স্মৃতির মিনারে আলোর বাতিঘর শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ

    0
    710

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১মে,ইমরান হুসাইন তুষারঃ কিছু মানুষের স্মৃতি হৃদয়ে অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে। কিছু মানুষের বিয়োগ নিদারুন যাতনাময়। কিছু মানুষের জীবনবোধ হয়ে উঠে হাজারো সংগ্রামী জীবনের অনুপ্রেরণা। তেমনি একজন মানুষ শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ্ (রহ.)। এদেশের সুন্নী অঙ্গনে সু-পরিচিত এবং সকলের আত্মার আত্মীয় ছিলেন এ মানুষ’টি। তাঁর কর্মময় জীবন সংগ্রাম আজো এদেশের লাখো সুন্নী জনতার হৃদয়ে প্রেরণার কম্পন সৃষ্টি করে।

    তাঁর ছোট্ট জীবনের অর্জন স্মৃতি আজো লাখো সুন্নী জনতার চোখ ভরিয়ে তুলে বিয়োগ বেদনার অশ্রুতে। ১৯৬২ সালের কোন শুভক্ষণে নারায়ণগঞ্জের আকাশের উদিত হয়েছিল শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ নামক নকিব। তাঁর শৈশব ও কৈশরের হাজারো স্মৃতি আর সু-দীর্ঘ কালের পদ চিহৃ বয়ে বেড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জের মাটি। একজন আদর্শ শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর অনন্ত স্মৃতির নিঃশব্দ ভার ভয়ে চলেছে তাঁর প্রিয় বিদ্যাপীঠ আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রতিষ্ঠিত জামেয়া কাদেরীয়া কামিল মাদরাসার রুমগুলো। যেখান তিনি প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করে ছিলেন। একজন সহজ, সরল, মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.)। তাঁর ক্ষণিক পথচলার মাঝে তিনি হাজারো স্মৃতি চিহৃ রেখে গেছে এই পৃথিবীর বুকে।
    এদেশে সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার সব ধরণের আন্দোলনে আল্লামা বাকী বিল্লাহ ছিলেন প্রথম সারির প্রথম একজন। তিনি সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য ছিলেন সদা আত্মনিবেদিত। আর তাই সুন্নীয়তের রাজনৈতিক, সামাজিক ও তরিক্বত ভিত্তিক সব ধরনের কর্মকান্ডে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা প্রতিষ্ঠার কিছু কালের মধ্যই তিনি নিজেকে এ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত করে ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি আর সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী ছিল জেলা সভাপতি। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা নারায়ণগঞ্জ জেলার ব্যবস্থাপনায় ছাত্রসেনার অকৃত্রিম পৃষ্ঠপোষক ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা আবিদ শাহ আল-মাদানী (রহ.)’র সদারতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ জশনে জুলুছ’টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

    অরাজনৈতিক ছাত্রসেনার রাজনৈতিক অঙ্গনে পর্দাপণের পর অনেক সুবিধাবাদী, ওয়ানটাইম সুন্নী পিছনের দরজা দিয়ে পালায়ন করলেও আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.) সকল সংকীর্ণতাকে পরিহার করে এগিয়ে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘‘মোমবাতি’’ প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচন করেছেন। তিনি প্রায় বলতেন- “সুন্নীয়তের প্রকৃত রূপ হলো শরীয়ত, তরিকত আর সিয়াসত (সুন্নীয়তের রাজনীতি)। আর এর কোন একটিকে বাদ দিয়ে সুন্নীয়তের পরিপূর্ণ খেদমত সম্ভব নয়।”

    সাংগঠনিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালনসহ আল্লামা খাজা আবু তাহের (রহ.) নেতৃত্বে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের যুগ্ম-মহাসচিব, আল্লামা অধ্যক্ষ হাফেজ এম.এ.জলিল (রহ.)’র নেতৃত্বে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব পালনসহ এদেশে সুন্নী জনতার একক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সহ-সাংগঠনিক সচিবের গুরু দায়িত্ব পালন করেন।

    আল্লামা খাজা আবু তাহের (রহ.)’র নেতৃত্বে রাজধানী ভিত্তিক সুন্নী আন্দোলনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল। আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.) ছিলেন সেই আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক। তিনি রাজধানীর বুকে সুন্নীয়তের দুই নকিব আল্লামা খাজা আবু তাহের (রহ.) ও আল্লামা অধ্যক্ষ হাফেজ এম.এ.জলিল (রহ.)’র সাথে সব সময় ছায়ার মতই ছিলেন। চারিত্রিক দিক থেকেও এই দুই মহান মনীষীর ফটোকপি ছিলেন আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.)। তিনি ক্ষনিকের এই জীবনে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের প্রতিষ্ঠা করে গেছে আপন পীর ও মুর্শিদের নামানুসারে“ জামেয়া গাউছিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদরাসা”।

    তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরাতন জিমখানাস্থ কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদরাসা, মসজিদও খানকাহ’টিও তাঁর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলায় বহু মসজিদ তাঁর অক্লান্ত শ্রমের ফলে সুন্নী উলামায়ে কেরামগণের দখলে আসে। শুরু হয় সালাতু সালাম, মিলাদ কিয়াম, শবে বরাত পালনসহ আকায়েদে আহলে সুন্নাতে পরিপূর্ণ মারকাজে রূপ নেয় নারায়ণগঞ্জ জেলার মসজিদ গুলো। নারায়ণগঞ্জবাসী ফিরে পায় ইসলামের আদি অবিকৃত শাশ্বত বিধান সমূহ।
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আহলে বাইত আলাইহিস সালাম ও পীরানে পীর হযরত গাউছুল আ’যম আব্দুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র অনন্য প্রেমিক ছিলেন আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.)। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আহলে বাইত আলাইহিস সালামের কত বড় মাপের আশেক ছিলেন তার তাঁর বড় ছেলে আব্দুল মোস্তফা রাহিম ও ছোট ছেলে গোলাম পাঞ্জেতনের নামের দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যায়। যে সময় নবীদ্রোহীরা এই সকল নামকে শিরিক-বেদাত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে ঠিক সেই সময় এমন নাম নি:সন্দেহে অনেক বড়মাপের আশেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফিদায়ে আহলে বাইত আলাইহিস সালাম ছাড়া আর কে বা রাখতে পারে। তাঁর বাসার দরজার গ্রিরিলের উপর না’লায়েন শরীফের নকশা’টি তাঁর হুব্বে রাসূলের আরেক’টি পরিচয় বহন করে। যেমনি নবী পাকের বে-মাসাল আশেক, তেমনি গাউছে পাকেরও অনন্য প্রেমিক ছিলেন আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.)। আজো প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে কানে বাজে-
    “ আল্লাহ মিলা দো গাউছুল আযম,
    নবী মিলা দো গাউছে আযম,
    ওলী বানা দো গাউছুল।”
    এমন ফিদায়ে গাউছুল আযম বেনজির। বেশ একটা তৃপ্তি নিয়েই প্রায় মাহফিলে তিনি গাইতেন। তাঁর এই কাসিদা একটি ব্র্যান্ডে পরিনিত হয়েছিল। আমি নিজেও অগণিত বার তাঁর কণ্ঠে এই কাসিদা শুনে পেয়েছি। তাছাড়াও-
    “মদিনার গোলামী আমায় দে,
    ও মুর্শিদ মোরে,
    নবীজির গোলামী আমায় দে।
    যে বুকে মদিনা আছে,
    আরশে আজিম সিজদায় পড়ে।
    সেই ঈমান নসিব করে দে,
    ও মুর্শিদ মোরে।”
    নাতগুলো আজো হাজারো বাকী বিল্লাহ (রহ.) ভক্তদেরকে কাদাঁয় তাঁর স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিয়ে।
    অদ্যম সাহসী এক বীরপুরুষ ছিলেন আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মহান আউলিয়ায়ে কেরামগণের শানে বিন্দুমাত্র কূটক্তি তিনি বরদাশত করতে না। তিনি সর্বদা নবী প্রেমে ছিলেন আপোসহীন। নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের বহু স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বাতিলের বিরুদ্ধে অদ্যম সাহসীকতার সাথে রুখে দাড়িঁয়ে ছিলেন। কুরআন হাদিসের অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে বাতিলের স্বরূপ বহু বার তিনি উন্মোচন করে ছিলেন । হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র ন্যায় বাতিলে বিরুদ্ধে বহুবার তাঁর হায়দারী হাকে বাতিলের হৃদয় সংকুচিত হয়েছে এবং দিকে দিকে সুন্নীয়তের বিজয় নিশান উড়েছে। তাঁর এই সাহসীকতার জন্য তাঁকে অনেক আলেম-উলামা ও পীর -মাশায়েখ তাঁকে বাকী বিল্লাহ জালালী বলে ডাকতেন।
    তিনি বেশ মিষ্টি কণ্ঠের অধিকারী না হলেও। তাঁর কুরআন-হাদিসের অকাট্য দলিল ও যুক্তি নির্ভর ওয়াজ যে কোন মানুষকেই আকৃষ্ট করতেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, পাথুরিয়া থেকে রূপসা এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বাকী বিল্লাহ (রহ.)’র পা পড়েনি। তাঁর আন্তরিকতার বন্ধনে বাধাঁ পড়েছে এদেশের বহু মানুষের হৃদয়। এতো নাম-ডাক থাকার পড়েও কোন রকম অহংকারবোধ ছিলনা। যেখান থেকে সুন্নীয়তের প্রয়োজনে ডাক আসতো, ছুটে যেতেন। কি দিন বা রাত। তা নিয়ে ছিল না কোন অযুহাত। কখনোই শুনিনি তিনি কারো কাছে মাহফিলের হাদিয়া নিয়ে কোন ডিমান্ড করেছেন।

    একবার তাঁর সাথে আমি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক মাহফিলে গিয়েছিলাম। গ্রামের কিছু সুন্নী ছেলেরা মিলে মাহফিল’টি আয়োজন করেছিলেন। তাঁকে ওরা মাত্র এক হাজার টাকা হাদিয়া দিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি চার শত টাকা ওদেরকে পকেট খচর হিসেবে দিয়ে দেন। তখন আমি বলাম আপনি এক হাজার টাকা হাদিয়া পেলেন। আবার সেখান থেকে চার শত টাকা ওদেরকে দিয়ে দিলেন যে। তিনি আমাকে উত্তরে বললেন- “শুনো আমি ছাত্র জীবনে সংগঠন (ছাত্রসেনা) করেছি। তাই ওদের কষ্টটা বুঝি। দশ জনের কাছে হাত পেতে ওরা মাহফিল আয়োজন করে। আমাদের তো উচিত উল্টো ওদেরকে হাদিয়া দিয়ে মাহফিল করা।” আমি তখন বললাম-তাই বলে যেখানে অন্যরা দশ-বিশ হাজার টাকা নেয়। সেখানে আপনাকে মাত্র ছয় শ টাকা দিবে তা কি করে হয়। অন্তত গাড়ী ভাড়াটা তো দিক। তিনি মিষ্টি হেসে বলেন- অন্যরা তো দামী মৌলভী। তাই তাদের রেট বেশি। আমি ছোট খাটো ছয়’শ টাকার মৌলভী। তাই আমার হাদিয়া ছয়’শ টাকা। আজ-কাল অনেক মাওলানা সাহেবরা কোন রকম ছাপড়ার ঘর তুলে মাদরাসার নাম দিয়ে টাকা তুললেও তিনি কোথাও মাদরাসার নাম বলে টাকা চাইতে না।

    বরং নিজের রক্তপানি করা টাকা দিয়ে গড়ে তুলে ছিলেন “জামেয়া গাউছিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদরাসা”। আমি মনে করি এই মাদরাসার ছাত্রদের মাঝে হাজারো শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.) ঘুমিয়ে আছে। তারা যেদিন জেগে উঠবে। সেই দিন দিকে দিকে সুন্নীয়তের বিজয় নিশান উড়বে। সেই দিন আর বেশি দূরে নয়। মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাওলানা আবু নাছের মুহাম্মদ মুসা মহোদয় দিবা-রাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলছে। শহীদ বাকী বিল্লাহ (রহ.) ভাবধারা আদর্শ সুন্নী সিপাহসালার তৈরীর জন্য।
    বাকী বিল্লাহ (রহ.) ছিলেন সুন্নীয়তের ঐক্যের অনন্য প্রতীক। তিনি আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র হাতে বায়াত গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের সকল হাক্কানী দরবার ও পীর -মাশায়েখদের সাথে তাঁর অত্যান্ত আর্ন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আর তাই অনেকে দরবারের পীর সাহেবগণ বলতে বাকী বিল্লাহ (রহ.) আমার দরবারের। তিনি এক পীরের মুরিদ হয়েও অন্য পীরের প্রতি তাঁর আদব ও ভক্তি দেখে বুঝার উপায় ছিল না। তিনি কার মুরিদ।
    বাতিলের বিরুদ্ধে রুদ্রমূর্তি, সুন্নীয়তের কাজের হাজারো ব্যস্ততার নিচে চাপা পড়েনি বাকী বিল্লাহ (রহ.) মানব প্রেমী রূপটি। একবার মাওলানা মাহবুব আলকাদেরীকে সাথে নিয়ে একটি মাহফিল থেকে ফির ছিলেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলেন শীতের রাতে একজন বৃদ্ধ খালি গায়ে শীতে কাপছে। তিনি তাঁকে বাসায় নিয়ে এসে। শীতের কাপড় পড়ান এবং খাবার খাওয়ান। খাওয়া দাওয়া শেষ। লোক’টিকে জায়নামাজ দিয়ে বললেন- বাবা আমি পাশের ঘরে আছি। আপনার কিছু দরকার হলে আমাকে ডাক দিবেন। আর এই রইল জায়নামাজ ফজরের নামাজ পড়ার জন্য। লোক’টি বললেন- বাবা অভয় দিলে আমি একটা কথা বলবো। আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.)’র সম্মতি পেয়ে লোক’টি বললেন- বাবা আমি মুসলমান না। আমি হিন্দু। সে ভাবলেন হয় তো এ কথা শুনার পর আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.) তাকে বাসা থেকে হয় তো বের করে দিবেন। কিন্তু বাকী বিল্লাহ (রহ.) বললেন- ঠিক আছে আপনি ঘুমান। কিছু প্রয়োজন হলে ডাকবেন কিন্তু। পর দিন সকালের লোক’টি বিদায় নেয়ার সময় বাকী বিল্লাহ (রহ.) তাকে হাতে কিছু পথ খচর তুলে দেন।
    তাঁর ছোট্ট জীবনের বাকেঁ বাকেঁ রয়েছে হাজারো স্মৃতি আর নবী প্রেমের অনন্য উদাহরণ।

    আজ শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ্ (রহ.) আমাদের মাঝে নেই। আছে তাঁর জীবনাদর্শ আর অসমাপ্ত কাজ। তাঁর ভাবধারা উত্তরসুরী হিসেবে আমদেরকেই তাঁর অসমাপ্ত কাজ গুলো এগিয়ে নিতে হবে। তাঁর পুত্রদ্বয় আব্দুল মোস্তফা রাহিম ও গোলাম পাঞ্জেতন তাঁর ছায়া কপি। পিতার মতই উদ্যোমী ও দক্ষ সংগঠক। পিতার পথ অনুসরণ করে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ। বড় ছেলে আব্দুল মোস্তফা রাহিম মিশর আল-আযহারে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশত্যাগের পূর্ব মূর্হুত পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ঢাকা মহানগরের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

    সুদূর প্রবাসে বসেও সংগঠনের জন্য তার দরদের, আমাদেরকে বার বার সুন্নীয়তের জন্য নিবেদিত প্রাণ শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.)’র কথা মনে করিয়ে দেয়। আর ছোট ছেলে গোলাম পাঞ্জেতনের তো জুরি নেই। আজকের সুন্নীয়তের রাজপথ ওর শ্লোগান ছাড়া যেন প্রাণ শুন্য। সুন্নীয়তের জন্য বাবার ন্যায় তারও আর্ন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। আছে অদ্যম ইচ্ছা শক্তি আর বুক ভরা নবী প্রেম। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ওর বলিষ্ট ভূমিকা সকলের কাছে প্রশংসনীয়।
    ২০০৪ সালের ২২ মে শহীদ আল্লামা বাকী বিল্লাহ (রহ.) চাঁদপুরের একটি মাহফিল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। তিনি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েও যেন হারাননি। গভীর সমুদ্রে দিশেহারা নাবিককে যেমনি সু-দূর থেকে লাইট হাউজ পথের দিশা দেয়। বাকী বিল্লাহ (রহ.) তেমনি করে যুগে যুগে কালে কালে আমাদেরকে সুন্নীয়তের এ দূর্গম গিরি কান্তার মরু পাড়ি দেয়ার সাহস ও শক্তি যোগাবে। আগামী ২২ মে শহীদ বাকী বিল্লাহ (রহ.) অন্তর্দানের ১৩ বছর পূর্ণ হতে চলছে। আজকের এই দিনে তাঁর প্রতি অকৃতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণের ইতি টানছি।
    লেখক : সহ-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা, কেন্দ্রীয় পরিষদ।