স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও বাসস্থানহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর!

    0
    569

    আমারসিলেট24ডটকম,২২জানুয়ারীঃ স্বাধীনতার ৪৩ বছর ইতি হলো বাসস্থানহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলীর। আজও প্রশ্ন করেন শুকুর আলী স্বাধীনতাকে “হে মহান স্বাধীনতা, তুমি আমাকে কী দিয়েছ? স্বাধীনতা বলবে আমি আপনাকে কি দেব, আপনি তো আমার স্রষ্টা আমি আপনার সৃষ্টি। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন সারাটা বাংঙালির তরে বিলিন হতে।

    এই বাঙ্গালী জাতী যেন উঁচু শিরে দাড়তে পারে। এই জাতি যেন তার মৌলিক অধিকর আদায় করতে পারে। আর আপনাকে কি দিব? সারাটা দেশ আপনাকে দিলেও কর্তব্য পালনে ঘাটতি বোধ করবো। কিন্তু  আমি প্রশ্ন করি ১৬ কোটি মানুষের বাসস্থান আছে। কেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলীর সরিষা সমতুল্য ভূমি নেই! তিনি যে অবস্থায় আছেন তা যদি উপস্থাপন করা হয় স্বাধীনতা কলঙ্কিত হবে, মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে অপমানিত করা হবে। শুকুর আলী সহ-যোদ্ধা হাজার হাজার শহিদের আত্মাও কষ্ট পাবে, শহিদের আত্মারাও বলবে আমাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা না করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান কর। তাতে মুক্তিযোদ্ধের চেতনা জাগ্রত থাকবে। নতশিরে থাকবে না এই স্বাধীন বাংলার বাঙ্গালী জাতি।

    আজ স্বাধীনতাকে ভোগ করছে পুঁজি বানিয়ে পুঁজিবাদীরা। ২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ইলেক্ট্রিক মিডিয়া ও পত্রিকায় ছবি ছাপিয়ে উচু শিরে দাড়িয়ে লুট করছে দেশের সম্পদ। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর থেকে সম্মান করতে শিখতে পারলামনা আজও।

    তাই আজ  গাইতে হয় পলাশ দা’র  এই কবিতা:

    কেমন আছো হে স্বাধীনতা?

    মরুর উত্তপ্ত বেলাভূমে দাড়িয়ে

    পুঁজিবাদীরা যেখানে করছে উলঙ্গ নৃত্য

    নাবিশ্বাস্য হয়ে উঠছে মিথ্যাছার

    এই তো আছি বেশ।

    কেমন আছো হে স্বাধীনতা?

    জীবিকা যেখানে দুঃস্প্রাপ্য

    মানবাতা যেখানে স্বপ্ন

    যেখানে ভর করে আছে কল্পনাহীন মৌলবাদ

    বর্ণহীন বর্ণমালা চাপা বুকে

    এইতো আছি বেশ।

    কেমন আছো হে স্বাধীনতা?

    বিভিশিখাময় কালো রাত্রীর

    অন্তদেয়ানের পথে থাকিয়ে

    এক রাশ জ্বালা বুকে

    স্বপ্নহীনতার বাঁকে

    এইতো আছি বেশ।

    কেমন আছো হে স্বাধীনতা?

    জ্বালাময় এ পৃথিবীর

    স্বাধীনতা যেখানে মূল্যহীন

    খর্বকার হয়ে আছে

    গনিকার যোনিতলে।
    বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী’র বর্তমান পরিস্থিতি:

    জিবীকার তাগিদে প্রভাতের সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সন্ধ্যার সূর্যাস্থ পর্যন্ত ভেন গাড়ী চালান। তিনি তার পরিবারের আহার যোগান দিতে পারলেও মনের আহার যোগান দিতে পারেন না। তার ভাগ্যটা ভালো যে, কোন কন্যা সন্তান নেই! ২টি ছেলে আছে।স্বাধীনতার এতটা বছর পার করলেন উপার্জন করে নতুন জামা গায়ে পরতে পারেন নি আজ ও।  তার ২ ছেলের ও তেমন জ্ঞান বুদ্ধি নেই। সেই আদি বাংলার মতো।

    বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্পদ বলতেকিছু নেই, আছে শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব ও চরিত্র। বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী স্বাধীনতার পর থেকে বাসস্থানহীন হয়ে এক বাড়ির প্রহরী হয়ে আছেন সিলেট সদর উপজেলার ৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের লালারগাঁও গ্রামে ।প্রহরী  হিসেবে মরহুম আস্তব আলী জিন্দা শাহ এর বাড়িতে  তার অবস্থান ।অত্র এলাকার সর্বস্থরের হৃদয়বান ব্যক্তিদের অন্তরে ওই যোদ্ধার স্থান। আমার মতো অনেক পাগল ছুটে প্রতিদিন তার তরে অবলম্বন করতে সেই ৭১রের ইতিহাস।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী’র মতো সাহসি ব্যক্তি অত্র এলাকায় আর একজন ও নেই। উনি যেমন একাল শান্তিতে বসবাস করার জন্য জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন তেমন পরকালে যাবার প্রথম ঘর “কবর” গর্ত করে সহযোগীতা করেন। উনি এক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট যোদ্ধা। আপনারা বিবেচনা করেন স্বাধীনতা যদি মহান হয় এই স্বাধীনতা যাদের দ্বারা অর্জিত তাদের কী উপাধী দেওয়া যায়। আপনি নিশ্চই বলবেন মহানের শ্রেষ্ট মহানের স্রষ্টা।

    এই যোদ্ধার দেশ রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়ার কাহিনী তার নিজ ভাষায়ঃ

    সর্ব প্রথম মূজাহীদ বাহিনিতে ভর্তি -১৯৫৮ সনে স্থান ছাতক হাইস্কুল মাঠ। ১৯৫১ সনে শ্রীমঙ্গল ট্রেনিং এ-দক্ষতার সহিত পাশ করিয়া আসি। সাথে ছিল খুশিদ আলী, ঠিকানা মালি কান্দি-ছাতক- সুনামগঞ্জ,  আং করিম- ঠিকানা বাজিতপুর ছাতক, সুনামগঞ্জ ১৯৬০ সনে বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি পায় । তখন বয়স ৩৫ বৎসর ১৯৭০ সনে বাড়িতে ছুটি নিয়ে আসি। ১৯৭০ সনে প্রশিক্ষনে গেলাম ০৫ নং সেক্টরে ছেলা হক নগরে ০১ হতে ২৭ বেইজ প্রশিক্ষন দিয়ে তুলে দিলাম। ভারতে এর পর জানতে পারলাম ০৩নং বেংকার মবত পূর মুক্তিবাহীনি ধরে নিয়ে যাচ্ছে পাক বাহীনি।

    তখন ২৮নং বেইাজ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। এদের সাথে আমিও যোগ হয়ে মবতপুর আসি। মবতপুর এসে ২দিন ২রাত ফাইট করে যাই। এ পর যাই ওইন্না মাটি গিয়ে দেখলাম কারগ ভার্তি পাক বাহীনি বাটিয়া যাচ্ছে। তাদের সাথে ফাইট করি তখন। আমার সাথে একজন গুলি বিদ্ধ হয়। নাম রহমান, বাড়ি বখতার পুর, গুলি বিদ্ধ কান নছ ও কোষ সিড়ে যায়। ওকে ২ পাউন্ড রক্ত দিয়েছিলাম। ঐ লোক বর্তমানে লন্ডন।

    এরপর যাত্রা করলাম ডাবর ফেরিঘাট। ওফানে গিয়ে পেলাম একজন রাজাকার। তখন ওকে এরেষ্ট করে নিয়ে আসি। নাম ইমানী, বাড়ী মল্লিকপুর, সমস্ত দিন থাকিয়া যাত্রা করলাম ঝাউয়া বাজার গিয়া। পেলাম একজন রাজাকার। নাম কমরু, বাড়ী আব্দুল্লাচর। এর পর যাত্রা রাখান সেখানে একদিন কাটালম, খের ঘরে। সন্ধ্যায় এর পর গেলাম যাওয়ার পুল ভাঙ্গিয়া চলে গেলাম। খরিদি চর গিয়া দিন কাটাইয়া গেলাম লাকেশ্বর গ্রামের বাজারে।

    সেখানে ফাইট আরম্ব করলাম ভুরকিতে। ওই ফাইটে আমার সাথী ভাই লতিব শহীদ হয়। তাহার বাড়ি বহর গাঁও সুনামগঞ্জ। উক্ত ছিলিংগের ছিটা আমার কপালে বামের চক্কের উপরে আঘাত লাগে। এবং মাতায় ৫টি চিহ্ন আছে। এর পর দেশ স্বধীনতা অর্জন করলাম। ১৯৭২ সনে আমি ব্রেইন ডিফিট হয়ে ২০০৫ সন পর্যন্ত পাগল ছিলাম।

    দীর্ঘ  ৩০ বৎসর পর আল্লাহর কৃপায় সুস্থ হয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করি। ২০১১ সালে ভাতা পাই। আমার বর্তমান অবস্থান ভূমি হীন বাড়ি ঘর নাই। আমার মুক্তি যুদ্দ কম্পানির নামে, পাইনিয়ার কম্পানি সেক্টর নং-০৫, কোং কমান্ডর উজির মিয়া। নাম বীর মজিদ । গ্রাম টেংরা, দোয়ারা, সুনামগঞ্জ, মুস্তাকিম বিল্লা বাড়ি গহর গাঁও। লেপটেনেন মাহবুব আমার সাথী যুদ্দা আব্দুল করিম লক্ষি পুরও খছরু বাড়ি সুনামগঞ্জ বর্তমানে উকিল।

    আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলীর বৃদ্ধ বয়সটা যেন শান্তিতে বসবাস করে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পরে স্বাধীন বাংলার ভূমি ও স্বাধীন বাংলার মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করার সুযোগ করে দেন। কেননা মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। লেখকঃজয়নাল আবেদনী জয়।