স্ব-উদ্যোগে জৈন্তাপুরে স্বাবলম্বি প্রায় ৪শত পরিবার

    0
    238

    ধানের চাইতে সব্জি চাষ লাভজনক, সুইচ গেইট নির্মানের দাবি

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬অক্টোবর,রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃসিলেট জৈন্তাপুর উপজেলার পূর্ব-রুপচেং, হর্নি, পাখিবিল, কামরাঙ্গী, কালিঞ্জি ও বাইরাখেল গ্রামের প্রায় ৪শতাধিক কৃষকরা পরিবার লুবি (আঞ্চলিক নাম লাখাই) চাষ করে সাভলম্বি হয়েছে। এক সময়ে সীমান্তের হত দরিদ্র কৃষক ভাগ্যের চাকা ঘুরতে সব্জি চাষে প্রাণপণ চেষ্টা করতে শুরু করে। পরবর্তিতে এক দুই জন করে এখন গ্রামের প্রত্যেকটি কৃষক পরিবার সব্জি চাষ শুরু করে।

    বর্তমানে ৬টি গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার সারা বৎসর জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির সব্জি চাষ করেছেন। তবে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জৈন্তাপুর হতে থেকে সরকারী ভাবে পায়নি কোন আর্থিক সাহায্য ও রোগ বালাইয়ের পরামর্শ। বর্তমানে শুধু মাত্র পানি সংকটের কারনে স্থানীয় পুটিখালে একটি সুইচ গোইট নির্মানের দাবী কৃষক পরিবার গুলোর।

    সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী নিজপাট ইউনিয়নের পূর্ব-রুপচেং, হর্নি, পাখিবিল, কামরাঙ্গী, কালিঞ্জি ও বাইরাখেল গ্রামের প্রায় ৪শত কৃষক পরিবার ধানের জমিতে বৎসরের ১০মাস বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করেন আসছেন। বর্তমানে ৬টি গ্রামে প্রায় ২শত একর ধানের জমিতে (আঞ্চলিক নাম) লাখাই (লুবি) চাষ করে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরন হয়েছে। পূর্ব-রুপচেং গ্রামের মৃত আরজান আলীর ছেলে জামাল উদ্দিন(৩০) এর সাথে আলাপকালে প্রতিবেদককে জানান- গত ৩বৎসর যাবত তিনি নিজ উদ্যোগে ৩৩ শতাংশ পৈত্রিক ভূমিতে ধানের পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধাতিতে বিভিন্ন ঋতুর সাব্জি যেমন লাউ, শিম, করলা, লাখাই সহ নানান রকমের সব্জি নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে চাষ করছেন।

    বর্তমানে তিনি ১একর ভুমিতে লাখাই চাষ করেছেন। সপ্তাহের ৩দিন করে তিনি ৬শ হতে ১ হাজার  কেজি পর্যন্ত দেশি জাতের লাখাইয়ের ফলন পাচ্ছেন। এপর্যন্ত তার বিক্রয় প্রায় ৩লক্ষ টাকার উপরে লাখাই বিক্রয় করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন তার বাগানে আর দেড় থেকে ২মাস পর্যন্ত ফলন পাবেন তাতে আরও ৪/৫লক্ষ টাকা উপর্জন হবে। তাই তিনি বলেন ধানের চাইতে সব্জি চাষ বেশি লাভ জনক। তার এই বাগান করতে বীজ, সার, কীটনাশক সহ মাচা তৈরী করতে প্রায় ৪৫হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে মাচার উপর নতুন করে উন্নত জাতের শিম গাছ লাগিয়েছেন তাতে গাছে ফল ধরতে মাস দেড়েক সময় লাগবে যার ফলে শীম চাষেও তিনি লাভবান হবেন।

    তার দাবী পানি সংকটের কারনে তাদের মারাত্বক অসুবিধায় পড়তে হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন সহযোগিতা যেমন প্রশিক্ষণ রোগ বালাই সম্পর্কে জ্ঞান, কৃষিকার্ড বা সরকারী সাহায্যের পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সাহায্য দুরের কথা, প্রকৃত কৃষক হয়েও কোন কৃষি কার্ড পাননি। একই ভাবে হর্নি গ্রামের সামুছুল খলিল আহমদ(৪০), পাখিবিল গ্রামের কুটি মিয়ার ছেলে ফারুক আহমদ(৩৫), পাখিবিল গ্রামের ইছুব আলীর ছেলে আতিকুল হক(৩৫), তাদের সাফল্যের কথা বলেন।

    কামরাঙ্গী গ্রামের মৃত ফরমান আলীর ছেলে আব্দুস ছাত্তার(২৬) আলাপকালে প্রতিবেদককে জানান- গত ৪/৫বৎসর যাবত তিনি নিজ উদ্যোগে প্রায় ২বিঘা জমিতে ভূমিতে লাউ, শিম, করলা, লাখাই, টমেটো মিষ্টি কুমড়া সহ নানান রকমের সব্জি চাষ করছেন। বর্তমানে তিনি ৩বিঘা জমিতে লাখাই, লাউ, করলা চাষ করেছেন। সপ্তাহের ৬ দিন করে তিনি ১শ হতে ৩কেজি পর্যন্ত দেশি জাতের লাখাইয়ের ফলন পাচ্ছেন। এপর্যন্ত তার বিক্রয় প্রায় ৪লক্ষ টাকার উপরে।

    তিনি আশা প্রকাশ করেছেন তার বাগানে আর ১মাস পর্যন্ত ফলন পাবেন তাতে আরও ২/৩ লক্ষ টাকা উপর্জন হবে। তার এই বাগান করতে বীজ, সার, কীট নাশক সহ মাচা তৈরী করতে প্রায় ৫৫হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে শিম গাছ লাগিয়েছেন এবং বেগুন টমেটে মিষ্টি কুমড়া চাষ করবেন। তার দাবী পানি সংকটের কারনে তার ব্যায় বেশি হচ্ছে। তিনি আরও জানান পুটিখাল নামক খালে অন্তত ৭০টি ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে কৃষকরা সব্জি খেতে পানি সংগ্রহ করছে।

    উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন সহযোগিতা যেমন প্রশিক্ষণ রোগ বালাই সম্পর্কে জ্ঞান, কৃষিকার্ড বা সরকারী সাহায্যের পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- গত বৎসর আমাকে ইউপি মেম্বার আমাকে একটি কার্ড দিয়েছেন। কিন্তু আর পর্যন্ত এই কার্ড কোন উপকারে আসেনি। কৃষি অফিসের ফিল্ড কর্মী সোহরাব হোসেন এর কাছে রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি একমাত্র পরামর্শ দেন।

    ৬টি গ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন- শুনেছি সরকার কৃষকদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহনে করে থাকে। এছাড়া পরিত্যাক্ত ভুমি কৃষির আওতায় নিয়ে আসার জন্য ভতিুকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোন কিছু পাই না। উপজেলায় কৃষি বরাদ্ধ যা আছে সব দরবস্ত ইউপির অধিনে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের দাবী যদি স্থানীয় পুটিখালে একটি সুইচ গোইট নিমার্ণ করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা পানির অভাব দূর করে অব্যবহৃত জমি গুলোকে ফসলের আওতায় নিয়ে আসতে পারব এবং গোটা ৬গ্রামের বাসিন্ধারা আরও সাভলম্বি হবে বলে আশাবাঁধ ব্যক্ত করেন। বর্তমানে সীমান্ত অঞ্চলের লাখাই সিলেটের বিয়ানী বাজার, গোলাপগঞ্জ এবং সিলেট বিভাগের ছোট বড় সব বাজারে আমাদের লাখাই সরবরাহ হয়ে আসছে।

    এ ব্যপারে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন-অনেকেই এসএমই সদস্য ভূক্ত নন। তাই তিনি সরকারী ভাবে কোন আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না, তবে আমি ঐসব এলাকায় যাই এবং কৃষকদের সৃপরামর্শ সহ বিভিন্ন রোগ-বালাই সম্পর্কে ও প্রতিকারের পরামর্শ প্রধান করি। তবে পানির জন্য অনেক জায়গা অনাবদি পড়ে থাকে। পুটিখালে একটি সুইচ গেইট করা হয় তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে।