স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে চলছে কমলগঞ্জের ১৫২টি প্রাইমারী স্কুল

0
682
স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে চলছে কমলগঞ্জের ১৫২টি প্রাইমারী স্কুল


শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): দীর্ঘদন পর ক্লাসে আসতে পেরে উচ্ছসিত ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিশ^জিত উরাং,সৌরভ মিয়া,নাজমুল,তাজ উদ্দিনের ভাষায় আনন্দের ইশকুল,নিরাপদ ইশকুলে আগের মতো ভীড় নেই,বারবার হাত ধুই,মাস্ক পরার অভ্যাস হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমনের কারণে টানা দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর সরকারি নির্দেশনায় সারা দেশের ন্যায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের স্কুল কলেজ,মাদ্রাসা,কিন্ডার গার্টেনসহ ২২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে।স্কুল খোলার সিদ্ধান্তে কয়েকদিন পূর্বে থেকে সরকারি নিয়ম মোতাবেক পাঠদানে ক্লাস রুটিন তৈরি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবানুনাশক প্রয়োগ শেষে উপজেলার ১৫২টি প্রাইমারী স্কুল খোলার পর উৎফুল্ল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বৃহষ্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১) বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৪র্থ দিনের পাঠ কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে। এসব বিদ্যাপিঠে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

দিনের শুরুতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে যেতে দেখা গেছে। পথে পথে ছেলেমেয়েরা স্কুলের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ সহপাঠীদের সাথে দল বেঁধে। কেউবা একাকী। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার সময় তাদের চেহারায় ছিল খুশির ঝিলিক। তাদের মাঝে প্রাণচা ল্য দেখা গেছে। অনেকদিন পর বন্ধু-সহপাঠীদের সাথে দেখা হবার আনন্দ। উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো বিদ্যালয়ের প্রধান গেইটে শিক্ষার্থীদের মাস্ক প্রদান, স্প্রে করা, ও শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে কক্ষে প্রবেশ করানো হচ্ছে।এছাড়া১নং ভানুবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পূর্ব ভানুবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষের ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেলো।

স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে চলছে কমলগঞ্জের ১৫২টি প্রাইমারী স্কুল

কৃষ্ণচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্ত কুমার সিংহ ও ১নং ভানুবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনার পরপরই আমরা শিক্ষকরা যৌথভাবে এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়ের বারান্দা,কক্ষ,আসবাবপত্র কক্ষ ধোঁয়া-মোছা, দু’দফা জীবানুনাশক প্রয়োগ, করে নতুন রূপে বিদ্যালয়কে সাজিয়েছি। তাছাড়া মাক্স, হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে।

মঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাহিদ আলী জানান, আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে মাক্স, হ্যান্ডসেনিটাইজার, তাপমাত্রার মেশিন ও ১টা আলাদা আইসোলেসনের জন্য রুম ঠিক করে রেখেছি।পূর্ব ভানুবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে স্কুল খুলেছি। তবে প্রথম দিন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন করা হচ্ছে। সোমবার থেকে পুরোদমে চলছে ক্লাশ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে সময় উপযোগী বলে উল্লেখ করেন একই স্কুলের সহঃ শিক্ষক শিরীন আক্তার। মহামারি পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরছেন শিক্ষকরা। ক্লাসে ফেরার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমিতা, হতাশা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন,২নং ভানুবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাটখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহঃ শিক্ষক নেলী নুসরাত জাহান, কৃষ্ণচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহঃ শিক্ষক এ,এ,টি,এম আনিসুর রহমান মোহন । তারা জানান,এরআগে গোটা স্কুল ক্যাম্পাস, ক্লাস রুম, টয়লেট- সবকিছুই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। যাতায়াতের রাস্তায় দূরত্ব ঠিক রাখতে মার্কিং করা হয়েছে, ক্লাস রুমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পরিচ্ছন্ন ও শিক্ষা উপযোগী পরিবেশে সব স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি ও সকল ধরনের নির্দেশনা মেনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবে।কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সরকারি নির্দেশনামত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে কিনা সে অনুযায়ী আমাদের নজরদারি ও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। শিক্ষকদেরও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।