গেছে।কৃষক সুমন মিয়া জানান, ধানে সবে রঙ ধরেছে। এর মাঝেই তলিয়ে গেছে।এগুলো কেটে আনলে গরুকেও খাওয়ানো যাবে না। সবুজ মিয়া জানান, তিনি ৯ একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে।জমির সামনে দাঁড়ালে চোখ জুড়িয়ে যেতো। কিন্তু সর্বনাশা বানের পানি তার সব আনন্দকে বিষাদে পরিণত করে দিয়েছে।রাত সোয়া ১১টার দিকে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৬০ ও আজমিরীগঞ্জে ৭.৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বাল্লা এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। এ হিসেবে খোয়াই নদীর পানি ও কমে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বাধ রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।তিনি আরও জানান, যদি বাঁধ রক্ষা না করা যায় তাহলে কৈয়ারঢালা প্রকল্পের ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হবে।
    হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি হেক্টর জমির ফসল
    নষ্ট হয়েছে। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে করে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তিনি আরও জানান, লাখাই উপজেলার হাওরগুলোতে পানি এসেছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে এবং আজমিরীগঞ্জের কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে মাহতাবপুর এলাকার ফসল বিনষ্ট হয়েছে।

    অপরদিকে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের কৃষক সোহেল তালুকদার  আমার সিলেট প্রতিবেদককে জানান,”সিলেট থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বড় হাওড়ের হাজার হাজার একর ধানের জমি পানির ধীরে ধীরে চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে,এখনও ধান পাকেনি,কাটার কোন সুযোগ নেই তিনি আরও জানান গত চার বছর ধরে অষ্টগ্রাম বড় হাওড়ের কৃষকরা কখনো শিলায় কখনো অসময়ে বন্যার কারনে এলাকার একমাত্র জীবিকার মাধ্যম বোরো ধান হাড়িয়ে দিশেহারা।তিনি আরও বলেন আমাদের ক্ষতির প্রচারও নেই”।
    এদিকে বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমিগুলো পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।